Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in Howrah-Hoogly

করোনা-পরীক্ষা না করিয়েই অস্ত্রোপচার, আসছে অভিযোগ

করোনা-পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে জেলায়। রবিবারই জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ১,৫০০ ছাড়িয়েছে।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২০ ০৫:৫১
Share: Save:

অস্ত্রোপচারের আগে করতেই হবে রোগীর করোনা পরীক্ষা। এমনটাই নির্দেশ সরকারের। যদিও হুগলির বহু নার্সিংহোমে সেই নির্দেশ পালন করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। জেলা স্বাস্থ্য দফতর করোনা পরিস্থিতি সামলাতে ব্যস্ত থাকায় নার্সিংহোমগুলির উপরে নজরদারির কাজে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে বলে স্বীকার করছেন স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ। সেই সুযোগে নার্সিংহোমগুলির একাংশ সরকারি নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েও ছাড় পেয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

করোনা-পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে জেলায়। রবিবারই জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ১,৫০০ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের। করোনা-সংক্রমণ রুখতে বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলিকে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর আগেই নির্দেশ দিয়েছিল, অস্ত্রোপচার করার আগে যেন রোগীদের করোনা পরীক্ষা যেন অবশ্যই করা হয়। অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মী এবং রোগীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা ভেবে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। জেলার চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, ‘‘অনেক নার্সিংহোমেই অস্ত্রোপচার হচ্ছে রোগীর করোনা পরীক্ষা না-করিয়েই।’’ তাঁদের আবেদন, নার্সিংহোমগুলি যাতে সরকারি নির্দেশ পালন করে, তা নিশ্চিত করতে নজরদারি বাড়ানো উচিত স্বাস্থ্য দফতরের।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্যঅধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচারের আগে রোগীর করোনার পরীক্ষা করতেই হবে। এটাই নির্দেশ। শুধু চিকিৎসক বা রোগী নন, অস্ত্রোপচারের সঙ্গে যুক্ত সকলের জন্য তা জরুরি। একমাত্র দুর্ঘটনাজনিত কারণে বা জরুরি পরিস্থিতিতে আগে অস্ত্রোপচার করা যাবে। কারণ, সে ক্ষেত্রে পরে রোগীর করোনা পরীক্ষা করার সুযোগ রয়েছে।’’ করোনা পরীক্ষা না করিয়েই অস্ত্রোপচারের যে অভিযোগ জেলার নার্সিংহোমগুলির একাংশের বিরুদ্ধে উঠেছে, সে সম্পর্কে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের প্রতিক্রিয়া, ‘‘নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’’

জেলার চিকিৎসকের একাংশের দাবি, চুঁচুড়া, চন্দননগর, শ্রীরামপুর, কোন্নগর, উত্তরপাড়া এবং ডানকুনির মতো শহরাঞ্চলের নার্সিংহোমগুলিতে চিকিৎসকেরা অনেক ক্ষেত্রেই রোগীর করোনা পরীক্ষার না-করেই অস্ত্রোপচার করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক সময় তাঁদের এই কাজে বাধ্য করছেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ।

চুঁচুড়া শহরের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতি যখন ক্রমশ উদ্বেগজনক হচ্ছে, তখন কোনও কোনও চিকিৎসক সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করছেন। এটা ঠিক নয়।’’ অভিযোগকে ‘গুরুতর’ আখ্যা দিচ্ছেন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একাংশ। উত্তরপাড়া থেকে চন্দননগর বা আরামবাগ— সর্বত্রই এমন ঘটনা ঘটছে বলে খবর। কেন করোনা পরীক্ষায় বিমুখ নার্সিংহোমগুলি?

জেলা স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের ব্যখ্যা: অস্ত্রোপচার করাতে আসা রোগীর করোনা ধরা পড়লে অন্য রোগীরা নার্সিংহোম ছাড়বেন। এমনটা হতে থাকলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। এমনিতেই, এখন খুব প্রয়োজন না-হলে নার্সিংহোম বা চিকিৎসকদের চেম্বারে আসছেন না রোগীরা। ফলে ব্যবসায় টান পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে কোনও নার্সিংহোমে করোনা সংক্রমিত রোগী এসেছেন বলে খবর রটে গেলে ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। চুঁচুড়া শহরের এক নামকরা নার্সিংহোমের মালিকের দাবি: ‘‘নার্সিংহোমে প্রসূতি ছাড়া অন্য রোগীরা আসছেন না। অস্ত্রোপচারও কমে গিয়েছে।’’

নার্সিংহোমের মালিকেরা অবশ্য বিধিভঙ্গের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। চুঁচুড়া শহরের এক নার্সিংহোমের মালিকের বক্তব্য, ‘‘প্রাণের মায়া সকলের আছে। অন্য জায়গায় কী হচ্ছে জানি না। আমরা অস্ত্রোপচারের আগে রোগীর করোনা পরীক্ষা করিয়ে নিচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in Howrah-Hoogly Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE