Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বোরোয় দুশ্চিন্তার ভাঁজ 

ডিভিসি-রও জল মিলবে না বলে জেনে গিয়েছেন চাষিরা। ফলে, বোরো চাষ হবে কী ভাবে? দুশ্চিন্তায় রয়েছেন দুই জেলার ধান চাষিরাই।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও নুরুল আবসার
চুঁচুড়া ও উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:১২
Share: Save:

আমনের পরে আলু, এ বার বোরো।

ফের জল-সঙ্কটের মুখে দুই জেলার ধান চাষ। ঠান্ডায় খাল-বিল শুকিয়ে গিয়েছে। ডিভিসি-রও জল মিলবে না বলে জেনে গিয়েছেন চাষিরা। ফলে, বোরো চাষ হবে কী ভাবে? দুশ্চিন্তায় রয়েছেন দুই জেলার ধান চাষিরাই।

এ রাজ্যের চাষিরা বৃষ্টির জল বাদে চাষের জন্য ডিভিসি-র ছাড়া জলের উপরেই নির্ভরশীল। কিন্তু গত বর্ষার মরসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়নি। ফলে, আমন চাষে অনেক চাষি জল পাননি। চাষজমিতে যেখানে মিনি ও ডিপ টিউবওয়েল নেই, সেই সব এলাকার চাষিরা বিপাকে পড়েন। চাষিরা ভেবে ছিলেন, আমনের ক্ষতিটা বোরো চাষে পুষিয়ে নেবেন। কিন্তু বিধি বাম।

রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আশিস চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, ‘‘ভাল বৃষ্টি না-হওয়ায় রাজ্যের জলাধারগুলিতে এমনিতেই জল নেই। প্রকৃতির উপর তো কারও হাত নেই। তবে, আমরা প্রশাসনিক ভাবে অতিরিক্ত মিনি পাম্প বসিয়ে চাষিদের জল দেওয়ার চেষ্টা করছি। জলের বিষয়ে চাষিদের সতর্ক করা হয়েছে।’’

রাজ্যের অন্যতম ধান উৎপাদক জেলা হুগলি। ডিভিসি-র ছাড়া জলে এই জেলায় গোঘাট, আরামবাগ, পোলবা, হরিপাল, ধনেখালি, চণ্ডীতলা-সহ বেশ কিছু এলাকায় বোরো চাষ হয়। মূলত বর্ধমানের বেগুয়া হানা থেকে দামোদর এবং চাষের জন্য নির্দিষ্ট ডিভিসি-র খাল হয়ে হুগলিতে চাষের জল ঢোকে। আরামবাগ ও হুগলির অন্তত ৬টি ব্লক হয়ে সেই জল হাওড়ায় যায়। কিন্তু এখন জলের ভাঁড়ার শূন্য। দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর-সহ অন্য নদীতেও জল কমে গিয়েছে। এ দিকে, বোরো চাষের সময়ও হয়ে এসেছে। খেত থেকে আলু উঠে যাওয়ার পরে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে চাষিরা বোরো চাষে নামেন। শীতে কাঠ হয়ে গিয়েছে জলাজমিও। ফলে, যে সব চাষির জমি নদী লাগোয়া নিচু এলাকায়, তাঁরাও চাষের জল পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। ধনেখালির কানানদী এলাকার চাষি কাশীনাথ পাত্র বলেন, ‘‘আলুর জন্য জল পাইনি। বোরো চাষেও জল পাওয়া যাবে না বলে আগাম জানিয়েছে কৃষি দফতর। তা হলে আমরা করব কী?’’ জেলা কৃষি দফতরের এক আধিকারিক অবশ্য বলেন, ‘‘পরিস্থিতি নিয়ে চাষিদের বিভিন্ন সেমিনারে আমরা সতর্ক করেছি। কিন্তু কথা না-শুনলে চাষিদের সমস্যা বাড়বে।’’ আরামবাগের হরিণখোলা এলাকার চাষি সুদীপ ঘোষও বলেন, ‘‘মুণ্ডেশ্বরী নদীতে সামান্য জল তির তির করে বইছে। কৃষি-নির্ভর এলাকায় চাষে জল না-পেলে চলে?’’

ডিভিসি-র জলে বোরো চাষ হয় মূলত হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর, আমতা ১ এবং ২ ব্লকে। ডিভিসি যে জল ছাড়ে দামোদর ও মুণ্ডেশ্বরীর শাখা খালগুলির মাধ্যমে তা তিন ব্লকের গ্রামে আসে। সেই জলেই চাষ হয়। খালগুলি এখন শুকনো। জল মিলবে না জেনে বোরোতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন খাল ধারের জমিগুলির চাষিরা। আবার মূল নদীর জল তোলার জন্য রিভারলিফটিং পাম্প থাকলেও তাতে কতটা কাজ হবে, তা নিয়ে সংশয়েও আছেন তাঁরা। দামোদরের দু’টি শাখা খাল মান্দারিয়া এবং ডি ১-এর জলে আমতা-১ ব্ল‌কের পাঁচটি পঞ্চায়েতে বোরো চাষ হয়। কোনও খালেই এখন জল নেই। পাঁচটি পঞ্চায়েতের মধ্যে রসপুরের উপপ্রধান জয়ন্ত পোল্যে বলেন, ‘‘কোটালের যতটুকু জল খালে ঢুকেছিল। তা আরএলআই পাম্প দিয়ে তুলে কোনওমতে চাষিরা বীজতলা তৈরি করেছেন। এরপরে চাষ কী ভাবে হবে বুঝতে পারছি না।’’

আমতা-২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষ হয় মুণ্ডেশ্বরীর জলে। কিন্তু এখন মুণ্ডেশ্বরীও শুকনো। ওই ব্লকের ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান পঞ্চায়েতের সোলবাগা গ্রামে মুণ্ডেশ্বরীর ধারে ৭টি আরএলআই পাম্প আছে। অন্তত দু’হাজার বিঘা জমিতে বোরো চাষ হয় ওই সব পাম্পের মাধ্যমে। কিন্তু এখন পাম্পগুলি তেমন কাজ করছে না ব‌লে চাষিরা জানান। রাজীব দলুই নামে এক এক চাষি বলেন, ‘‘৬ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করি। পুকুরের জলে বীজতলা তৈরি করেছি। কোটালের জল নদীতে যতটুকু এসেছিল তাতে কোনওমতে জমি ভেজানোর কাজ করেছি। কিন্তু ডিভিসি-র জল যদি না-আসে, এই সব চারা নষ্ট হয়ে যাবে।’’

আমতার বিধায়ক অসিত মিত্র বলেন, ‘‘সেচমন্ত্রী আমাকে জানিয়েছেন, পাম্পগুলির সংস্কার করে নদীতে যতটুকু জল আছে তার সদ্ব্যবহার করতে। কিন্তু আরএলআই পাম্প এবং ডিপ টিউবওয়েলগুলির অনেকগুলিই সংস্কার হয়নি।’’ ওই সংস্কারের দাবিতে আজ, সোমবার কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জয়পুরে ব্লক অফিসের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। আমতা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকান্ত পাল অবশ্য বলেন, ‘‘আরএলআই পাম্প এবং ডিপ ডিউবওয়েলগুলির আমূল সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হয়েছে।’’

তাতে য়ে সমস্যা পুরোপুরি মিটবে না তা মানছে কৃষি দফতর। জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ রমেশ পাল বলেন, ‘‘তিনটি ব্লকের যে সব এ‌লাকা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সেখানকার চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তাঁরা যেন বোরো চাষের বিকল্প ফসল চাষ করেন।’’

ইতিমধ্যেই বহু চাষি বিকল্প চাষে মন দিয়েছেন। যেমন উদয়নারায়ণপুরের চাষিরা আলু তোলার পরে বোরো চাষ করেন। তাঁদের অনেকেই জানিয়েছেন, এবারে আর বোরো চাষ করবেন না, বদলে তিল এবং বাদাম চাষ করবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rice Farmer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE