Advertisement
০৮ মে ২০২৪
নজরদারির অভাবকেই দুষছে পুলিশ

আগুনে ছাই ধূলাগড়ের কারখানা

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বুধবার রাত ২টো নাগাদ আগুন লাগে প্লাস্টিকের আসবাবপত্র তৈরির কারখানায়। ওই সময়ে কারখানায় ছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। তাঁরাই পুলিশ ও দমকলকে খবর দেন। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাঁকরাইল শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৭ ০২:০১
Share: Save:

এক বছর আগে আগুন লেগে ধূলাগড়ের শিল্পতালুকের একটি কারখানাতে মারা গিয়েছিলেন পাঁচ জন। ওই ঘটনার পরে ওই শিল্পতালুকের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার পরেও যে কাজের কাজ কিছুই হয়নি, বুধবার রাতে ওই শিল্পতালুকে ফের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। এ বারের অগ্নিকাণ্ডে একটি প্লাস্টিকের কারখানা ভস্মীভূত হলেও কেউ হতাহত হননি। দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১২টি ইঞ্জিনের চেষ্টায় বৃহস্পতিবার দুপুরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বুধবার রাত ২টো নাগাদ আগুন লাগে প্লাস্টিকের আসবাবপত্র তৈরির কারখানায়। ওই সময়ে কারখানায় ছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। তাঁরাই পুলিশ ও দমকলকে খবর দেন। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। দমকলের আধিকারিকেরা জানান, ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ফরেন্সিক পরীক্ষার পরে আগুন লাগার কারণ জানা যাবে।

কারখানায় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যথাযথ ছিল? তার সদুত্তর মেলেনি। তবে দমকলকর্মীরা জানান, মুম্বই রোড থেকে প্রায় পাঁচশো মিটার দূরে প্লাস্টিক কারখানাটির অবস্থান। কারখানা পর্যন্ত দমকলের গাড়ি গেলেও কাছাকাছি কোনও জলাশয় নেই। ফলে জল পেতে সমস্যা হয়েছে। যতটুকু জল ট্যাঙ্কে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তা দিয়েই আগুন নেভানোর কাজ করতে হয়েছে।

পুড়ে গিয়েছে কারখানা।

ধূলাগড়ে বছর কুড়ি আগে বেসরকারি উদ্যোগে শিল্পতালুক গড়ে উঠেছে। এই শিল্পতালুকেই রয়েছে প্লাস্টিক কারখানাটি। গত বছর জুন মাসে বয়লার ফেটে যে অ্যালুমিনিয়ামের কারখানায় আগুন লেগেছিল সেটিও এই শিল্পতালুকের মধ্যেই। ওই দুঘর্টনায় পাঁচজন কর্মী মারা যান।

কেন বার বার আগুন লাগছে এই শিল্পতালুকে?

ডোমজুড় ও সাঁকরাইলে মুম্বই রোডের দু’দিকে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে একাধিক শিল্পতালুক। আগুন লাগার ঘটনা মূলত ঘটছে বেসরকারি শিল্পতালুকগুলিতেই। গত পাঁচ বছরে বেসরকারি এই শিল্পতালুকগুলিতে বেশ কয়েকটি আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। কারখানাগুলিতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যথাযথ রয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বছর দুই আগে হাওড়া শহরে একটি তুলোর কারখানায় আগুন লাগে। ওই ঘটনার পরেই মুখ্যমন্ত্রী দমকল বিভাগকে নির্দেশ দেন, জেলার সব কারখানাগুলিতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ঠিকঠাক আছে কি না তা খতিয়ে দেখার। যাদের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ঠিক থাকবে না, তাদের লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়ারও কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

তবে বুধবারের ঘটনার পরে দমকলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বেসরকারি শিল্পতালুক সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য কারখানায় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা কেমন আছে, তা খতিয়ে দেখতে যায়নি দমকল। অথচ অ্যালুমিনিয়াম কারখানার অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় যে ত্রুটি ছিল, গত বছর পুলিশি তদন্তে প্রমাণ মিলেছে। শুধু তাই নয়, তদন্তে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ এবং হাওড়া জেলা ফ্যাক্টরি ইনস্পেক্টর দফতরের সাহায্যও নেওয়া হয়েছিল। তাদের দেওয়া প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছিল, ওই অ্যালুমিনিয়াম কারখানায় বয়লার বসানোর আগে যে ধরনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার প্রয়োজন ছিল, তা করা হয়নি।

জেলা পুলিশ কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, যত্রতত্র কারখানা গড়ে ওঠায় বেসরকারি শিল্পতালুকগুলি জতুগৃহে পরিণত হয়েছে। সেগুলিতে দমকল বিভাগের নিয়মিত নজরদারির প্রয়োজন আছে আছে বলেও মনে করছেন তাঁরা। কী বলছে দমকল? দমকলের হাওড়া ডিভিশনের কর্তারা জানিয়েছেন, তাঁরা আগুন নেভানোর কাজ করেন। কারখানা পরিদর্শনের জন্য তাঁদের কাছে বিশেষ কোনও নির্দেশ আসেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Factory সাঁকরাইল
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE