Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ডিভিসি-র ছাড়া জলে প্লাবনের আশঙ্কা

নিম্নচাপের বৃষ্টি থেকে আপাতত রেহাই মিলেছে। কিন্তু ডিভিসি-র ছাড়া জলে প্লাবনের আশঙ্কায় ভুগতে শুরু করেছেন হাওড়া ও হুগলি— দুই জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা। কারণ, শনিবার থেকে জল ছাড়া শুরু করেছে ডিভিসি।

দামোদরের বাঁধ ছাপিয়ে জল ঢুকল উদয়নারায়ণপুরের কুর্চি-শিবপুর পঞ্চায়েত এলাকায়। ছবি: সুব্রত জানা।

দামোদরের বাঁধ ছাপিয়ে জল ঢুকল উদয়নারায়ণপুরের কুর্চি-শিবপুর পঞ্চায়েত এলাকায়। ছবি: সুব্রত জানা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৬ ০০:১৫
Share: Save:

নিম্নচাপের বৃষ্টি থেকে আপাতত রেহাই মিলেছে। কিন্তু ডিভিসি-র ছাড়া জলে প্লাবনের আশঙ্কায় ভুগতে শুরু করেছেন হাওড়া ও হুগলি— দুই জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা। কারণ, শনিবার থেকে জল ছাড়া শুরু করেছে ডিভিসি। আজ, মঙ্গলবার সেই জল হুগলির আরামবাগ মহকুমা এবং হাওড়ার আমতা, উদয়নারায়ণপুরের নদীগুলিতে পৌঁছে যাওয়ার কথা। ফলে, পরিস্থিতির কতটা অবনতি হবে, এই দুশ্চিন্তায় ঘুম উবেছে গ্রামবাসীদের। আর এ নিয়ে সেচ দফতরের সঙ্গে ডিভিসি কর্তৃপক্ষের চাপান-উতোরও শুরু হয়েছে।

সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বারবার ডিভিসির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলেন তা একেবারেই ঠিক। এ বারেও বারবার আবেদন-অনুরোধ করা সত্ত্বেও ডিভিসি কোনও কথা না শুনে অতিরিক্ত জল ছেড়েছে। যার ফল এখন ভুগতে হচ্ছে। এখন দুই জেলার বাসিন্দাদের কী ভাবে নিরাপদে রাখা যায় সেটাই এখন আমাদের লক্ষ্য।’’

যদিও সোমবার নবান্নে রাজ্য সরকারের সঙ্গে বৈঠকে ডিভিসি-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া জল ছাড়া হয়নি। তবে, রাজ্য সরকারের তরফে কম জল ছাড়ার জন্য যে চিঠি দেওয়া হয়েছিল তা কেন্দ্রীয় জল কমিশনকে জানিয়ে ছিল ডিভিসি। কেননা, ডিভিসি-র জল ছাড়ার বিষয়টি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করে কেন্দ্রীয় জল কমিশন। সেখান থেকে এ দিন নির্দেশ আসার পর থেকে কম জল ছাড়া হয়েছে বলেও দাবি করেছেন ডিভিসি-র কর্তারা। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হবে না বলেই দাবি রাজ্যের সেচ আধিকারিকদের।

ডিভিসি বেশি পরিমাণ জল ছাড়লে হুগলির আরামবাগ মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা এবং হাওড়ার আমতা-২ এবং উদয়নারায়ণপুর ব্লক প্লাবিত হয়। রাজ্য সেচ দফতর সূত্রের খবর, গত ২১ অগস্ট সকালে ডিভিসি ৫৪ হাজার কিউসেক জল ছাড়ে। তাতে বিপদের সম্ভাবনা বুঝেই তাদের ৪৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়ার অনুরোধ করা হয়। এ বিষয়ে ডিভিসির কর্তাদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় জল কমিশনেও বারবার চিঠি ফ্যাক্স, ই-মেল পাঠানো হয়। কিন্তু ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হলে জল ধরে রাখার সমস্যা হবে এ কথা জানিয়ে ডিভিসি কম হারে জল ছাড়েনি বলে অভিযোগ। শনিবার বিকেলেই ৬৫ হাজার এবং সোমবার সকালে ৮০ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হয় বলে দাবি সেচ দফতরের।

এমনিতেই অতিবৃষ্টির ফলে হাওড়া-হুগলির স্থানীয় খাল-বিলগুলি জলে ভর্তি রয়েছে। তার উপরে দামোদর, রূপনারায়ণ, মুণ্ডেশ্বরীর মতো নদীগুলি এখন টইটম্বুর। ভরা কোটাল চলায় লোকালয়ের জমা জল নামতে পারেনি। সোমবার বিকেলেই উদয়নারায়ণপুরে বকপোতার কাছে হরিহরপুরে দামোদরের বাঁধ ছাপিয়ে জল ঢুকে পড়ে। এখানে বালির বস্তা দিয়ে বাঁধ উঁচু করা হয়। কিন্তু সেই বস্তা ছাপিয়ে জল ঢুকতে থাকে কুর্চি-শিবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকায়। বন্যার আশঙ্কায় দুপুর থেকেই প্রচারে নামে ব্লক প্রশাসন। নিচু এলাকার বাসিন্দারা ফ্লাড শেল্টারে উঠে আসেন।

সেচ দফতর অবশ্য হাওড়ার দু’টি ব্লককে বাঁচাতে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। আমতা-২ ব্লকের থলিয়া থেকে বাগনানের বাকসি পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার নতুন খাল কেটে দামোদরকে রূপনারায়ণের সঙ্গে যোগ করা হয়েছে। এই খালের মাধ্যেমে ডিভিসি-র ছাড়া জলের মধ্যে অন্তত ৩০ হাজার কিউসেক জল রূপনারায়ণে গিয়ে পড়ে। এ ছাড়া গত দু’তিন বছরের মধ্যে মজা দামোদর সংস্কার, রামপুর খালের সংস্কার প্রভৃতি কাজ করেছে সেচ দফতর। এর ফলেও ডিভিসি-র ছাড়া বাড়তি জল এই সব খালের মাধ্যমে বেরিয়ে যাচ্ছে।

তবুও সাবধানের মার রাখছে না প্রশাসন। পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার, শিশুখাদ্য, পানীয় জলের পাউচ, ত্রিপল, নৌকা মজুত করা হয়েছে। ডাকা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে। সোমবার আমতার কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র আমতা-২ ব্লকের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। বিকেলে উদয়নারায়ণপুরে আসেন সেচমন্ত্রী।

অন্যদিকে, খালি বৃষ্টির জেরে ইতিমধ্যেই আরামবাগের খানাকুল-২ ব্লকের ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মাড়োখানা, জগৎপুর, পানশিউলি, চিংরার মতো বেশ কিছু এলাকা বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। একই অবস্থা খানাকুল-১ নম্বর ব্লক এলাকার কিশোরপুর, ঘোষপুরের মতো এলাকাগুলির। এ দিন বিকেলেই দামোদরের জল বিপদসীমা (১২.৮৯ মিটার) টপকে চরম বিপদসীমা (১৩.৫০ মিটার) ছোঁয়ার মুখে। প্রাথমিক বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে মুন্ডেশ্বরী এবং দ্বারকেশ্বরের জলও। ফলে, জেলা প্রশাসনের কপালে চিন্তার ভাঁজ বেড়েছে।

এ দিন দুপুরে পুরশুড়া ব্লক অফিসে সম্ভাব্য প্লাবন মোকাবিলা নিয়ে জরুরি প্রশাসনিক বৈঠক করলেন জেলাশাসক সঞ্জয় বনসল। বৈঠকে ৬টি ব্লক এবং মহকুমা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন কৃষি বিপণনমন্ত্রী তপন দাশগুপ্তও। জেলাশাসক জানান, সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলার জন্য সমস্ত স্তরে সজাগ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভাঙনপ্রবণ এলাকাগুলিতে প্রয়োজনে মানুষকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে সরানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে পুরশুড়া, খানাকুল, চাঁপাডাঙ্গা এবং জাঙ্গিপাড়ায় লাল সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন।

বিকেলে জাঙ্গিপাড়ার রসিদপুরের দামোদর লাগোয়া বকপোতা এলাকায় যান সেচমন্ত্রী। নিচু এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে আনার পরামর্শ দেন মন্ত্রী। পাশাপাশি, বাঁধের কমজোরি অংশে বালির বস্তা দিতে এবং শুকনো খাবার বেশি পরিমাণ মজুত রাখারও নির্দেশ দেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

DVC discharge wate Flood risk Howrah Hooghly
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE