প্রস্তুতি। চলছে আলোর সাজ। নিজস্ব চিত্র
চাঁদের পিঠে অবতরণের জন্য চন্দ্রযান পাঠিয়েছিল ইসরো। চন্দননগর থেকে চন্দ্রযান যাচ্ছে পুজোর কলকাতায়।
চাঁদের মাটি, ভূ-প্রকৃতি, খনিজ ইত্যাদি নিয়ে গবেষণার জন্য ইসরোর ওই উদ্যোগ। সেই চন্দ্রযানের অ্যান্টেনা তৈরি করেন হুগলির গুড়াপের চন্দ্রকান্ত কুমার। চন্দননগরের চন্দ্রযান অবশ্য শুধু দেখার। আলোয় ভরা। তৈরি করেছেন আলোক-শিল্পী বাবু পাল। শহরের পঞ্চাননতলায় নিজের কারখানায় এখন সেই চন্দ্রযানের খুঁটিনাটি কাজে ব্যস্ত বাবু ও তাঁর কারিগররা। আর কিছুদিন পরেই আলোর চন্দ্রযান পাড়ি দেবে শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবে। আলোর কারিকুরিতে দেখা যাবে রকেট উঠছে-নামছে। সৌরজগতে ঝলমল করছে নক্ষত্র। গ্রহ ঘুরছে কক্ষপথে। দুই মহাকাশচারী শূন্যে ভাসছেন। এক জন পা রেখেছেন চাঁদের মাটিতে।
দুর্গাপুজোর আর এক মাসও বাকি নেই। পুজোর কলকাতাকে আলোয় সাজাতে চন্দননগরের আলোক-শিল্পীদের তৎপরতা তুঙ্গে। শুধু চন্দ্রযান-ই নয়, আলোর কারিকুরিতে কোথাও ফুটে উঠছে জীবনের সমস্যা, কোথাও সরকারি প্রকল্পের বার্তা।
এক সময়ে চন্দননগরের আলোকশিল্পীদের হাতে তৈরি টুনি বাল্বের নরম আলোয় মুগ্ধ হতেন মানুষ। আলোর বিবর্তনে সেই বাল্বের জায়গা নিয়েছে এলইডি। কিন্তু এলইডি-র আলো অনেক বেশি তীক্ষ্ণ। তাই, টুনি বাল্বের নমনীয়তা ফিরিয়ে আনতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন আলোক-শিল্পীরা। শহরের ডুপ্লেক্স পট্টির দিঘির ধার এলাকার আলোকশিল্পী অসীম দে ভরসা রাখছেন ‘পিক্সেল ল্যাম্প’-এর আলোর ছটায়। তিনি জানান, এর তীব্রতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ফলে, এর দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকলেও চোখ ধাঁধিয়ে যায় না। এ বার তাঁর আলোকসজ্জায় দেখা যাবে, কল দিয়ে অবিরাম জল পড়ে যাচ্ছে। জল অপচয় রুখতে বাচ্চা ছেলে কল বন্ধ করে দিচ্ছে। এ ছাড়াও ‘বিশ্ব বাংলা’, ‘যুবশ্রী’, ‘কন্যাশ্রী’ থেকে মিড-ডে মিলও থাকবে। বরাহনগর, এন্টালি, মকুন্দপুর, হাওড়ার বিভিন্ন মণ্ডপে এই সব আলো দেখা যাবে।
পিক্সেল আলোর মায়াবি রং ছড়াবে সোমনাথ শেঠের তৈরি আলোকসজ্জাও। তিনি জানান, অআকখ থেকে পাখির ওড়াউড়ি, ঝরনা— সবই দেখা যাবে। বিভিন্ন রং বিচ্ছুরিত হবে আলোর মালা থেকে। আলোক-শিল্পী পিন্টু মুখোপাধ্যায়ের দাবি, তাঁর তৈরি আলোয় থাকবে ‘থ্রি-ডি এফেক্ট’। তিনি জানান, দুর্গার বোধন থেকে পুজো দেখা যাবে আলোকসজ্জার মাধ্যমে। সামনে তো বটেই, দু’দিক থেকেও তা দেখা যাবে। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ, রূপকথার দেশের কাহিনি। গুয়াহাটিতেও পাড়ি দেবে পিন্টুর আলো। সেখানে থাকবে আইফেল টাওয়ার, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর গোল করার মুহূর্ত।
এলইডির তীক্ষ্ণতাকে আড়াল করে টুনি বাল্বের নরম আলোর অনুভূতি আনতে বাবু টুনির মাথায় টুপি আটকাচ্ছেন। আলোক-শিল্পীর ভাষায় ‘ক্যাপ টুনি’। বাবুর কথায়, ‘‘ক্যাপ টুনি থাকায় এলইডির বাড়তি ঔজ্জ্বল্য সরাসরি চোখে পড়বে না। বাল্বের মাথায় লাগানো টুপিতে তা চুঁইয়ে পড়বে। চোখের পক্ষে আরামদায়ক।’’
একই পুজোয় আলোকসজ্জায় দেখা যাবে ভারতীয় স্থল, বায়ু ও নৌ-সেনার আক্রমণ। আকাশ থেকে বোমা, যুদ্ধজাহাজ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া। ট্যাঙ্কার থেকে গুলিগোলা ছোড়ার দৃশ্যও ফুটে উঠবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy