Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কেবল সন্দেহের বশেই পর পর গণপিটুনি হাওড়ায়

সম্প্রতি মধ্য হাওড়ার শ্রীবাস দত্ত লেন ও সাঁতরাগাছির দক্ষিণ বাকসাড়া এলাকাতেও গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছিল। এই নিয়ে গত দেড় মাসে হাওড়া শহরে ছয়টি ঘটনা ঘটল।

হাওড়া ময়দান এলাকায় চোর সন্দেহে গণপিটুনি মহম্মদ আফসার নামে এক যুবককে।

হাওড়া ময়দান এলাকায় চোর সন্দেহে গণপিটুনি মহম্মদ আফসার নামে এক যুবককে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:০৪
Share: Save:

চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে চারটি গণপিটুনির ঘটনা ঘটল হাওড়া শহরে।

সোমবার রাতেই টিকিয়াপাড়ায় এক যুবককে চোর সন্দেহে পিটিয়েছিলেন স্থানীয় লোকজন। ফের মঙ্গলবার বেলা গড়াতে না গড়াতেই একই রকমের তিনটি ঘটনা ঘটল হাওড়া শহরের দুই প্রান্তে। এ দিন হাওড়া ময়দান ও বেলুড়ের ভোটবাগানে ওই ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি মধ্য হাওড়ার শ্রীবাস দত্ত লেন ও সাঁতরাগাছির দক্ষিণ বাকসাড়া এলাকাতেও গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছিল। এই নিয়ে গত দেড় মাসে হাওড়া শহরে ছয়টি ঘটনা ঘটল।

রাজ্যের কয়েকটি জেলা, এমনকি খাস কলকাতা শহরেও চোর সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। রাজ্য প্রশাসনের তরফে বারবার সতর্ক করে বলা হচ্ছে গুজবে কান না দিতে। কিছু ঘটলে পুলিশকে খবর দিতে। কিন্তু যাঁরা গুজব ছড়াচ্ছেন বা গণপিটুনিতে অংশ নিচ্ছেন— পুলিশ কেন তাঁদের গ্রেফতার করতে পারছে না, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। একমাত্র সাঁতরাগাছিতে টোটোচালককে চোখে লঙ্কার গুঁড়ো দিয়ে পেটানোর ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতার করেছিল হাওড়া পুলিশ। বাকি সব ক্ষেত্রেই সাফল্যের হার শূন্য।

বেলুড়ে উত্তেজিত জনতার হাত থেকে সতীশ কুমারকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।

এমনকি, চোর সন্দেহে হাওড়ায় এক সিভিক ভলান্টিয়ারের মার খাওয়ার ঘটনাতেও হাওড়া পুলিশ এ পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ফলে এ হেন সময়ে এক জন মানুষের নিরাপত্তা কোথায়, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, শুধুই লিফলেট বিলি, পথসভা, মাইক-প্রচারের মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ না রেখে পুলিশের উচিত ওই সব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া। চোর সন্দেহে কাউকে মারধর করে এলাকায় অশান্তি পাকানো নিয়ে গত সোমবারও নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পুলিশকে আরও কড়া হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তাতে যে কাজের কাজ বিশেষ হয়নি, মঙ্গলবার হাওড়া ময়দান ও বেলুড়ের ঘটনাই তার প্রমাণ।

তবে সব ক’টি ঘটনাতেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। ঘটনাগুলির ভিডিয়ো ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে হাওড়া ময়দানের গোপাল মুখার্জি লেনে শীতলা পুজোর অনুষ্ঠান চলার সময় প্যান্ডেলের পিছনে এক অপরিচিত যুবককে দেখে তাঁকে ‘চোর’ সন্দেহে তাড়া করেন এক মহিলা। মহিলার চিৎকারে যুবকটি দৌড়ে গলি থেকে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ততক্ষণে ঘটনাস্থলে অন্যান্যরা জুটে যান। সবাই মিলে ওই যুবককে ধরে গাছের সঙ্গে বেঁধে এলোপাথাড়ি মারধর করেন। মারের চোটে যুবক অচৈতন্য হয়ে পড়ে। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোতে থাকে। প্রভাতী পান্ডে নামে ওই মহিলার অভিযোগ, তাঁর বাড়ি থেকে গ্যাস সিলিন্ডার কেউ বার করে বাইরে এনে রেখেছিল। তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘ওঁকে চুরি করতে দেখিনি। তবে গলির মুখে ঘুরতে দেখেই চোর বলে সন্দেহ হয়।’’ অভিযোগ, একটি রাজনৈতিক দলের কয়েক জন কর্মী সেখানে এলেও মারধরের মাত্রা বাড়ে। পরে টিকিয়াপাড়ার বাসিন্দা মহম্মদ আফসার নামে ওই যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় হাওড়া থানা থেকে আসা বিশাল পুলিশবাহিনী।

দুপুর ২টো নাগাদ বেলুড়ের ভোটবাগানে শিশুচোর সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হন ওড়িশার বাসিন্দা বছর চব্বিশের সতীশ কুমার। অভিযোগ, গুজব ছড়াতেই পাড়ার মানুষ জড়ো হয়ে সতীশকে এক জায়গায় বসিয়ে কিল-চড়-ঘুসি মারা শুরু করেন। সকলে দাঁড়িয়ে দেখলেও বাধা দেননি। অবশ্য প্রাক্তন কাউন্সিলর রিয়াজ আহমেদ প্রথমে ওই যুবককে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। কিন্তু না পেরে শেষে তিনি পুলিশে খবর দেন। সেই সময় ভোটবাগান সংলগ্ন এলাকা পরিদর্শনে বেরিয়েছিলেন বেলুড় থানার নতুন ওসি সুদীপ দত্ত। খবর পেয়ে বিশাল বাহিনী নিয়ে তিনি সেখানে হাজির হন। পুলিশ এক প্রকার ব্যারিকেড করেই সতীশকে উদ্ধার করে। সতীশ ভিক্ষা করছিলেন বলেও কেউ কেউ জানান।

আবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ ভোটবাগানেরই জয়বিবি রোডে এক ভবঘুরেকে বাচ্চা চোর সন্দেহে গণপিটুনি দেওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে জয়সওয়াল হাসপাতালে ভর্তি করে।

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার ও নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lynching Police Crime Mob Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE