পাড়ায় ঢুকলে ঠ্যাং খোঁড়া করে দেবে বলেছিল পাড়ার দাদারা। খানাকুলে একই হুমকি দিচ্ছে দলের ‘যুব’ ভাইয়েরা। রঞ্জনার প্রেমিককে নয়, তৃণমূলের নির্বাচিত প্রধান, উপ-প্রধানকে। ভয়ে পঞ্চায়েত মুখো হচ্ছেন না তাঁরা। বুধবার বন্ধের দুপুরে কোনও রকমে অফিস ছুঁয়েই পাততাড়ি গোটালেন প্রধান, উপপ্রধান। খানাকুল-২ ব্লকের ধান্যগোড়ি পঞ্চায়েতের ঘটনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ধান্যগোড়ি পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের পর থেকেই এই পরিস্থিতি চলছে। পঞ্চায়েতের উপপ্রধান দিলীপ সানকি গতবার প্রধান ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, “দলেরই যুব সংগঠন গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে এলাকায় তাণ্ডব চালাচ্ছে। বোর্ড গঠনের পর প্রধান, উপ-প্রধান-সহ আমরা ৯ জন সদস্য পঞ্চায়েতে ঢুকতে পারছি না। ঢুকলে পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’’ বিষয়টি নিয়ে ব্লক প্রশাসন এবং দলের উপরতলার নেতাদের কাছে অভিযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন দিলীপবাবু। তাঁর দাবি, এ দিন পুলিশি নিরাপত্তায় তাঁরা পঞ্চায়েতে ঢুকেছিলেন। প্রধান বীণাপাণি ভৌমিকও বলেন, ‘‘এমন ভয়ে ভয়ে কাজই বা কী করে করব? আমরা নিরাপত্তা দাবি করছি।’’
ধান্যগড়ি পঞ্চায়েতে মোট ১৫ জন সদস্য। প্রধানের পদটি এ বার তপসিলি মহিলা সংরক্ষিত হয়েছে। নির্বাচনের আগেই দলের মূল এবং যুব সংগঠনের দ্বন্দ্ব ছিল। কোন্দল এড়াতে বিধায়ক ইকবাল আহমেদ আসন ভাগ করে দেন। মূল সংগঠনকে ৯টি এবং যুব সংগঠনকে ৬টি আসনে লড়তে দেওয়া হয়। বিরোধীশূন্য হয় পঞ্চায়েত। সিদ্ধান্ত হয়েছিল মূল সংগঠনের পক্ষে প্রধান হবেন। এবং যুব সংগঠনের পক্ষে উপপ্রধান হবেন।
কিন্তু দু’টি পদই মূল সংগঠন দখল করে। দলের যুব অঞ্চল সভাপতি জয়নাল আবেদিনের অভিযোগ, “আগের প্রধান দিলীপ সানকি দলের নির্দেশ তোয়াক্কা না করে তাঁদের সদস্য বেশি থাকার সুবাদে উপপ্রধানের পদটি নিয়েছেন। তার উপর বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া শেষ হতেই দুপুর ১২টা নাগাদ ওদের লোকরা আমাদের রড, লাঠি, নিয়ে মারধর শুরু করে। এ সব কিছুর ফয়সালা না হলে আমরা পঞ্চায়েতে ঢুকতে দেব না ওঁদের।’’ জয়নাল প্রকাশ্যেই বলেন, ‘‘এ দিন আমরা সকলে সভাধিপতি নির্বাচনের জন্য জেলা সদরে চলে এসেছি। সেই সুযোগেই ঢুকতে পেরেছেন। এরপর পঞ্চায়েতে পা বাড়ালেই মার খাবেন।’’
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েতে প্রধান না এলে উপপ্রধান দায়িত্ব সামলানোর কথা। দু’জনের একজনও না-এলে পঞ্চায়েত কার্যত অচল। পঞ্চায়েত আধিকারিকদের অভিযোগ, “ন্যূনতম পরিষেবা পাচ্ছেন না মানুষ। সমস্ত আর্থিক লেনদেন বন্ধ। চতুর্দশ অর্থ কমিশনের টাকা খরচ হয়নি। নিজস্ব তহবিলের টাকাও খরচ করা যাচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, বিধবা-বার্ধক্য ভাতা-সহ, জাতীয় সহায়তা-সহ সমস্ত প্রকল্প থমকে রয়েছে।
খানাকুলের বিডিও দেবল উপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি দেখা হচ্ছে। এ দিন পুলিশ দিয়ে প্রধান, উপ-প্রধান ও অন্য সদস্যদের পঞ্চায়েত অফিসে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি ও রাজ্যের মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত বলেন, “এলাকায় অশান্তি বা কেউ উন্নয়নের কাজে বাধা দিলে পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও তাই হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy