Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মা-বাবাকে মার, ধৃত ছেলে

বুধবার পান্ডুয়ার থৈপাড়া গ্রামের ঘটনা। প্রতিবেশীরা এসে শম্ভুচরণ দাস নামে ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করান

রক্তাক্ত: শম্ভুচরণবাবু ও তাঁর স্ত্রী। নিজস্ব চিত্র

রক্তাক্ত: শম্ভুচরণবাবু ও তাঁর স্ত্রী। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পান্ডুয়া শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

কষ্ট করে করা বাড়ি তিনি ছোট ছেলের নামে লিখে দেননি। স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্রও থাকতে চান না। এই ‘অপরাধে’ এক বৃদ্ধ দম্পতিকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল তাঁদের ছোট ছেলের বিরুদ্ধে। বৃদ্ধার চুলের মুঠি ধরে মারা হয়। ঘুষি মেরে তাঁর স্বামীর নাক ফাটিয়ে দেওয়া হয়।

বুধবার পান্ডুয়ার থৈপাড়া গ্রামের ঘটনা। প্রতিবেশীরা এসে শম্ভুচরণ দাস নামে ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করান। তাঁর নাকে তিনটি সেলাই পড়ে। তাঁর স্ত্রী গঙ্গাদেবীর অভিযোগের ভিত্তিতে ওই রাতেই পুলিশ শম্ভুবাবুর ছোট ছেলে রঞ্জিৎ এবং তার শ্যালক শিবনাথ দাসকে গ্রেফতার করে। শিবনাথ এবং রঞ্জিতের স্ত্রী দীপান্বিতার বিরুদ্ধে মারধরে মদতের অভিযোগ রয়েছে।

পুলিশ জানায়, রঞ্জিতের স্ত্রী পলাতক। তার খোঁজ চলছে। ধৃতদের বৃহস্পতিবার চুঁচুড়া আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাদের ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। অভিযোগ উড়িয়ে রঞ্জিতের দাবি, ‘‘আমি বাবা-মাকে বাড়ি ছেড়ে যেতে বলিনি, মারধরও করিনি। বাবা-মা আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করেছে।’’

বুধবারই ডানকুনির এক বৃদ্ধাকে তাঁর ছেলে দেখেন না বলে অভিযোগ উঠেছিল। এ বার সামনে এল পান্ডুয়ার ঘটনা। চণ্ডীতলার বৃদ্ধার মতোই শম্ভুবাবু এবং তাঁর স্ত্রী অবশ্য পড়শিদের পাশে পেয়েছেন। রঞ্জিতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ওই পড়শিরাও।

বার্ধক্যের কারণে শম্ভুবাবু কোনও কাজ করতে পারেন না। গঙ্গাদেবী অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। তাঁদের দুই ছেলে, এক মেয়ে। মেয়ে বিবাহিত। বড় ছেলে স্ত্রীকে নিয়ে অন্যত্র থাকেন। তাঁরা অবশ্য যাতায়াত করেন।বাবা-মাকে সংসার খরচও দেন। দম্পতির অভিযোগ শুধুমাত্র ছোট ছেলের বিরুদ্ধে।

২০১৪ সালে রঞ্জিতের বিয়ে হয়। সে বিমা সংস্থায় চাকরি করে। বিয়ের পর থেকেই রঞ্জিত ও তার স্ত্রী শম্ভুবাবুদের বাড়ি থেকে চলে যেতে চাপ সৃষ্টি এবং অত্যাচার করতে থাকে বলে অভিযোগ। গত বছর তাঁদের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের মামলাও করে দীপান্বিতা। সেই মামলা এখনও চলছে। বুধবার সকালে গঙ্গাদেবী ঘরের কাজ করছিলেন। সেই সময়ে রঞ্জিৎ ফের তাঁদের ঘর ছাড়তে জোর করে বলে অভিযোগ। থানায় দায়ের করা অভিযোগে গঙ্গাদেবী জানান, তাঁরা রাজি না-হওয়ায় রঞ্জিৎ প্রথমে তাঁকে চুলের মুঠি ধরে মারে। স্বামী বাঁচালে এলে রঞ্জিৎ তাঁর উপরে চড়াও হয়। তাঁকে মাটিতে ফেলে মারে। সেই সময় ঘরে দীপান্বিতা ও তার ভাই শিবনাথও ছিল। তারা মদত দিতে থাকে।

গঙ্গাদেবীর চিৎকারে পড়শিরা আসেন। খবর যায় পুলিশে। বৃদ্ধার আক্ষেপ, ‘‘ছোট ছেলেকেই আমি বেশি ভালবাসতাম। বাড়ি দিচ্ছি না বলে ও-ই মারল! পড়শিরা না-থাকলে স্বামীকে ফিরে পেতাম না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Gerontology Old People Inhuman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE