Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
চন্দননগরের একাধিক গ্রাহকের একই অভিযোগ

ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকা গায়েব! 

স্টেট ব্যাঙ্কের চন্দননগরের খলিসনি শাখার বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ একাধিক গ্রাহকের। বিস্তর দৌড়ঝাঁপের পরে দু’জন টাকা ফেরত পেয়েছেন‌। তবে, সুদ মেলেনি।

অভিযুক্ত: এই ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধেই উঠছে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র

অভিযুক্ত: এই ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধেই উঠছে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল
চন্দননগর: শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৯ ০১:৫৪
Share: Save:

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকা ফেরত পেতে জুতোর সুকতলা খুইয়ে ফেলতে হচ্ছে!

স্টেট ব্যাঙ্কের চন্দননগরের খলিসনি শাখার বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ একাধিক গ্রাহকের। বিস্তর দৌড়ঝাঁপের পরে দু’জন টাকা ফেরত পেয়েছেন‌। তবে, সুদ মেলেনি।

চন্দননগরের কুণ্ডুঘাট ষষ্ঠীতলার বাসিন্দা লক্ষ্মী দাসের কথাই ধরা যাক। তিনি ওই শাখার গ্রাহক। সেভিংস অ্যাকাউন্টে দেড় লক্ষেরও বেশি টাকা জমা রেখেছিলেন। বছর খানেক আগে জানতে পারেন, মাত্র এক হাজার টাকা পড়ে রয়েছে। ২০ হাজার টাকা ‘ফিক্সড ডিপোজিট’ ছিল। সেটাও উধাও!

মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে লক্ষ্মীদেবীর। তাঁর স্বামী রবি দাস রান্নার কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা গরিব। ভাড়াবাড়িতে থাকি। বাড়ি তৈরির জন্য জমি কিনব বলে তিল তিল করে ব্যাঙ্কে টাকা জমাচ্ছিলাম। অত টাকা উধাও হয়ে গেল! টাকা জমার রসিদ আমাদের কাছে আছে। ব্যাঙ্ক বলছে, টাকা কোথায় গেল, তারা জানে না। টাকা ফেরতের নিশ্চয়তাও মেলেনি।’’

উপায়ান্তর না-দেখে লক্ষ্মীদেবীরা চন্দননগরের আইন সহায়তা কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয়েছেন। ওই সংস্থার মাধ্যমে ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান, চুঁচুড়া আঞ্চলিক দফতর এবং খলিসানি শাখায় টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করার আবেদন জানানো হয়েছে। সংস্থার কর্ণধার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা গরিব মানুষের সঙ্গে প্রতারণা। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এর দায় স্বীকার করে পুরো টাকা সুদে-আসলে ফিরিয়ে দিন।’’

টুসি ঘোষ এবং রূপা গিরি নামে শহরের আরও দুই গ্রাহকও একই অভিযোগ এনেছিলেন ওই ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে। টুসিদেবী ৬৫ হাজার টাকা ‘ফিক্সড ডিপোজিট’ করেছিলেন। তাঁর অভিযোগ, রসিদ কেটে টাকা জমা নেওয়া হলেও অ্যাকাউন্টে জমা হয়নি। দীর্ঘদিন ঘোরাঘুরির পরে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানান, টাকার হদিশ নেই। তাই ফেরত পাওয়া যাব না। পরে আইন সহায়তা কেন্দ্রের মাধ্যমে টুসিদেবী ব্যাঙ্কের বিভিন্ন স্তরে অভিযোগ করেন। তার পরেই ব্যাঙ্কের তরফে টাকা ফেরত দেওয়া হয়।

রূপাদেবী প্রতিবন্ধী মেয়ের জন্য ৫০ হাজার টাকা ‘ফিক্সড ডিপোজিট’ করেছিলেন। একই অভিজ্ঞতা হয় তাঁরও। অভিযোগ, ওই টাকা তুলতে গেলে তাঁকেও ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও টাকা উধাওয়ের দায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ নিতে চাননি। রূপাদেবীও আইন সহায়তা কেন্দ্রের মাধ্যমে ব্যাঙ্কে চিঠি দেন। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটেও জানান। গত ১১ জুন ব্যাঙ্কের তরফে তাঁকে টাকা ফেরত দেওয়া হয়।

টুসিদেবী বা রূপাদেবী— কাউকেই সুদ দেওয়া হয়নি। ব্যাঙ্কে টাকা জমা রেখে সুদ পাওয়া যেখানে নিয়ম, সেখানে তাঁরা কেন বঞ্চিত হবেন সেই প্রশ্ন উঠছে। ওই ব্যাঙ্কের খলিসানি শাখার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে গোটা বিষয়টি জানানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রযুক্তিগত কারণেও ওই সমস্যা হতে পারে।’’

বিশ্বজিৎবাবুর কথায়, ‘‘ভিতরের লোকজন জড়িত না থাকলে স্টেট ব্যাঙ্কের মতো জায়গায় এ ভাবে টাকা লোপাট হওয়া সম্ভব? এমন ঘটলে গরিব মানুষ ব্যাঙ্কের উপরে ভরসা হারাবেন। চিটফান্ড ফের মাথাচাড়া দেবে। ব্যাঙ্কের উচিত উপযুক্ত তদন্ত করে দোষীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া। প্রতারিতদের টাকা সুদ-সমেত ফেরত দেওয়া।’’ পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

SBI State Bank of India Forgery Money
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE