Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

গাড়ি কম, শিশু কোলে দীর্ঘ প্রতীক্ষা প্রসূতিদের

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছুটি দিয়েছেন। কিন্তু দিন কয়েকের শিশু কোলে হাসপাতালের গেটে ‘সরকারি গাড়ির’ জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে শবরী চটি, ঝুমা ভোঁড় ও সমাপ্তি দাসের মতো সদ্য হওয়া মায়েদের।

অপেক্ষা: শিশু কোলে অ্যাম্বুল্যান্সের পথ চেয়ে মায়েরা। মঙ্গলবার, হাওড়া জেলা হাসপাতালে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

অপেক্ষা: শিশু কোলে অ্যাম্বুল্যান্সের পথ চেয়ে মায়েরা। মঙ্গলবার, হাওড়া জেলা হাসপাতালে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

দেবাশিস দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৯ ০০:৩২
Share: Save:

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছুটি দিয়েছেন। কিন্তু দিন কয়েকের শিশু কোলে হাসপাতালের গেটে ‘সরকারি গাড়ির’ জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে শবরী চটি, ঝুমা ভোঁড় ও সমাপ্তি দাসের মতো সদ্য হওয়া মায়েদের। কারণ, অগ্রিম বুকিং সত্ত্বেও ‘১০২ অ্যাম্বুল্যান্স’ এসেছিল প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পরে। ফলে গাড়ির কালো ধোঁয়া আর চড়া রোদে দিন কয়েকের শিশু কোলে প্রতীক্ষা করতে হয় ওঁদের। এমনই অভিযোগ জানাচ্ছেন রোগীর পরিজনেরা। ফলে সরকারি হাসপাতালগুলি থেকে সন্তান-সহ প্রসূতিদের নিখরচায় বাড়ি পৌঁছনোর রাজ্য সরকারের এই প্রকল্প বড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

হাওড়া জেলা হাসপাতাল সূত্রের খবর, নিয়ম হল, প্রসূতিদের ছুটি হওয়ার দিন পরিবারের লোক ১০২ নম্বরে যোগাযোগ করে অ্যাম্বুল্যান্স চাইলে যে কোনও গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া ওই গাড়িগুলির কাজ। রাজ্য সরকার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করলেও রোগীরা গাড়ি পেলেন কি না, তা দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বলে জানা গিয়েছে। অভিযোগ, সেই দেখার কাজ জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঠিক মতো করছেন না। কার্যত প্রসূতিদের তড়িঘড়ি ছুটি দিয়েই দায় সারছেন কর্তৃপক্ষ। যেমন, মঙ্গলবার একসঙ্গে সন্তান-সহ তিন জন প্রসূতিকে ছুটি দেওয়ার পরে তাঁরা সরকারি গাড়ি পেলেন কি না, তা কর্তৃপক্ষ দেখেননি বলেই অভিযোগ।

প্রসূতিদের পরিবারের দাবি, শুধু এ দিন নয়, প্রায় প্রতিদিন এ ভাবে ওই হাসপাতালে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হচ্ছে সন্তান-সহ মায়েদের। ঝুমা ভোঁড়ের স্বামী রানিহাটির বাসিন্দা সন্দীপ ভোঁড় বলেন, ‘‘সাত সকালেই রোগীকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য তাড়া দিচ্ছিলেন নার্সেরা। সকাল ১০টায় ছুটিও দিলেন। এ দিকে, বিকেল ৩টে পর্যন্ত ১০২ নম্বরে সমানে ফোন করে যাচ্ছি। বলছে, অপেক্ষা করুন গাড়ি আসছে।’’ একই

অভিজ্ঞতা শবরী চটির শাশুড়ি স্বপ্না চটির। তিনি বলেন, ‘‘আমরা গ্রাম থেকে এসেছি। এত বুঝি না। হাসপাতালের লোকই বিনা পয়সায় অ্যাম্বুল্যান্স পেতে ফোন করতে বললেন। এত হয়রানি হবে

জানতাম না।’’

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ন্যাশনাল হেলথ মিশনের আওতায় থাকা এই পরিষেবা একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে সরাসরি রাজ্য

সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। এ জন্য

হাওড়ায় কোনও সরকারি অফিস নেই। নিউ টাউন থেকে ওই বেসরকারি

সংস্থা টেলিফোনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে। হাওড়ায় তাঁদের এক জন প্রতিনিধি আছেন। ওই হাসপাতাল থেকে তাঁর কাছে কোনও ফোন গেলে তিনি গাড়ির ব্যবস্থা করে দেন। সংস্থার ম্যানেজার বাস্তব মান্না বলেন, ‘‘হাওড়ায় এমন ৩৮টি গাড়ি দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে মাত্র তিনটি চলে হাওড়া জেলা হাসপাতালে। ফলে রোগীকে পৌঁছিয়ে গাড়ি না ফিরলে পরবর্তী রোগী পাঠানো যাচ্ছে না। এর জন্যই সমস্যা হচ্ছে।’’

হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস বলেন, ‘‘এই সমস্যার কথা শুনেছি। আসলে হাওড়া জেলা হাসপাতালে প্রচুর রোগী। রোগীর তুলনায় গাড়ি সংখ্যা ওখানে খুবই কম। গাড়ির সংখ্যা বাড়াতে বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Medical Health Administration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE