নজরে: গোলমালের পরে এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। শনিবার, হাওড়ার পিলখানায়। নিজস্ব চিত্র
দিনের আলো তখনও ফোটেনি। মুহুর্মুহু বোমা আর গুলির শব্দে শেষ রাতের ঘুম ভেঙে গিয়েছিল এলাকার বাসিন্দাদের। আতঙ্কিত মানুষগুলো বারান্দা ও জানলা দিয়ে দেখলেন, দশ ফুট চওড়া গলির দুই প্রান্তে দু’পক্ষ দাঁড়িয়ে পরস্পরের দিকে বোমা, গুলি, কাচের বোতল, ইট— যা পারছে ছুড়ে মারছে। সাদা ধোঁয়া আর বারুদের গন্ধে ভরে গিয়েছে চারপাশ।
শনিবার ভোরে এমনই ঘটনা ঘটেছে হাওড়ার গোলাবাড়ি থানা এলাকার পিলখানায়। দুই গোষ্ঠীর ওই সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয় এক কিশোর ও এক যুবক। এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হাওড়া সিটি পুলিশের পদস্থ কর্তারা বিশাল বাহিনী নিয়ে এসে পরিস্থিতি সামাল দেন। ঘটনায় রাতে মহম্মদ সাদ্দাম ওরফে গুড্ডু নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর ইদের সময়ে সিইএসসি-র বিদ্যুৎ চুরি নিয়ে গোলমালের জেরে পিলখানার দ্বিতীয় ও তৃতীয় বাইলেনের বাসিন্দাদের মধ্যে দু’টি বিরুদ্ধ গোষ্ঠী তৈরি হয়ে যায়। মূলত তখন থেকেই গোলমালের শুরু। সারা বছর ধরেই টুকটাক অশান্তি লেগে ছিল। এর মধ্যে ওই এলাকার বাসিন্দা ফারুক আলম ওরফে রিঙ্কু নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে মহম্মদ আখতার নামে এক কাঠের মিস্ত্রির ঝগড়া বাধে। অভিযোগ, রিঙ্কু নিজের বাড়িতে কাঠের কাজ করিয়েও বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোক হওয়ায় মহম্মদ আখতারের টাকা মেটাচ্ছিলেন না। পুলিশ জানায়, বারবার চেয়েও টাকা না পেয়ে শুক্রবার বেশি রাতে রিঙ্কুর বাড়িতে দলবল নিয়ে টাকা চাইতে আসেন মহম্মদ আখতার। তর্কাতর্কি থেকে দু’জনের মধ্যে হাতাহাতি বেধে যায়। অভিযোগ, মহম্মদ আখতারের লোকজন মেরে রিঙ্কুর নাক-মুখ ফাটিয়ে দেয়। এর পরে রিঙ্কুর লোকজনও মহম্মদ আখতারকে মারধর করে বলে অভিযোগ। ওই সময়ে এলাকার লোকজন সেখানে এসে দু’পক্ষকে বুঝিয়ে তখনকার মতো বিষয়টি মিটিয়ে দেন।
পুলিশ জানায়, ভোর চারটে নাগাদ ফের এলাকার দুষ্কৃতীদের সঙ্গে নিয়ে হামলা চালান মহম্মদ আখতার। পাল্টা আক্রমণ করে রিঙ্কুর লোকজনও। পরপর বোমা পড়তে থাকে। পুলিশ জানায়, ওই সময়ে এলাকায় ১০-১২টি বোমা পড়ে। ৮-১০ রাউন্ড গুলিও চলে। পরস্পরের দিকে কাচের বোতল আর ইটও ছুড়তে থাকে দুই দল। দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত হয় মহম্মদ আক্রম ঘোসি নামে এক কিশোর ও মহম্মদ ওয়াসিম নামে এক যুবক। পুলিশ জানিয়েছে, ভোরে নমাজ পড়তে যাওয়ার আগে পাড়ার দোকানে কচুরি কিনতে গিয়েছিল নিরীহ ওই কিশোর। দুষ্কৃতীদের ছোড়া একটি গুলি তার বুকে লেগে পাঁজরের ভিতরে ঢুকে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুলিতে আহত হন আরও এক বছর কুড়ির যুবক মহম্মদ ওয়াসিম। একটি গুলি তাঁর গাল ছুঁয়ে চলে যায়। গালে গভীর ক্ষত হওয়ায় তাঁকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ দিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, গলি জুড়ে তখনও পড়ে রয়েছে কাচের ভাঙা বোতল, বোমার পোড়া সুতলি, গুলির খোল। এলাকার পরিস্থিতি থমথমে। স্থানীয় বাসিন্দা আফজল খান বলেন, ‘‘এলাকার কিছু দুষ্কৃতী অশান্তি ছড়াচ্ছে। কাল রাতে ব্যাপারটা আমরাই মিটিয়ে দিয়েছিলাম। ভোরে যখন নমাজ পড়তে গিয়েছি, তখন ওরা পরপর বোমা মারতে থাকে। গলিতে ঢুকে এসেও বোমা ছোড়ে। এর পরে আমরা সবাই বেরিয়ে পড়ি।’’ এলাকার অন্য বাসিন্দারা জানান, বোমা-গুলির শব্দে ঘুম ভাঙে তাঁদের। আতঙ্কে অনেক ক্ষণ কেউ বাইরে বেরোতে পারেননি। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
এ দিনের ঘটনা নিয়ে হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (উত্তর) অমিত রাঠৌর বলেন, ‘‘দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বোমা-গুলিও চলেছে। দু’জন সাধারণ মানুষ আহত হয়েছেন। আমরা তদন্ত শুরু করেছি। কয়েক জন দুষ্কৃতীর নামও পেয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy