Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
সুদিনের অপেক্ষায় স্থানীয় অর্থনীতি
Gondalpara

আজ খুলছে গোন্দলপাড়া

আর্থিক মন্দা, শ্রমিক অসন্তোষ-সহ নানা কারণ দেখিয়ে ২০১৮ সালের ২৭ মে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ।

ফাইস চিত্র।

ফাইস চিত্র।

প্রকাশ পাল
চন্দননগর শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২০ ০৩:৪৭
Share: Save:

বহু প্রতীক্ষার পরে আজ, রবিবার খুলছে চন্দননগরের গোন্দলপাড়া জুটমিল। ফের সাইরেনের শব্দ শুনে কাজে যেতে প্রস্তুত শ্রমিকেরা। অনিশ্চয়তার মেঘ সরে খুশির রোদ উঁকি দিচ্ছে তাঁদের ঘরে।

গত ১৪ অক্টোবর কলকাতায় ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে মিল খোলার সিদ্ধান্ত হয়। মিল সূত্রের খবর, ওই সিদ্ধান্তের পরেই রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু হয়। আজ ‘ব্যাচিং’ এবং ‘জুট’ বিভাগের কাজ চালু হওয়ার কথা। কয়েক দিনের মধ্যে ধাপে ধাপে বাকি বিভাগগুলি চালু হবে। বেশ কয়েক ট্রাক পাট মিলে ঢুকেছে।

আর্থিক মন্দা, শ্রমিক অসন্তোষ-সহ নানা কারণ দেখিয়ে ২০১৮ সালের ২৭ মে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। উৎপাদন চালুর দাবিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন পথে নামে।

মিল খোলার সিদ্ধান্তের পরেও শ্রমিকরা দোলাচলে ভুগছিলেন। আশঙ্কা ছিল, গত লোকসভা ভোটের সময়ের মতো কয়েক দিনেই ফের বন্ধ হবে না তো! সেই আশঙ্কা অনেকটাই উবে গিয়েছে। সাধারণ শ্রমিক বা শ্রমিক-নেতাদের একাংশ বলছেন, সে বার মিল খোলা যে ‘চমক’, কর্তৃপক্ষের ঢিলেঢালা মনোভাবে বোঝা যাচ্ছিল। এ বার পদ্ধতি মেনে যাবতীয় কাজ হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা চোখে পড়ছে। তা ছাড়া, বর্তমানে চটের বস্তার ভালই চাহিদা রয়েছে। শুক্রবার মিলে পুজো হয়। মালিক সঞ্জয় কাজোরিয়া নিজে এসেছিলেন। শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সব মহলের আশা, এ বার মিল স্বাভাবিক ভাবেই চলবে। সুদিন ফিরবে শ্রমিকের। দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছর বন্ধ মিল আঘাত হেনেছে এলাকার আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামোয়। ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকেরা অনেক্ ফিরে গিয়েছেন। বাকিদের ক্রয় ক্ষমতাও তলানিতে। ফলে, মার খেয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। মিল চললে পরিস্থিতি বদলাবে বলে তাঁরা মনে করছেন।

মিলের ‘টাইম অফিস’-এর শ্রমিক তথা টিইউসিসি নেতা রাজেশ জয়সোয়ারা বলেন, ‘‘আশা করছি, মিল ভাল ভাবেই চলবে। শ্রমিকেরা উদ্যম নিয়ে কাজ করবেন। তবে খাওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ কিছু অগ্রিম দিলে ভাল হয়। বিষয়টা আমরা কর্তৃপক্ষকে বলেছি।’’ শ্রমিকদের অনেকেই জানান, দোকান-বাজারে প্রচুর টাকা ধারদেনা হয়েছে। মিল খুললে ধীরে ধীরে তাঁরা দেনা শোধ করবেন।

অবসরের দোরগোড়ায় পৌঁছনো প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় নামে ‘মেকানিক্যাল’ বিভাগের এক শ্রমিকের কথায়, ‘‘শুক্রবার থেকে কাজ করছি। মন ভাল আছে। কাজ করে আগে দেনা শুধতে হবে।’’ ভগবান দাস নামে আর এক শ্রমিক কলকাতায় কাপড়ের দোকানে কাজ করেছেন। তবে বেশিদিন চালাতে পারেননি। লকডাউনের সময় দুর্দশা বাড়ে। তাঁর কথায়, ‘‘দুর্দশার দিন শেষ হল মনে হচ্ছে। সংসারটা একটু ঠিকঠাক ভাবে চলবে।’’

এলাকার মুদি দোকানি ব্রহ্মনাথ চৌধুরী জানান, তাঁদেরও বিক্রিবাট্টা তলানিতে। তাঁর কথায়, ‘‘শ্রমিকদের মুখের দিকে তাকিয়ে ধারদেনা দিয়েছি। গয়না বন্ধক রেখে সামগ্রী তুলতে হয়েছে। শ্রমিকদের কেউ একবেলা রান্না করেছেন। কেউ মুড়ি খেয়ে কাটিয়েছেন। কেউ পেটে কিল মেরে থেকেছেন। চিকিৎসার খরচ জোগাড় হয়নি। আমাদেরও খাওয়ার খরচ ওঠেনি। বেঁচে রয়েছি, এটাই ঢের। বিভিন্ন সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ শ্রমিকদের পাশে না দাঁড়ালে দুর্দশা আরও সীমাহীন হত।’’ কঠিন সময় কাটবে, এই আশায় প্রহর গুণছেন মিষ্টির দোকানি লালু ঘোষও।

মন খারাপ কাটছে গোন্দলপাড়ার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gondalpara Jute Mill Chandannagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE