শঙ্করের কভার ছবিতেও বাইক। ছবি সৌজন্য: ফেসবুক
মোটরবাইকটাই যেন ছিল ‘পক্ষীরাজের ঘোড়া’। সেটা চালিয়েই বিশ্ব দেখার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। কিন্তু এই রোমাঞ্চ-ভ্রমণই যে মৃত্যুর কারণ হবে তা বোধহয় ভাবতে পারেননি শঙ্কর। বন্ধুদের সঙ্গে মোটরবাইক নিয়ে অভিযানে বেরিয়ে বেঙ্গালুরুর রাস্তায় ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কায় মৃত্যু হল শঙ্কর প্রামাণিক (২৭) নামে ওই যুবকের।
‘চাঁদের পাহাড়’-এর মূল চরিত্র শঙ্করের মতোই হলদিয়ার দুর্গাচকের বাসিন্দা শঙ্করেরও ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা বরাবরের। শহরেরই জাপানি শিল্পসংস্থা মিৎসুবিশিতে চাকরির পাশাপাশি সুযোগ পেলেই বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন ঘুরতে। পাশে পেয়েছিলেন কারখানারই আরও দুই সহকর্মী সৌম্যব্রত খাঁ আর শুভশঙ্খ সেনকে। এর আগে বাইক নিয়ে ওড়িশা ঘুরে এসেছেন। এ বার ঠিক করেন, দেশের চারটি বড় শহর কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই আর চেন্নাইকে জুড়েছে যে সড়ক, সেই সোনালি চতুর্ভুজ প্রকল্পের রাস্তা জুড়ে বাইক চালাবেন। পেরোবেন ৬০০০ কিলোমিটার রাস্তা। গত ১০ মার্চ জন্মদিন ছিল অবিবাহিত শঙ্করের। সেদিনই চূড়ান্ত পরিকল্পনা হয়ে যায়। ১২ মার্চ সকালেই বাইক চালিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিন বন্ধু।
মাঝের দিনগুলো কোথায় কী ভাবে গাড়ি চালিয়েছেন তার ‘আপডেট’, ছবি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে রোজই দিয়েছেন তিনজন। রবিবার সকালে শঙ্কররা ছিলেন বেঙ্গালুরুর পথে। দুপুর সাড়ে ১১টা নাগাদও ‘আপডেট’ দেন শঙ্কর। লেখেন, ‘সো হট ওয়েদার। টেকিং রেস্ট’। বাকি বন্ধুদের রাস্তা চিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনিই। বেঙ্গালুরু থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে একটি লরির সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা লাগে শঙ্করের বাইকের। তখনও কিছুই টের পাননি একটু পিছিয়ে থাকা দুই বন্ধু। রাস্তায় মাঝে একটা জটলা দেখে সন্দেহ হয় শুভশঙ্খদের। নেমে দেখেন, রাস্তা ভেসে যাচ্ছে শঙ্করের রক্তে। বাইক পড়ে রয়েছে রাস্তায়। স্থানীয়রা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জানান, মারা গিয়েছেন শঙ্কর।
কিন্তু বাইক চালাতে এত দক্ষ শঙ্কর কী করে পড়লেন এমন দুর্ঘটনায়?
শঙ্করের এক বন্ধু হলদিয়ার বাসিন্দা রাজীব মুখোপাধ্যায় জানান, একটানা বাইক চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন শঙ্কর। এমনকী শনিবার রাতের ‘আপডেট’ও তার সাক্ষী। এ নিয়ে প্রশ্ন করায় শঙ্কর তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘এক টানা ৬২০ কিলোমিটার বাইক চালিয়েছি। তাই প্রবল ক্লান্ত।’’ রাজীবের অনুমান, সেই ক্লান্তিই হয়তো এই দুর্ঘটনার কারণ। বাইক নিয়ে প্রতি বছর কলকাতা থেকে লাদাখ, গোয়া ঘুরে বেড়ান অভিনেতা ঋষি কৌশিক। একসময় একটি বাইকার্স ক্লাবের সদস্যও ছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা নিয়মিত বাইক চালান, তাঁদের কাছে ৬২০ কিলোমিটার একদিনে চালানো কোনও ব্যাপার নয়। শুধু ক্লান্তির কারণেই এই দুর্ঘটনা তেমন বলা যাবে না। অনেক সময় চোখে আলো প়ড়লে বা পোকা পড়লেও এমন হতে পারে। এমনকী উল্টো দিকের গাড়িও দুর্ঘটনা ঘটায়।’’
এ বিষয়ে কোনও কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না শঙ্করের অভিযানসঙ্গী শুভশঙ্খ ও সৌম্য। এমনকী শঙ্করের বাবা-মাও ছেলের মৃত্যুর খবর জানেন না। শঙ্খশুভ্র বলেন, ‘‘শঙ্করের মা রোজ রাতে ওকে ফোন করতেন। আজ আমাকে ফোন করেছেন। কী বলব জানি না।’’ আরও জানান, তাঁরা ট্রেনে চেপে ফিরবেন হলদিয়ায়। মিৎসুবিশির এক আধিকারিক বলেন, ‘‘শঙ্করের দেহ কীভাবে বিমানে আনা যায়, তার চেষ্টা চলছে। আর বাইক দু’টিও ট্রান্সপোর্টে আনার চেষ্টা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy