নিয়ম-মতে: দূরত্ব বিধি মেনে জলের লাইন।
পাড়ায় ঢোকার আগে বাঁশের ব্যারিকেড। সেটা টপকানোর আগে ভালো ভাবে সাবান জলে হাত ধুতে হবে। পাড়ায় ঢোকার পর দূরত্ব বজায় রেখেই বলতে হবে কথাবার্তা। কলে জল নিতে হলেও চুনের গণ্ডির ভিতরে দাঁড়িয়েই লাইন দিতে হবে। এমনকি, পালা করে পাড়ার অলিগলি পরিষ্কার করতে হবে জীবাণুনাশক দিয়ে। এখন এ পাড়়ার এটাই নিয়ম। করোনা মোকাবিলায় শহর থেকে বহু দূরে এ ভাবেই সচেতনতার পথ দেখাচ্ছেন গোয়ালতোড়ের ফুলমণি সরেন, পার্বতী মুর্মুরা।
গোয়ালতোড় (গড়বেতা ২) ব্লকের পিয়াশালা অঞ্চলের চাঁদাবিলা গ্রাম সংসদের মধ্যে পড়ে ফুলমণি, পার্বতীদের পাড়া। পাড়ায় সাকূল্যে ৫০-৫১ টি আদিবাসী পরিবারের বাস। শিক্ষার হার ২০ শতাংশের মতো। পাড়ায় শৌচালয় আছে প্রায় সবার বাড়িতেই। বিধি মেনে কেউ আর খোলা স্থানে মলমূত্র ত্যাগ করেন না। আছে বিদ্যুৎ, প্রাথমিক বিদ্যালয়, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, পানীয় জলের ব্যবস্থা। পাড়ার প্রায় সবাই দিনমজুর। এখান থেকে ব্লক শহর গোয়ালতোড়ের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। এরকম এক প্রত্যন্ত এলাকার আদিবাসী মানুষেরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে করোনা মোকাবিলায় পথে নেমেছেন। পাড়ার সাগেন গাঁওতা ক্লাবের সদস্যদের সাহায্যে আদিবাসী পরিবারের প্রত্যেকে এখন সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন।
উন্নত মাস্ক বা স্যানিটাইজ়ার হয়তো নেই। কিন্তু তাতে কী। পাড়ার বাসিন্দারা নিজেরাই নানা উপায়ে সাবধানতা অবলম্বন করছেন। পাড়ায় ঢোকার ৪ টি রাস্তা। এর মধ্যে একটি ছাড়া সবগুলিই মাটির। সেই রাস্তার মুখে মুখে বাঁশের ব্যারিকেড। সেখানে টাঙানো রয়েছে হাতেলেখা কাগজ। তাতে লেখা- গ্রামে বাইরের লোকের প্রবেশ নিষেধ। পালা করে সকলে পাহারা দিচ্ছেন। পাড়ার লোক বাইরে থেকে এলে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধোয়ার পরই ঢোকার ছাড়পত্র মিলছে। পাড়ার লোকেরাই রুটিন করে জীবানুনাশক স্প্রে করে স্যানিটাইজ় করছেন পুরো পাড়া। এমনকি কাজকর্মের অবসরে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বজায় রেখে কথাবার্তা বলছেন পুরুষ - মহিলারা।
ফুলমণি সরেন, পার্বতী মুর্মু, কৃষ্ণ মুর্মু, সোমনাথ সরেনরা বলেন, ‘‘অনেক শিক্ষিত লোক নিয়ম মানছেন না। দোকান-বাজারে কত লোক।এতে নিজেরাই বিপদে পড়বে। আমাদের ভালো মতো মুখ ঢাকা বা হাত ধোয়ার কিছু নেই। তবুও নিজেরা সতর্ক থাকছি।’’ আদিবাসী ক্লাব সাগেন গাঁওতার সভাপতি বাপি মুর্মু, সম্পাদক অভিষেক মিশ্র বলেন, ‘‘আদিবাসী পাড়ার প্রত্যেকেই খুব আত্মসচেতন। সতর্ক থাকতে কী করতে হবে তাঁদেরকে একদিন বোঝানোর পর, সেই বিধি আর লঙ্ঘন করেননি কেউই।’’ ব্লকের সমাজকল্যাণ আধিকারিক সুব্রত বাজপেয়ী বলেন, ‘‘ওই আদিবাসী পাড়ার বাসিন্দাদের এরকম প্রয়াস অনুকরণযোগ্য।’’ বিডিও সোফিয়া আব্বাসের কথায়, ‘‘নিজেরা সতর্ক থেকে আদিবাসী পরিবারেরা স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলছেন, এটা ইতিবাচক লক্ষণ।’’
অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy