হাতেহাত: দুই বিজেপি প্রার্থীর সঙ্গে মোদী। রবিবার হলদিয়ায়। ছবি: পিটিআই
হলদিয়া বন্দর-সহ গোটা শিল্পাঞ্চলকে রাজ্যে শিল্পায়নের প্রধান মুখ হিসাবে বারবারই বিনিয়োগকারীদের কাছে তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা ভোটের প্রচারে সেই হলদিয়ায় এসে শিল্পাঞ্চলে মাফিয়ারাজ ও তোলাবাজির অভিযোগ তুলে তৃণমূলকে তুলোধোনা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
রবিবার হলদিয়া হেলিপ্যাড ময়দানের সমাবেশে মোদী বলেন, ‘‘হলদিয়া পোর্ট থেকে কাঁথি পর্যন্ত এখানে কী ভাবে মাফিয়ারাজ চলে আপনারা তাঁর ভুক্তভোগী। তৃণমূলের দুর্নীতির মডেল স্পষ্ট। এখানে স্কুলে চাকরির নামে তৃণমূল নেতারা যুবকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা তোলে। এখানে ‘ট্রিপল টি’ অর্থাৎ তৃণমূল-তোলাবাজি-ট্যাক্স দিতে হয়।’’
হলদিয়া বন্দর-সহ শিল্পাঞ্চলে ভোটের প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর কাজে বাধা দেওয়ার জন্য হলদিয়া বন্দরে এবিজি গোষ্ঠীকে চলে যেতে হয় বলে অভিযোগ। তাতে অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া দুর্গাচকে এক ব্যবসায়ীর কাছে দাবিমত টাকা না পেয়ে তাঁকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। এখানেও নাম জড়ায় স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার। শিল্পশহরে পর পর ঘটনায় তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের জন্যই প্রধানমন্ত্রী প্রচারে শাসক দলকে কাঠগড়ায় তুলেছেন বলে জেলা বিজেপি নেতৃত্বের দাবি। দলের তমলুক জেলা সভাপতি প্রদীপ দাস বলেন, ‘‘হলদিয়া বন্দরে অসংগঠিত শ্রমিকদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। এঁদের কাছ থেকে শাসক দলের তরফে চাঁদার নামে পারিশ্রমিকের একাংশ কেটে নেওয়া হচ্ছে। শ্রমিকেরা তাঁদের প্রাপ্য মজুরি পাচ্ছেন না। তাই প্রধানমন্ত্রী যথার্থ অভিযোগ করেছেন।’’
তোলাবাজির অভিযোগ তোলার পাশাপাশি হলদিয়ার উন্নয়ন নিয়ে তিনি যে কতটা আন্তরিক তাও এ দিন নিজের বক্তব্যে তুলে ধরেন মোদী। হলদিয়া থেকে বারাণসী জলপথে যোগযোগ গড়ে তোলার জন্য উদ্যোগের কথা জানিয়ে মোদী বলেন, ‘‘আপনার একটি ভোট হলদিয়ার পুরনো গৌরব ফিরিয়ে আনবে। স্বাধীনতার পর এই প্রথম হলদিয়া থেকে বারাণসী গঙ্গা জলপথে জোড়া হবে। আমি বারাণসীর এমপি। আপনারা হলদিয়া থেকে বিজেপির এমপি দিলে হলদিয়া ও বারাণসী উন্নয়নের পথে জুড়ে যাবে। হলদিয়ার উন্নয়নে নতুন গতি আসবে।’’
তোলাবাজি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিবাদে এ দিন বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে মমতা বলেন, ‘‘তুমি আমাকে তোলাবাজ বলছ। তোমার তো পা থেকে মাথা পর্যন্ত মানুষ খুনের রক্ত লেগে আছে। তুমি দাঙ্গা করতে করতে এখানে এসেছো। আর আমি মার খেতে এখানে এসেছি।’’ কোতুলপুরের সভাতেও মোদীকে পাল্টা তোলাবাজ বলে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘‘টিএমসি মানে টেম্পল (মন্দির), মস্ক (মসজিদ) এবং চার্চ (গির্জা)। টিএমসি (তৃণমূল)-এর মানে জানেন না? আপনার থেকে বড় তোলাবাজ কে আছে?’’
প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ নিয়ে তমলুকের তৃণমূল প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘উনি নিজে মাফিয়া ও তোলাবাজ। বিজেপির কেন্দ্রীয় অফিস তৈরি হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করে। সেই টাকা কোথা থেকে এসেছে তা প্রকাশ করুক ওরা।’’
শিল্পাঞ্চলে তোলাবাজি নিয়ে মোদীর অভিযোগের প্রসঙ্গে মুখ খুলতে চাননি হলদিয়ার বড় ও মাঝারি শিল্প সংস্থাগুলির কর্তারা। ঠারেঠোরে তাঁরা বুঝিয়েছেন রাজ্য সরকারের বিরোধিতা করবেন না। হলদিয়া মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল শুভাশিস রায়ের বক্তব্য, ‘‘এখানে তোলাবাজির জন্য কোনও শিল্পসংস্থা বা কারখানার কাজ বন্ধ হয়েছে এমন অভিযোগ ঠিক নয়। পরিকাঠামো ও মালিকানা সংক্রান্ত সমস্যার কারণেই কয়েকটি কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে ইদানীং হলদিয়ার অনেক উন্নতি হয়েছে। নতুন করে বহু বিনিয়োগ এসেছে।’’
বন্দর-সহ শিল্পাঞ্চলে তোলাবাজির অভিযোগ নিয়ে তৃণমূল প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র জেলা কার্যকরী সভাপতি শিবনাথ সরকার বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। বরং তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর হলদিয়ায় নতুন শিল্প পরিবেশগত সব বাধা কাটিয়ে ছাড়পত্র পেয়েছে। বহু শিল্পসংস্থা এখানে বিনিয়োগ করেছে। একাধিক কারখানার সম্প্রসারণ, উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। হলদিয়া শিল্পাঞ্চল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এমন অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন।’’
যদিও শিল্পাঞ্চল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে কার্যত সমর্থন করেছেন হলদিয়ার সিপিএম নেতা তথা দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্যামল মাইতি। তাঁর দাবি, ‘‘বামফ্রন্ট ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পরেই হলদিয়ায় বিভিন্ন শিল্প সংস্থার উপরে চাপ দিয়ে তোলা আদায় করা হয়। আমরা গোড়া থেকেই তা বলে আসছি। এদিন প্রধানমন্ত্রী সেই অভিযোগকে মান্যতা দেওয়ায় খুশি হলাম। তবে আমরা চাই হলদিয়া বন্দর-সহ শিল্পাঞ্চলকে বাঁচাতে কেন্দ্রীয় সরকার অবিলম্বে পদক্ষেপ করুক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy