Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Midnapore Medical College

ভয় কাটছে না মায়েদের

এক প্রসূতি বলছেন, ‘‘হাসপাতালে এত নিরাপত্তা। তার মধ্যেই কী ভাবে শিশু চুরি হয় বুঝতে পারছি না।’’

নজরদারি: ‘মাতৃমা’ ভবন থেকে শিশু নিয়ে বেরোনোর সময়ে সব নথি খতিয়ে দেখছেন বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

নজরদারি: ‘মাতৃমা’ ভবন থেকে শিশু নিয়ে বেরোনোর সময়ে সব নথি খতিয়ে দেখছেন বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:০৫
Share: Save:

ঘণ্টা ছয়েকের মধ্যে চুরি যাওয়া শিশু উদ্ধার হয়েছে। এক মহিলাকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। তবে ভরা হাসপাতাল থেকে শিশুর চুরির ঘটনায় আতঙ্ক এখনও কাটছে না। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অনেক প্রসূতিই ভয়ে রয়েছে। এক প্রসূতি বলছেন, ‘‘বাচ্চা নিয়ে এখানে থাকতে মনটা কেমন করছে। ‘হাসপাতালে এত নিরাপত্তা। তার মধ্যেই কী ভাবে শিশু চুরি হয় বুঝতে পারছি না।’’

মেডিক্যালের ‘মাতৃমা’ ভবন থেকে সুমিত্রা খামরই নামে যে প্রসূতির সদ্যোজাত শিশুপুত্র চুরি যাওয়া নিয়ে রবিবার তুলকালাম বেধেছিল মেডিক্যালে, হাসাপতালের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল তাঁর পরিবারও। মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডুর অবশ্য আশ্বাস, ‘‘কারও আতঙ্কের কিছু নেই। হাসপাতালের নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হচ্ছে।’’ সোমবার তড়িঘড়ি মেডিক্যালে এক বৈঠকও হয়েছে। সেখানে নিরাপত্তার বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়েছে। এ দিন হাসপাতালের মাইকে শোনা গিয়েছে সাবধানবাণী, ‘কাউকে টাকাপয়সা দেবেন না। দালালচক্রের মধ্যে পড়বেন না। কেউ টাকা চাইলে হাসপাতালে অভিযোগ জানান।’

রবিবার হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে যে মহিলাকে ওই শিশু কোলে চলে যেতে দেখা গিয়েছিল, শিশু-চুরি কাণ্ডে তাঁকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলার নাম সুলতানা বিবি। বাড়ি মেদিনীপুর শহরের মির্জাবাজারের অদূরে সর্বদ্দিমহল্লার কাছে।

তদন্তে পুলিশ জেনেছে, সুলতানার বৌমা হাসপাতালের ওই ওয়ার্ডেই কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন এক বছর আগে। বৌমা হাসপাতালে ভর্তি থাকার সুবাদে হাসপাতালে প্রবেশের সেই পুরনো কার্ডই সুলতানা নিজের কাছে যত্ন করে রেখেদিয়েছিলেন। সেই কার্ড হাতেই রবিবার প্রসূতি ওয়ার্ডে ঢোকেন তিনি ও পাঁচ মিনিটের মধ্যে সুমিত্রার সদ্যোজাতকে চুরি করে বেরিয়ে যান। পুলিশ জেনেছে, এক বছর ধরে ‘নাতি’ খুঁজছিলেন সুলতানা। রবিবার সেই কাজ হয়। হাসপাতাল থেকে তিনি করে খবর পেলেন, সেই জবাব খুঁজছেন তদন্তকারীরা। অপহরণ, চুরির অভিযোগে সুলতানার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। এ দিন মেদিনীপুর আদালতে হাজির করে পুলিশ তাঁকে চার দিনের জন্য হেফাজতে নিয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার বলেন, ‘‘তদন্তে সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই দোষ কবুল করেছেন অভিযুক্ত মহিলা। ঘটনার পিছনে হাসপাতালের কোনও দুষ্টচক্র রয়েছে কি না, ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।হাসপাতালে ঢোকার এক বছরের পুরনো কার্ড দেখিয়ে সুলতানা কী ভাবে ওয়ার্ডের মধ্যে ঢুকে গেলেন, কী ভাবেই বা শিশু চুরি করে অবাধে বেরিয়ে গেলেন, সেটাই বড় প্রশ্ন। ওই মহিলা কী ভাবে আরেক প্রসূতির পুত্রসন্তান জন্মানোর খবর পেলেন, সেই প্রশ্নও উঠেছে। আয়া তাঁকে এই খবর দিয়েছেন, না কি অন্য কেউ, তদন্তে খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

মেদিনীপুর মেডিক্যালে আয়াদের বিরুদ্ধে জুলুমবাজির অভিযোগ নতুন নয়। পরিজনেদের একাংশের অভিযোগ, হাসপাতালে আয়া রাখতে বাধ্য করা হয়। আয়া না রাখলে রোগীর চিকিৎসায় গাফিলতি দেখা দেয়। আয়াদের দিনে দিতে হয় ৪০০-৫০০ টাকা। বকশিসও দিতে হয়। মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পঞ্চাননবাবুর অবশ্য দাবি, ‘‘হাসপাতালে আয়াদের ঢুকতে দেওয়া হয় না।’’ তবে হাসপাতালের ফেসিলিটি ম্যানেজার সঞ্জীব গোস্বামীর যুক্তি, ‘‘রোগীদের কেউ কেউ আয়াদের তাঁদের পরিজন বলে পরিচয় দেয়। তখন তাঁদের বের করা সম্ভব হয় না।’’ তিনি জুড়ছেন, ‘‘আয়া নিতে বাধ্য করা হয়, এমন লিখিত অভিযোগ কেউ করেননি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Midnapore Medical College Child Theft
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE