এক সময় যাঁর হাত ধরে জেলা কংগ্রেসের সভাপতি হয়েছিলেন তাঁর বিরুদ্ধেই বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করতে সবং যাচ্ছেন নির্মল ঘোষ!
শুক্রবার তৃণমূল প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। যদিও অনেকেউ মনে করেছিলেন, সবংয়ে জেলা পরিষদের বিদ্যুত্ কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতিকে প্রার্থী করবে তৃণমূল। কিন্তু শুক্রবার কালীঘাট থেকে দলনেত্রী যে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করলেন, দেখা গেল তাতে নাম রয়েছে ২০১১ সালের পর তৃণমূলে যোগ দেওয়া নির্মল ঘোষের।
কিন্তু সমীকরণ বলছে অমূল্য মাইতির কাঁধে ভর রেখেই তাঁকে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে হবে। এ খবরে সবংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার মন্তব্য, “নির্মল ও অমূল্য— দু’জনকেই আমি ছোট ভাইয়ের মতো ভালবাসি, স্নেহ করি। প্রার্থী হিসাবে কিছু বলব না। কারণ, কংগ্রেস এখনও প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেনি। আমি এখনও প্রার্থী নই। ফলে অন্য প্রার্থী সম্বন্ধে মন্তব্য করতে পারি না।”
সবংয়ের বিধায়ক মানস ভুঁইয়া দীর্ঘদিন ধরেই ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী হিসাবে মর্যাদা পেয়ে এসেছেন। সিপিএমের একচ্ছত্র আধিপত্যের কালেও সবংয়ে ছিল তাঁর রাজত্ব। ১৯৮২ সাল থেকে সবং বিধানসভায় জয়ী হয়ে আসছেন। হেরেছিলেন মাত্র একবার, ২০০১ সালে। তবে ১৯৯৬ সালেও একবার হার হয়েছিল। তবে পরে আদালতের নির্দেশে জয়ী হন মানসবাবুই। শুধু বিধানসভা কেন? সবং পঞ্চায়েত সমিতিও দখল রাখতে সক্ষম হয়েছে কংগ্রেসও। তার উপর সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হলে সবংয়ে যে কংগ্রেসের ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এই পরিস্থিতিতে হঠাত্ নির্মল ঘোষকে সবংয়ে প্রার্থী করা হল কেন? তা নিয়ে জেলা জুড়ে জল্পনার শেষ নেই। এ ব্যাপারে তৃণমূল নেতাদের দু’ধরনের অভিমত। প্রথমত, নির্মলবাবুর জেলা কংগ্রেস সভাপতির পদ গিয়েছিল মানস ভুঁইয়ার কারণে। বদলা নিতে নির্মলবাবু একচুলও জমি ছাড়বেন না। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, অন্য জায়গা থেকে সবংয়ে প্রার্থী দিয়ে আসলে মানস ভুঁইয়াকে বিধায়ক হিসাবেই দেখতে চায় তৃণমূলও।
এ দিকে, দলের সুদিনে অমূল্যবাবু একবারও বিধানসভায় টিকিট পাননি। ২০১১ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হওয়ায় মানসবাবুই জোটের প্রার্থী হয়েছিলেন। এ বার জোট না হওয়ায়, আশায় ছিলেন অমূল্যবাবু। অমূল্যবাবুকে প্রার্থী না করার পিছনে দল যুক্তি দিয়েছে, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষদের টিকিট দেবে না দল। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সে যুক্তিও টিকছে না। কারণ, নির্মলবাবু জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ। ফলে তৃণমূল প্রার্থী যে অমূল্য মাইতির ঘাড়ে নির্বাচন বৈতরণী পার হতে চাইবেন, আদৌ কি তা সফল হবে?
অমূল্যবাবুর সংক্ষিপ্ত জবাব, “নেত্রী যাঁকে উপযুক্ত মনে করেছেন তাঁকেই প্রার্থী করেছেন। আমরা দলের অনুগত সৈনিক হয়েই লড়াই করব।” প্রকাশ্যে তিনি যা-ই বলুন না কেন, প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরেই সবং জুড়ে অবশ্য দুশ্চিন্তার কালো মেঘ। স্থানীয় নেতাদের মনে সুখ নেই।
উল্টোদিকে হাসির রেখা কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের ঠোঁটে। নির্বাচনের আগেই তাঁরা যে একটা অস্ত্র পেয়ে গিয়েছেন— ভূমিপূত্র থাকতে শাসক দলে বহিরাগত কেন?
তৃণমূলের এক স্থানীয় নেতার কথায়, “কংগ্রেসের এই আক্রমণকে কী ভাবে ঠেকাব তা বুঝে উঠতে পারছি না। যে অমূল্য মাইতি ধীরে ধীরে কংগ্রেস ও সিপিএম থেকে নেতা-কর্মীদের দলে ঢোকালেন নির্বাচনে জয়ের আশায়, তিনিই নেই! ভাবতেও পারছি না। সব কর্মী সমর্থকের মনোবল ভেঙে গিয়েছে।”
সবংয়ের তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের মনোবল কী ভাবে বাড়াবেন তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূল প্রার্থী নির্মল ঘোষ অবশ্য বলেন, “২০১১ সালের পর ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী বলে আর কিছু নেই। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, অসীম দাশগুপ্তের মতো প্রার্থীদেরও হারতে হয়েছিল। আর এখন তো মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে রাজ্য জুড়ে উন্নয়নের জোয়ার। অন্য দিকে খুনি সিপিএমের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে কংগ্রেস। মানুষ ওদের ক্ষমা করবেন না।” কিন্তু গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কী ভাবে এড়াবেন? নির্মলবাবুর কথায়, “গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলেও কিছু নেই। নেত্রীর সিদ্ধান্তই শেষ কথা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy