প্রতীকী ছবি।
কংগ্রেসের গড় মুর্শিদাবাদ জেলায় ডোমকল বরাবরই বাম-ঘেঁষা ব্যতিক্রম হিসেবে চিহ্নিত। তৃণমূলের দাপট কিংবা কংগ্রেসের রমরমা সত্ত্বেও সেখানে নির্বাচিত বিধায়ক সিপিএমের। তবে, সেই হিসেব বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখিয়েছে গত লোকসভা নির্বাচনের ফল। বামেদের একেবারে তৃতীয় স্থান থেকেও হটিয়ে সেই জায়গা দখল করেছে বিজেপি। মুসলমান প্রধান সীমান্তের ওই এলাকায় বিজেপি’র এমন প্রভাব দেখে তাই বিস্মিত বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে খোদ বিজেপি-ও।
গত লোকসভা নির্বাচনে জলঙ্গি বিধানসভার হিসেব বলছে, সেখানে বামেদের শক্ত ঘাঁটি টলিয়ে দিয়ে পা রেখেছে ভারতীয় জনতা পার্টি। পার্শ্বরবর্তী রানিনগর বিধানসভায় সীমান্ত জুড়ে চর এলাকায় একচেটিয়া ভোট পেয়েছে বিজেপি। ফলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ওই এলাকায় বিজেপি যে অন্য রাজনৈতিক দলগুলির কাছে রীতিমতো প্রতিপক্ষ হয়ে উঠছে তা স্পষ্ট হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সীমান্তের চর এলাকার বহু অংশেই বসবাসকারীদের সিংহভাগ পড়শি বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষ। পদ্মা পার হয়ে সেই সব চর থেকে বাংলাদেশের কুষ্টিয়া-রাজশাহী সীমান্ত বরাবর তাঁদের চলাচলও প্রায় অবাধ। বাম জমানায় ওই সব চরে সিপিএমের প্রভাব ছিল। কিন্তু পালা বদলের পরে সেখানে তৃণমূল প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। রাজ্যে বিজেপি’র প্রভাব বাড়ায় ওই চরের মানুষ কি এ বার বিজেপি’র দিকে ঝুঁকবে— এ প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ডোমকলের আনাচকানাচে।
স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা নিজেই কবুল করছেন, ‘‘বামেরা ক্ষমতা হারানোর পরে তৃণমূলেই ভরসা রেখেছিলেন সীমান্তের মানুষ। কিন্তু দলের সীমাহীন কোন্দল আর কাটমানির দাপটে তাদের উপরে আস্থা ক্রমশ হারাতে থাকেন তাঁরা। বিজেপি’র প্রভাব বাড়ায় এ বার তারা সে দিকেই ঝুঁকছেন।’’ তবে জেলা কংগ্রেসের এক নেতার দাবি, ‘‘মুসলিম প্রধান ওই সব এলাকার মানুষ আর যাই হোক বিজেপি’র সঙ্গে আঁতাত করতে পারবেন না। আবার তৃণমূলের উপরেও আর আস্থা রাখতে পারছেন না। বামেরা প্রায় শূন্য। এই অবস্থায় তাঁদের ভরসা হয়ে উঠতে পারে কংগ্রেস।’’
বিজেপি ব্যাপারটিকে অন্য ভাবে ব্যাখ্যা করছে— সীমান্ত জুড়ে পাচার আর অস্থিরতায় ব্যতিব্যস্ত মানুষ। তাই বিজেপি ক্ষমতায় এলে শান্তি মিলবে ভেবেই তাঁরা পদ্ম ফুলে আস্থা রাখবেন বলে মনে করছে তারা। জেলা বিজেপি নেতা শাখারভ সরকার বলছেন, ‘‘সীমান্তের সাধারণ মানুষের কাছেও এখন পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে গরু পাচারের মূল হোতা এনামুল হক তৃণমূলের মদতপুষ্ট। সেই এলাকায় সমস্ত অস্থিরতার মূলে। তাই মানুষ আমাদের দিকে ঝুঁকছেন।’’
তবে, এ কথাও ঠিক যে, বিজেপি দাবি করলেও জেলা পুলিশের গোয়েন্দারা মনে করেন, সীমান্তে পাচার এবং বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের আনাগোনা আবহমান কাল ধরেই চলে আসছে। যে রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, কম-বেশি অস্থিরতা সীমান্তে থেকেই গেছে। সেখানকার চরিত্রের সঙ্গেই তা মিশে গিয়েছে। তাই পাচার বন্ধ হওয়ার আশায় মানুষ বিজেপি’র দিকে ঝুঁকবে এমনটা আশা করা ভুল। বরং পাচার একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে এলাকার বহু মানুষের রুজিতেও যে পরোক্ষে টান পড়বে তা বেশ জানেন তাঁরা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy