রানাঘাট কাণ্ডের তদন্ত আদৌ সিবিআই করবে কি না, তা নিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল না নয়াদিল্লি। ফলে, রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ মহলে এ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের একাংশের ধারণা, বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনীর ধর্ষণ ও ডাকাতিতে জড়িত দুই অভিযুক্তকে বুধবার সিআইডি গ্রেফতার করার পরে সিবিআই আর এই তদন্তে আগ্রহ দেখাবে না।
রানাঘাট কাণ্ডের তদন্ত প্রথমে সিআইডি-র হাতে তুলে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু প্রথম চার-পাঁচ দিনে কোনও সাফল্য না মেলায় তদন্তভার সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। রাজ্য সরকার সিবিআই চাওয়ার পরে প্রাথমিক ভাবে ইতিবাচক ইঙ্গিতও মিলেছিল। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার কথায়, “সিবিআই-এর তরফে রাজ্য সরকারকে জানানো হয়েছিল, তাদের একটি দল কলকাতায় আসবে। কখন তারা আসবে, ওই দলটির থাকার কী ব্যবস্থা করতে হবে, তা-ও তারা লিখিত ভাবে জানিয়েছিল। রাজ্য সরকার তার প্রস্তুতি নিয়েও রেখেছে। কিন্তু সিবিআই-এর তরফে আর যোগাযোগ করা হয়নি।”
রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, গত ১৮ মার্চ রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা চিঠি (নম্বর: ৫৬৫/১(৩)-এইচএস/১৫)-র পরিপ্রেক্ষিতে ঠিক পরের দিন মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে চিঠি পাঠান সিবিআই-এর যুগ্ম অধিকর্তা এবং স্পেশাল আইজি নীনা সিংহ। ১৯ মার্চ তারিখের ওই চিঠি (নম্বর: সিবিআই/এসসিবি/এনডি/১৪৫৫)-তে সিবিআই-এর যুগ্ম অধিকর্তা জানান, রানাঘাটের ঘটনার জেরে গাংনাপুর থানায় করা এফআইআর (৩৮/১৫)-এর তদন্তভার তাঁরা হাতে নিচ্ছেন। আরও জানানো হয়, ২১ মার্চ সিবিআইয়ের একটি দল তদন্তের কাজে রানাঘাট যাবে। তদন্তকারীদের থাকার জন্য সল্টলেক বা ব্যারাকপুরে আসবাব-সহ পাঁচটি ঘর, প্রতিদিনের কাজের প্রয়োজনে রানাঘাটে দু’টি ঘর, চারটি গাড়ি, ব্রডব্যান্ড সংযোগ, এসটিডি এবং ফ্যাক্স-সহ একটি ল্যান্ডলাইন টেলিফোন এবং লেজার প্রিন্টার-সহ একটি কম্পিউটারের ব্যবস্থা
করতে বলা হয়। রাজ্যের সঙ্গে সিবিআই-এর যোগাযোগের জন্য এক জন ‘লিয়াজঁ’ অফিসারও নিয়োগ করতে বলে সিবিআই।
স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার কথায়, “ওই চিঠি পাওয়ার পরে আমরা ধরেই নিয়েছিলাম, সিবিআই রানাঘাট-কাণ্ডের তদন্ত করবে। কেন্দ্রের সবুজ সঙ্কেত পেলে যে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হয়, তার খসড়াও আমরা তৈরি করে রেখেছি।” কিন্তু ঘটনা হল, ওই ১৯ তারিখের চিঠির পর থেকেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে কার্যত কোনও যোগাযোগ করেনি সিবিআই।
কেন এখনও তদন্তভার নিল না সিবিআই?
নবান্নের শীর্ষ স্তরের কর্তাদের একাংশই এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁদের মতে, রানাঘাটে যে ধরনের অপরাধ হয়েছে, সিবিআই যদি তার তদন্ত হাতে নেয়, তা হলে স্থানীয় প্রশাসনের আর কিছুই করার থাকে না। বস্তুত, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারাও জানাচ্ছেন, সিবিআই-এর একাংশ এই ঘটনার তদন্ত হাতে নিতে রাজি নয়। তাঁরা মনে করছেন, এক বার এই ধরনের ডাকাতি বা ধর্ষণের তদন্ত সিবিআই হাতে নিলে তা একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করবে। সে ক্ষেত্রে দেশের যে কোনও প্রান্তে একই ধরনের ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট রাজ্য তদন্তভার সিবিআই-এর হাতে তুলে দিতে চাইবে। কিন্তু এই সব ঘটনার তদন্ত করা সিবিআইয়ের কাজ নয়।
এই যুক্তির উত্তরে পাল্টা যুক্তি অবশ্য দিচ্ছেন রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের কোনও কোনও কর্তা। তেমনই এক জনের কথায়, “উত্তরপ্রদেশের বদায়ূঁ ধর্ষণ কাণ্ডের তদন্তও তো সিবিআই করেছিল। সেটা স্থানীয় অপরাধই ছিল। রানাঘাটের ঘটনা তো তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তা ছাড়া, অপরাধীদের বেশির ভাগই বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছে বলেই সন্দেহ করা হচ্ছে। এই সব ক্ষেত্রে সিআইডি-র থেকে সিবিআই অনেক বেশি কার্যকর হয়।”
উঠে আসছে আর এক তথ্যও। সরকারি সূত্রের খবর, সিবিআই চেয়ে নবান্নের পক্ষ থেকে কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানানোর পর তার উত্তর এসেছিল ঠিকই। কিন্তু পরে কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ দফতরের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, ওই আবেদন নিয়মমাফিক হয়নি। যদিও নবান্নে সিবিআই-এর যুগ্ম অধিকর্তার চিঠিও এসেছে। কিন্তু মূল সমস্যা হল, আগামী দিনে যে সিবিআই ওই তদন্তের ভার নেবে, এমন ইতিবাচক কোনও ইঙ্গিত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy