Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Bus Accident

জলঙ্গির বাঁকে থমকে আছে ২২ বছর আগের ভোরবেলা

জলঙ্গির সেই বাঁকের মুখে এখনও হাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দেয় বাস। ২২ বছরে কোনও বদল ঘটেনি।

বিষাদ-স্মৃতি: ১৯৯৮ সালের ১৩ জানুয়ারির দুর্ঘটনার প্রতিবেদন।

বিষাদ-স্মৃতি: ১৯৯৮ সালের ১৩ জানুয়ারির দুর্ঘটনার প্রতিবেদন।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
জলঙ্গি শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৫০
Share: Save:

জলঙ্গির সেই বাঁকের মুখে এখনও হাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দেয় বাস। ২২ বছরে কোনও বদল ঘটেনি। আধ-ময়লা শ্বেত পাথরের ফলকে ৬২ জনের গায়ে শুধু পুরু ধুলোর আস্তরণ জমেছে যেন!

রমজান মাস, ঘন কুয়াশায় মোড়া ভোরেও সেহরি খেয়ে কাজে বেরিয়েছিলেন কেউ। ভোরবেলা মাছের দেখা পাওয়া যায় ভেবে জনাকয়েক ধীবর নৌকা নিয়ে নেমেছিলেন পদ্মায়। সে-ও এক ১৩ জানুয়ারি।

বিকট শব্দ করে পদ্মার দিকে ছুটে গিয়েছেল পিকনিক ফেরত ছাত্রছাত্রীদের বাস। হাড় হিম শীতের ঘেরাটোপে কুয়াশায় অস্পষ্টতায় কিছু বুঝে ওঠার আগেই পদ্মার কোলে তলিয়ে গিয়েছিল সেই বাস। জেলা পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, ৭৫ জন ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাস ডুব দিয়েছিল নদীতে। মারা গিয়েছিলেন ৬২ জন। যাঁদের অধিকাংশের বাড়ি ছিল পড়শি নদিয়ার করিমপুরে।

শীতের কুয়াশায় জলঙ্গির পদ্মা পাড়ের গ্রামে এখনও সেই ভোর চলকে ওঠে অনেকের বুকে। রহিমা বিবি বলছিলেন, ‘‘রমজান মাস, সেহরি খেয়ে লেপের মধ্যে সবে ঢুকেছি। হঠাৎ একটা শব্দ, ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লাম। ততক্ষণে আরও জনা কয়েক প্রতিবেশী ছুটে এসেছে সেখানে। দেখছি ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে বাসটা। কিছুই করতে পারছি না, শুধু পাড়ে দাঁড়িয়ে ডুবতে থাকা বাসের ছেলেগুলোর চিৎকার শুনছি!’’

উদ্ধারের কিছু স্মৃতিও ছড়িয়ে আছে আশপাশের গ্রামে। শহিদুল ইসলামের এখনও মনে আছে ছেলেটির মুখ, ‘‘পদ্মা পাড়ে এলে চোখ বুজলেই দেখতে পাই— ছেলেটার গলা কাঁপছিল, কিছু বলতে চাইছিল বোধহয়। একটু গরম দুধ খাওয়াতে গেলাম, ঢলে পড়ল!’’

এমনই কয়েক জনকে উদ্ধার করে হাত-পা আগুনে সেঁকে তেল মাখিয়ে গরম দুধ খাইয়ে পাঠানো হয়েছিল গ্রামীণ হাসপাতালে। কিন্তু বাকিরা? বাস ততক্ষণে তলিয়ে গেছে শীতের পদ্মায়। ১৯৯৮’র সেই ১৩ জানুয়ারির পরে ৩০০ মিটার পদ্মা-পাড় জুড়ে দেওয়াল। সেই দেওয়ালে এখনও যেন মাথা কুটে মরে বাইশ বছর আগের এক ভোরবেলা।

সেই স্মৃতিই বয়ে এনেছিল ভান্ডারদহ বিল। দু’বছর আগে সেই বিলের কালো জলে একই ভাবে তলিয়ে গিয়েছিলেন ৪৪ জন। দৌলতাবাদের বালিরঘাট সেতুর উপর থেকে ছিটকে পড়ে যাওয়া সেই বাসের কথা মনে পড়লে এখনও গায়ে কাঁটা দেয় সমীর দাসের। স্থানীয় ওই বাসিন্দা বলছেন, ‘‘মানুষগুলো ছটফট করছে, কিন্তু কিচ্ছু করতে পারছি না, সে এক ভয়াবহ সকাল!’’

এখনও শীতের কুয়াশা সেই সব দিন মনে পড়িয়ে দেয় পরিবহণ দফতরের এক কর্তাকে। বলছেন, ‘‘কুয়াশায় দুর্ঘটনার যেন শেষ নেই। জেলার আনাচ কানাচে ঘটেই চলেছে। এই সময়টা আমরা সত্যিই কাঁটা হয়ে থাকি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bus Accident River Padma Jalangi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE