Advertisement
০২ মে ২০২৪

মাঠে ফিরেই ঢেলে সাজার ইঙ্গিত মহুয়ার

দিল্লি থেকে ফিরেই পুরনো মেজাজেই এলাকা এলেকা চষে ফেলতে শুরু করেছেন মহুয়া।

সংগঠনের রাশ নিজের হাতে নেওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেন মহুয়া মৈত্র। ফাইল চিত্র

সংগঠনের রাশ নিজের হাতে নেওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেন মহুয়া মৈত্র। ফাইল চিত্র

নিজস্ব  প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৯ ০০:১৮
Share: Save:

লোকসভা ভোটে জিতে সেই যে তিনি দিল্লি চলে গিয়েছিলেন, তাঁর টানা অনুপস্থিতির জেরে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করছিল দলেই। জেলায় ফিরে সংগঠনের রাশ নিজের হাতে নেওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেন সাংসদ তথা তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহুয়া মৈত্র। তবে তা নানা স্তরের নেতারা কী ভাবে নেবেন, তা নিয়ে দলেই কানাঘুষো চলছে।

তৃণমূলের একাংশের আশঙ্কা, নতুন জেলা কমিটি গড়ে মহুয়া এমন কাউকে-কাউকে বাদ দিতে পারেন, যাঁরা এত দিন সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন। কারণ তাঁরা কেউ হয়তো সাসংদের ঘনিষ্ঠ নন বা শারীরিক কারণে সে ভাবে সক্রিয় নন। কারা সেই তালিকায় থাকতে পারেন তা নিয়েও জল্পনা চলছে।
তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি হওয়ার সুবাদে মহুয়া প্রত্যাশিত ভাবেই এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি সাংগঠনিক দিকও ঢেলে সাজাবেন। বিশেষত বিজেপি যেখানে মাথা তোলার মরিয়া চেষ্টা করছে, সেখানে বিধানসভা ভোটের আগে তা না করে উপায়ও নেই। ফলে সক্রিয় ও নতুন প্রজন্মের পরিশ্রমী নেতারা নতুন জেলা কমিটিতে ঠাঁই পেতে পারেন বলে মহুয়ার ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি।

লোকসভা ভোটের পরে দিল্লিতে সংসদের অধিবেশন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় নিজের কেন্দ্রে সে ভাবে সময় দিতে পারেননি মহুয়া। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে দলের মধ্যে ক্ষোভও জানাচ্ছিলেন বিধায়কদের কেউ-কেউ। কোনও কোনও নেতা-বিধায়ক আবার প্রকাশ্যেও মুখ খুলছিলেন।

সম্ভবত সেই কারণেই দিল্লি থেকে ফিরেই পুরনো মেজাজেই এলাকা এলেকা চষে ফেলতে শুরু করেছেন মহুয়া। এরই মধ্যে তিনি পলাশিপাড়া, নাকাশিপাড়া, কালীগঞ্জ বিধানসভা এলাকায় বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতে আচমকা হাজির হয়েছেন। কোথাও গিয়ে সরেজমিন দেখেছেন রাস্তার হালহকিকত। দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে বৈঠক করেছেন ব্লক নেতৃত্বের সঙ্গে। বুধবার তিনি কালীগঞ্জের বিভিন্ন পঞ্চায়েতের প্রধান, অঞ্চল সভাপতি ও বুথ সভাপতির সঙ্গে বৈঠক করেন। লোকসভা ভোটে ভাল ফলের জন্য তিনটি অঞ্চলকে পুরস্কারও দেন। তিন বুথ নেতৃত্বকেও পুরস্কৃত করেন। তবে সেই সঙ্গেই জেলা নেতাদের একাংশের কাজকর্ম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করতে শোনা গিয়েছে তাঁকে।

তৃণমূলেরই একটি সূত্রের দাবি, একটি সভায় মহুয়া কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের নেতৃত্বের প্রতিও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ‘নিষ্ক্রিয়’ কাউকে জেলা কমিটিতে রাখবেন না বলেও তিনি জানিয়ে দেন। পরে বেথুয়াডহরিতে গিয়ে নাকাশিপাড়া ব্লক কমিটি গঠন নিয়েও বেশ কিছু নির্দেশ দেন তিনি। দলের মধ্যে মহুয়া-বিরোধী বলে পরিচিত একটি অংশের আশঙ্কা, ভোটের সময়ে যে সব নেতা-বিধায়কের সঙ্গে মহুয়ার দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, এ বার তাঁদের উপরে কোপ পড়তে পরে।

মহুয়ার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, কালীগঞ্জের বিধায়ক হাসানুজ্জামান শেখের বক্তব্য, “সংসদ অধিবেশনে থাকার সময়েও উনি আমাদের দিশা দেখিয়েছেন। তাঁকে পাওয়া যাচ্ছিল না, এটা ঠিক নয়।” সেই সময়ে যাঁরা মহুয়ার নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না বলে আক্ষেপ করছিলেন, তাঁদের অন্যতম পলাশিপাড়ার বিধায়ক তাপস সাহা এখন বলছেন, “উনি যে এলাকায় গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন, এটা খুবই ভাল।” তবে নাকাশিপাড়ার বিধায়ক কল্লোল খাঁ বৃহস্পতিবারও বলেন, “মহুয়া মৈত্র ফিরে আসার পরেও আমার সঙ্গে তাঁর কোনও কথা হয় নি। আমার বিধানসভা এলাকায় কোথায় তিনি কী কর্মসূচি নিচ্ছেন, আমি জানতে পারিনি।” একাধিক বার চেষ্টা করেও মহুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে এটা যে শুধু কল্লোল নয় বরং তাঁর মতো আরও কয়েক জনের মনের কথা, তা তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mahua Moitra Loksabha Election 2019 TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE