রুপোলি জল আবার ডানায় ঢেকেছে।
পৌষ শীতের আগেই শুরু হয়েছিল আনাগোনা, মাঘের রোদ্দুরে ভরে গিয়েছিল বিল। বছর তিনেক পরে ওরা আবার এসেছে, পিনটেল, লেসার হুইশলিং ডাক, সাইবেরিয়ান ডাক সুদূর তাইগা থেকে ওরা ঝাঁক বেধে আবার ভরিয়ে দিয়েছে ফতাইপুরের বিল। হিমালয়ের নিথর হ্রদগুলি থেকেও নেমে এসেছে অনেকে। সঙ্গে মুরহেন, জ্যাকনা, ডাহুক, জলপিপির ভরাট সংসার।
তেহট্টের ওই বিস্তীর্ণ বিলে পরিযায়ীদের আনাগোনা নতুন নয়। তবে বছর কয়েক ধরে গ্রামবাসীদের একাংশের দৌরাত্ম্যে মুখ পিরিয়ে হারিয়েই গিয়েছিল তারা। গত তিন বছর ধরে ফচাইপুরের জনা তাই খাঁ খাঁ করত। সকাল-বিকেল অতিথি পাখির সোল্লাশে যে জলাশয় থই থই করত, তিন-তিনটে বছর ধরে তা চুপ করে পড়েছিল।
এ বার তাই প্রথম থেকেই সতর্ক ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রীতিমতো রাত পাহারা বসিয়ে জলাক ধারে ঘেঁষতেই দেননি অবাঞ্ছিত কাউকে। ফলও পেয়েছেন হাতেনাতে। নভেম্বরের গোড়া তেকেই আসতে শুরু করেছিল পরিযায়ীরা। ফতাইপুরের বাসিন্দা আমোদ আলি সেখ বলেন, “ফতাইপুরের দামোস বিল ওদের হুটোপুটিতে ভরে থাকত। সেই আওয়াজটাই হারিয়ে গিয়েছিল বছর কযেক ধরে। গ্রামের একাংশ পাখি মেরে বাজারে বিক্রির ব্যবসা শুরু করায় পাখিরা মুখ ফিরিয়েছিল। এ বার তাই প্রথম থেকেই সতর্ক ছিলাম আমরা।’’ তাঁরা জানাচ্ছেন, ওই বিলে মাছ চাষ করে শ্যামনগর-ছিটকা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি। সমিতির পক্ষ থেকে প্রথম থেকেই বোঝানো হচ্ছিল, পাখি মারলে গ্রামের লোকই শাস্তি দেবে। সমিতির সম্পাদক অচিন্ত্য মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রায় ৫৬ একরের জলাশয়। বিলে পাখি আসা বন্ধ হয়ে যেতেই বড় ফাঁকা লাগত আমাদের। এ বার তাই শুরু থেকেই প্রচার শুরু করি আমরা। সঙ্গে ভয়ও দেখিয়েছি।’’ কাজ হয়েছে তাতেই। স্থানীয় বিট অফিসার অনুকুল রায় মেনে নিয়েছেন সাধারনের প্রয়াস, বলছেন, ‘‘সরকারি নির্দেশে সবসময় যা করা সম্ভব হয়নি গ্রামের মানুষ তা করে
দেখিয়েছেন।’’
ছবি: কল্লোল প্রামাণিক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy