কৈশোরে তাঁর প্রথম আসা বন্ধু দঙ্গল নিয়ে, বেড়াতে। তবে, তার পরে গ্রাম বাংলার এই প্রান্তিক জেলায় তাঁর আনাগোনা আর ঢিলেঢালা পাজামা পরে সিরাজের সমাধিক্ষেত্র দেখার পর্যটক হয়ে নয়, রাজনীতির শিক্ষক, সংগ্রাহক, পর্যবেক্ষক কিংবা প্রচারক হিসেবে। তবে পূর্ণ বয়সে সুভাষের এ জেলায় পদার্পণ জেলবন্দি হিসেবে। হ্যাঁ, গ্রেফতারের পরে বহরমপুরের তদানীন্তন জেলেই ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। স্থানীয় পত্র-পত্রিকা, সরকারি গেজেট, পুরনো স্মৃতি হাতড়ে খোঁজ মিলছে, অন্তত বারো বার এ জেলায় এসেছেন সুভাষ।
তাঁর প্রথম পা, ১৯১৩-১৪ সালে। তখন তিনি নিতান্তই বছর ষোলোর স্কুল ছাত্র। এসেছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে সিরাজের সমাধিক্ষেত্র দেখতে।
‘আলোকপাত’ নামে প্রবন্ধ সংকলন গ্রন্থে ‘মুর্শিদাবাদে নেতাজি’ শীর্ষক লেখা থেকে জানা যাচ্ছে, সুভাষচন্দ্র বহরমপুরে এসেছিলেন ১৯১৩-১৪ সালের পরে ১৯২৩ সালে। তাঁকে সে বার রাজবন্দি হিসেবে বহরমপুর জেলে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল।
ওই সময়ের সেই জেলে তাঁকে ৭ নম্বর ঘরে বন্দি করে রাখা হয়। তাঁর উদ্যোগে ওই ডিস্ট্রিক্ট জেলে প্রথম দুর্গাপুজো হয়। সেই পুজো এখন ফি বছরের নিয়ম। তবে বহরমপুরের সেই জেলখানা এখন বদলে গিয়েছে, মানসিক হাসপাতালে।
পরে ১৯৩১ সালে ফের এসে গিয়েছিলেন কিশোরবেলার সেই সিরাজ-সমাধি দেখতে। সমাধি ক্ষেত্রে যাওয়ার পথে গঙ্গার ধারে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছিলেন সুভাষ। লোকসংস্কৃতি গবেষক পুলকেন্দু সিংহ তাঁর ‘মুর্শিদাবাদে সুভাষ’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘‘সেই গঙ্গায় দাঁড়িয়ে সুভাষচন্দ্র বসু গেয়েছিলেন, ‘এই গঙ্গায় ডুবিয়াছে ভাই ভারতের দিবাকর হে-/ উদিবে সে রবি আমাদের খুনে রাঙিয়া পুনর্বার হে।’ সময় পেরিয়ে যাচ্ছিল, তাঁর সঙ্গে যাঁরা ছিলেন তাঁরাই মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। ফেরার ট্রেনের সময় হয়ে আসছে। কিছুটা অনিচ্ছা নিয়েই সে বার ফিরেছিলেন তিনি।
জঙ্গিপুরে তিনি রাজনৈতিক সভা করতে ১৯২৭, ১৯৩৭ ও ১৯৩৯, তিন বার এসেছিলেন। বহরমপুরে ১৯৩১ সালে কংগ্রেসের বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনে এসে শহরের মাঝেই করেছিলেন সভা। নেতাদের একটি অংশের চক্রান্ত ব্যর্থ করে সেখানে তিনি বক্তৃতাও দেন।
১৯৩৯ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচন। জিয়াগঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী তাজ বাহাদুর দুগরের হয়ে তিনি নির্বাচনী প্রচারে এসে যা বক্তৃতা দিয়েছিলেন তা পরের প্রজন্ম মনে রেখেছিল। সে বার, রাজা সুরেন্দ্রনারয়ণ সিংহকে হারিয়ে তাজ বাহাদুর বিপুল ভোটে জয়ী হন। সে বার তাঁকে জিয়াগঞ্জ থেকে রুপোর তরবারি উপহার দেওয়া হয়েছিল। তথ্য বলছে— তা ঘুরিয়ে দেখে হা হা করে হেসে উঠেছিলেন সুভাষ।
১৯৩১ সালে ২ জানুয়ারি বেলডাঙার সভায় যোগ দিতে গিয়েছিলেন তিনি। বেলডাঙা পুরাতন বাজারের হাজরা বাড়ির প্রাঙ্গণে তাঁর সভামঞ্চ হয়। তাঁর আগমন উপলক্ষে তাঁকে সম্মান জানাতে শহর জুড়ে ফুলের মেলা বসে গিয়েছিল। তৈরি হয় তোরণও। শেষ বার বীরভূম ছোঁয়া কান্দির গোকর্ণ আর বড়ঞার পাঁচথুপিতেও এসেছিলেন সুভাষচন্দ্র।
শোনা যায়, রাজনীতির প্রচারের পাশাপাশি তহবিল সংগ্রহের প্রয়োজনে সে বার জেলার অনেকের কাছেই দরবার করেছিলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy