পাশে থাকা: গণেশ রবিদাসের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে। বৃহস্পতিবার অরঙ্গাবাদের মোমিনপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র
ধর্মের নামে হনন আত্মহননের আবহে দিন কয়েক আগে, গণেশ রবিদাসের মৃতদেহে কাঁধ লাগিয়েছিলেন তাঁরা। সুতির জগতাই শ্মশানে দাঁড়িয়ে থেকে তাঁরাই সৎকারের যাবতীয় ব্যবস্থা করেছিলেন।
সেই অরঙ্গাবাদের মোমিনপাড়ার ইমাম আর কয়েকশো সংখ্যালঘু মানুষ, বৃহস্পতিবার ফের গড়লেন সম্প্রীতির জ্বলজ্বলে নিদর্শন। গণেশবাবুর পারলৌকিক ক্রিয়াতেও একই ভাবে এগিয়ে এসে সব সামলে দিলেন তাঁরাই। শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে গণেশবাবুর বছর দশেক বয়েসী ছেলের পাশেই তাঁরা বসে রইলেন দিনভর।
৮ জুলাই সকালে মোমিনপাড়া গ্রামে নিজের বাড়িতেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় গণেশ রবিদাসের। বাড়িতে স্ত্রী, চার মেয়ে, আর বছর দশেকের ছেলে আনন্দ। সেই অসহায় শোকগ্রস্ত পরিবারের পাশে সে দিন দাঁড়িয়েছিলেন মোমিনপাড়ার পড়শি সংখ্যালঘুরা।
বৃহস্পতিবার ছিল তারই পারলৌকিক ক্রিয়া। সকাল থেকেই সেখানে হাজির গ্রামের মসজিদের ইমাম থেকে আশপাশের মুসলিম প্রতিবেশিরা। পারলৌকিক ক্রিয়ায় সাহায্যের হাত বাড়ালেন সকলেই। তাদের বাড়ানো সাহায্যেই পরিবারের সকলের জন্য এল নতুন বস্ত্র, শ্রাদ্ধাদির যাবতীয় উপকরণ। মৃতের আত্মার শান্তি কামনায় অতিথি আপ্যায়নে এল চাল, ডাল আনাজপাতিও।
এক দিকে চলল শ্রাদ্ধাদি ক্রিয়া, অন্য দিকে রান্নাবান্না। অতিথি বলতে বাড়িতে আসা আত্মীয় পরিজনেরা মিলিয়ে জনা ৫০। তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া ১০ বছরের পুত্র আনন্দ’ই সারলেন শ্রাদ্ধ। তাকে সারাক্ষণ আগলে রইলেন গ্রামেরই মোড়ল মহম্মদ জামাল হোসেন।
জামাল বলেন, ‘‘গণেশ ছিল আমার ভাইপোর মত। গরীব পরিবার। ওইটুকু ছেলে যার আনন্দে মাঠে ঘাটে খেলে বেড়ানোর কথা সেই ছেলেকেই মুখাগ্নি করতে হয়েছে বাবার। মাথা মুড়িয়ে বসতে হয়েছে পারলৌকিক অনুষ্ঠানে। তাই শ্মশানে সতকারের মতই এদিনও পরিবারের পাশে থেকেছি সকলে। আমরা তো ওদের পড়শি রে বাবা!’’
মসজিদের ইমাম মহম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, “বহুদিন এক সঙ্গে গ্রামে আছি। এত সম্প্রীতির পরিবেশ কোথাও দেখিনি। আমাদের দায়িত্ব মনে করেই গ্রামের সকলেই এসেছেন। দেহ সৎকার থেকে পারলৌকিক কাজ সবেতেই হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সংখ্যালঘুরা। এটাই তো কাম্য।’’
পারলৌকিক কাজ সারতে এসেছিলেন ব্রাহ্মণ পুরোহিত মিঠুন ঠাকুর। তিনি বলছেন, “ধর্মের অনুশাসন ছাড়িয়ে এমনতর সাহায্য আমার স্মরণে পড়ে না। আর্থিক দান ধ্যান তো অনেকেই করেন। কিন্তু বিপদের দিনে এভাবে পাশে থাকাটাই সবচেয়ে বড় কাজ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy