বিনা কর্ষণে ধান, গম চাষ করে সাফল্য পাচ্ছেন চাষিরা। ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলক ভাবে সফলও হয়েছে এই পদ্ধতি। এবারে ভুট্টা, সর্ষে, মসুর এবং পাটেও বিনা কর্ষণে চাষে সাফল্য আশা করছে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ওই চাষে কৃষকদের কী ভাবে আরও বেশি লাভের মুখ দেখানো যায়, সে জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে কৃষি বিজ্ঞানীদের ১৩ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল কোচবিহারে আসবেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁরা যাবেন মালদহেও।
ওই দলে থাকবেন ফিলিপাইনসের আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী রোনাল্ড ডুরেজ। ৯ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখবেন তাঁরা। সরাসরি কথা বলবেন কৃষকদের সঙ্গে। পরের দু’দিন উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আলোচনাচক্র হবে। সেখানেও যোগ দেবেন বিজ্ঞানীরা। আগামী ২৭ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি মালদহে পরিদর্শন চালাবে দলটি।
উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অপূর্ব চৌধুরী বলেন, “কোচবিহার ও মালদহ দুই জায়গাতেই পরীক্ষামূলকভাবে বিনা কর্ষণে চাষ করে আমরা সফল হয়েছি। অনেক কৃষক আগ্রহী হয়েছেন। আগামী দিনে এই পদ্ধতিতে চাষ করার পরামর্শ দেওয়া হবে কৃষকদের। তার আগে চাষের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা রয়েছে কিনা তা দেখতে এবং আরও কী ভাবে চাষের খরচ কমানো যায় তা নিয়ে কৃষি বিজ্ঞানীরা পরামর্শ দেবেন।”
কোচবিহার মূলত কৃষি প্রধান এলাকা। জেলার অধিকাংশ বাসিন্দা কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। জেলায় ধান, পাট, তামাক প্রধান চাষ। জেলায় ২ লক্ষ হেক্টরের বেশি জমিতে ধান চাষ হয়। পাট চাষ হয় প্রায় ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে। তামাক চাষের পরিমাণও ৫০ হাজার হেক্টরের মতো। বর্তমানে চাষের খরচের সঙ্গে পেরে ওঠা যাচ্ছিল না বলে কৃষকদের একাংশের অভিযোগ। কৃষি শ্রমিকের সমস্যাও একটা বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে কৃষকদের দাবি। পাট চাষের পরিমাণ প্রতি বছরই কয়েক হাজার হেক্টর করে কমছে। এই পরিস্থিতিতে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে বিনা কর্ষণে চাষ শুরু হয়। বিদেশ থেকেও ওই চাষে সহযোগিতা করা হয় বলে জানা গিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, কোচবিহার ও মালদহ মিলিয়ে চলতি বছরে প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে বিনা কর্ষণে ধান, গম, ভুট্টা, সর্ষে, মসুর কলাই চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগটাই ধান। কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকেই ১০০ বিঘা জমিতে বিনা কর্ষণে ধান চাষ করা হয়েছে। আগামী খারিফ মরসুমে পাট-সহ আরও বিভিন্ন চাষের পরিকল্পনা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গত কয়েক বছর ধরে জেলায় ভুট্টা চাষ বাড়ছে। ভুট্টার চাহিদা রয়েছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। সে কারণে ভুট্টাকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই উদ্যোগে সামিল হয়েছে কৃষি দফতরও। কোচবিহার ১ নম্বর ব্লক কৃষি আধিকারিক রজত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিনা কর্ষণে চাষে আমরা ইতিমধ্যে ধানের ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান পেয়েছি। তাতে এক বিঘা জমিতে ৬ থেকে ৮ মন ফলন বেশি পাচ্ছেন কৃষকরা। কোনও ক্ষেত্রে সেই পরিমাণ আরও বেশি। গম সহ অন্য ফসলের ক্ষেত্রেও এখন পর্যন্ত যা রিপোর্ট রয়েছে, তা সফল হবে।” ঘুঘুমারির কৃষক ফজলে রহমান জানিয়েছেন, তিনি এবারে বিনা কর্ষণে চার বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। প্রতি বিঘাতে প্রায় দশ মন ফলন বেশি পেয়েছেন। অপূর্ববাবু বলেন, “এই পদ্ধতিতে চাষে কম খরচের সঙ্গে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষাও সম্ভব হয় সে সবও পরীক্ষা করে দেখবেন বিদেশের বিজ্ঞানীরা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy