পিটিআইয়ের তোলা প্রতীকী ছবি।
রাস্তার ধারে আমার একটা ছোট্ট চায়ের দোকান রয়েছে। কিন্তু ওই দোকানের ভরসায় তো সংসার চলে না, তাই লটারিও বিক্রি করি। দু’টো মিলিয়ে কোনও ভাবে চলে যাচ্ছিল। কিন্তু এখন লটারির ব্যবসা পুরোপুরিই বন্ধ। লকডাউনের প্রথম দু’-একদিন চায়ের দোকান খুলেছিলাম। কিন্তু লোকে তো এখন রাস্তাতেই বেরোচ্ছে না, চা খেতে আর কেই বা আসবে। তারপর প্রশাসন থেকেও বলা হল দোকান বন্ধ করতে। তাই সেটারও ঝাঁপ বন্ধ। এখন তিন ছেলে-মেয়েকে কী খেতে দেব, চার জনের কী ভাবে চলবে—কিছুই জানি না। এক-একটা দিন যেন কাটতেই চাইছে না। আর এক দিন খাবার পেলেও পরদিন কী খাব, মাথায় সেই চিন্তা ঘুরতে থাকে।
প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে চোখ খুললেই প্রথমেই মনে হয় সেদিন কী কী খরচ হতে পারে। যতই টাকা কম খরচের চেষ্টা করি না কেন, সারা দিনে দুশো টাকার বেশি খরচ হয়েই যাচ্ছে। আর শুধু তো খেলেই হয় না, আরও খরচ থাকে। স্বামী মারা গিয়েছেন কয়েক বছর আগে। মাথার উপরে আর কোনও অভিভাবকও নেই। তখন থেকেই আমিই সংসারের হাল ধরেছি। তবে থেকেই লড়াই চলছে। অনেক খারাপ সময় এসেছে, কিন্তু এ বারে কী ভাবে সামলাব বুঝতেই পারছি না। রোজ সকালে উঠে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকি। দোকান খুলব ভাবি, কিন্তু তাতেও তো লাভ নেই, পুলিশ এসে বন্ধ করে দেবে।
সেদিন দেখলাম হাঁড়িতে কিছুটা চাল রয়েছে। সেটায় হয়ত ক’টা দিন চলে যাবে। কিন্তু আনাজ কিনতে গিয়ে জমানো টাকায় হাত দিতে হচ্ছে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েকে মাছ কিনে খাওয়াবো—সেই সামর্থ্যও নেই। তবে এ ভাবে আর কিছু দিন চললে সব জমানো টাকা শেষ হয়ে যাবে। তখন তো লকডাউন উঠলেও ব্যবসার পুঁজি থাকবে না। তখন কী করে চলবে—ভাবলেই শিউরে উঠি। আমার তো করোনাভাইরাস নিয়ে যা আতঙ্ক রয়েছে তার চেয়েও বেশি ভয় লাগছে তার পরের দিনগুলি নিয়ে। আর কতদিন এ ভাবে চলবে। বেশি কিছু ভাবতেও এখন ভয় লাগছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy