Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Malda

বিয়েতে সম্প্রীতির ছবি কাজ হারানো পরিবারে

তিন বছর আগে বুল্টির বাবা মহাদেব মারা যান। সংসারের হাল ধরেন মা অর্চনা। অর্চনার চার ছেলেমেয়ের মধ্যে বুল্টি দ্বিতীয়।

মিলেমিশে: বুল্টি ও পবিত্রর সঙ্গে আলমগীর, মিরাজরা। নিজস্ব চিত্র

মিলেমিশে: বুল্টি ও পবিত্রর সঙ্গে আলমগীর, মিরাজরা। নিজস্ব চিত্র

অভিজিৎ সাহা
বৈষ্ণবনগর শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২০ ০৫:২৪
Share: Save:

ছাদনাতলা থেকে অতিথি আপ্যায়ন, এমনকী খরচ জুগিয়ে হতদরিদ্র সিংহ পরিবারের মেয়ের বিয়ে দিলেন আলমগীর খান, আবদুল্লাহ আল রাজী, মিরাজ বিশ্বাসরা। রবিবার সম্প্রীতির এমনই ছবি দেখা গেল মালদহের বৈষ্ণবনগর থানার হঠাৎপাড়া গ্রামে। আলমগীর, আবদুল্লাহরা পাশি দাঁড়িয়ে থেকে মেয়ের বিয়ে দেওয়ায় আপ্লুত বুল্টি সিংহের পরিবারের লোকেরা।

তিন বছর আগে বুল্টির বাবা মহাদেব মারা যান। সংসারের হাল ধরেন মা অর্চনা। অর্চনার চার ছেলেমেয়ের মধ্যে বুল্টি দ্বিতীয়। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। অন্যের জমিতে টিনের ছাউনি দেওয়া বাড়িতে সপরিবার থাকেন অর্চনা। বিড়ি বেঁধে চলে সংসার। মাকে সাহায্য করেন বুল্টিও। সম্প্রতি, বুল্টির সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় কালিয়াচকের দুই শতবিঘি গ্রামের পবিত্র সিংহের। তিনি ভিন্ রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। বিয়েতে কোন দাবিদাওয়া ছিল না পবিত্রের।

সিংহ পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বিড়ি বেঁধে কোনও রকমে সংসার চলত অর্চনার। লকডাউনে সেই কাজও বন্ধ। এমন অবস্থায় মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান করা সম্ভব ছিল না অর্চনার। সে কথা জেনে পাশে দাঁড়ান কালিয়াচকেরই একদল যুবক। তাঁদের বেশিরভাগই কলেজ পড়ুয়া। বিয়ের খরচ জোগানোর জন্য সোস্যাল মাধ্যমে সাহায্যের আর্জি জানান তাঁরা। তাঁদের দাবি, তাতে অনেকেই পাশে দাঁড়িয়েছেন। সেখান থেকে জোগাড় হওয়া টাকা বুল্টির পরিবারের হাতে তুলে দেন আলমগীর, আবদুল্লাহ, মিরাজরা।

শুধু তা-ই নয়, বিয়ের দিন সকাল থেকেই যাবতীয় কাজের তদারকি করেন তাঁরা। বাড়ির উঠোনে কলাগাছ দিয়ে ছাদনাতলা তৈরি করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়। একই সঙ্গে বিয়ের রাতে বরপক্ষ এবং আত্মীয়-স্বজনদের খাওয়ানোর ব্যবস্থাও করেছিলেন ওই যুবকেরা। নিজেরাই পরিবেশন করেন। খাবারে ছিল ভাত, ডাল, তরকারি, মাছ এবং শেষ পাতে মিষ্টি। ৫০ জনকে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান হয় বলে জানান আলমগীরেরা। তাঁরা বলেন, “সামাজিক দূরত্ব মেনেই বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছে। সকলেরই মুখে মাস্ক ছিল। এছাড়া স্যানিটাইজ়ারেরও ব্যবস্থা ছিল। বুল্টি আমাদের বোনের মতো। ওর পাশে দাঁড়াতে পেড়ে ভাল লাগছে।” অর্চনা বলেন, “অভাবের সংসারে সামান্য অনুষ্ঠানটুকু করার স্বপ্ন ছিল। আলমগীর, মিরাজেরা পাশে না দাঁড়ালে তা স্বপ্নই থেকে যেত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Malda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE