Advertisement
০২ মে ২০২৪

ডাক্তার কোথায় জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে

রোগীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিনশো। চিকিৎসক একজন। সেই সঙ্গে আবার সামলাতে হয় বহির্বিভাগও

শুনশান: সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের বহির্বিভাগ। জলপাইগুড়ি। নিজস্ব চিত্র

শুনশান: সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের বহির্বিভাগ। জলপাইগুড়ি। নিজস্ব চিত্র

অনির্বাণ রায়
  জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৩১
Share: Save:

রোগীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিনশো। চিকিৎসক একজন। সেই সঙ্গে আবার সামলাতে হয় বহির্বিভাগও। একজন চিকিৎসককে দিয়ে এত কাজ করানো সম্ভব নয় জেনে কর্তৃপক্ষ সপ্তাহে তিন দিন বাদ দিয়ে বাকি দিনগুলিতে মেডিসিন বিভাগের বহির্বিভাগ বন্ধ করে দিয়েছে। এমনই অবস্থা জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। মেডিসিনের সঙ্গে অর্থোপেডিক এবং সার্জারি বিভাগেও চিকিৎসকের সঙ্কট রয়েছে। সুপার স্পেশ্যালিটিতে ৯ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদের অনুমোদন পেয়েছিল জলপাইগুড়ি। সব পদই এখন অবধি ফাঁকা। গ্রীষ্ম শুরু হতেই রোগীর ভিড় উপচে পড়ছে এই হাসপাতালে। চিকিৎসক না থাকায় বেশির ভাগ দিনই ফিরে যেতে হচ্ছে রোগীদের। হৃদরোগ থেকে শুরু করে কিডনি, স্নায়ুরোগ— সব বিভাগের পরিকাঠামো থাকলেও, তা এখনও ব্যবহারই হয়নি।

বৃহস্পতিবার সুপার স্পেশ্যালিটির বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা গেল, মেডিসিন বিভাগ বন্ধ। সার্জারি বিভাগেও কেউ নেই। বন্ধ অর্থোপেডিক বিভাগও। যে কোনও রোগ নিয়ে কেউ চিকিৎসার জন্য এলেই পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে জেনারেল বিভাগে। জলপাইগুড়ি পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্যের হাতে চোট লেগেছে। বহির্বিভাগে টিকিট করে তাঁকেও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে সাধারণ বিভাগে। সিদ্ধার্থ বলেন, “সার্জেন বা অস্থি বিশেষজ্ঞের দেখার কথা ছিল। দু’জনের কেউ নেই। বন্ধ ঘর দেখে আমাকে জেনারেল বিভাগে পাঠানো হল। সেখানে চিকিৎসাই হল না।”

শহরের টিবি হাসপাতাল পাড়ায় দশ তলা বাড়ি। প্রতিটি ঘরের ভিতর ঝাঁ চকচকে ভাব। যে কোনও পেশাদার নার্সিংহোমকে পিছনে ফেলতে পারে এই সরকারি হাসপাতাল। কিন্তু ডাক্তার কোথায়? জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “নতুন চিকিৎসক না পাওয়া পর্যন্ত সমস্যা নিয়েই থাকতে হবে। অনেক চিকিৎসক ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, সেটাও একটা সমস্যা।”

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ৬ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র দু’জন। তাঁদের মধ্যে এক জন জেলা হাসপাতাল, শিশু বিভাগে থাকেন। অন্য জনের দায়িত্ব সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। সস্প্রতি কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েক জন স্ত্রীরোগ এবং শিশু রোগের চিকিৎসকদের জেনারেল ফিজিশিয়ানের দায়িত্ব নিতে বলেছিলেন। হাসপাতাল সূত্রে দাবি, তাঁরা সেই নির্দেশ মানতে চাননি। ফলে একজন চিকিৎসক দিয়েই চলছে হাসপাতাল। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু চিকিৎসক জলপাইগুড়ি হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে বলেও দাবি। হাসপাতাল সূত্রে বলা হচ্ছে, তিন জনের জায়গায় মোটে এক জন অস্থিবিশেষজ্ঞ আছেন। সম্প্রতি দু’জন কার্ডিয়োলজিস্ট পেয়েছিল জলপাইগুড়ি হাসপাতাল। হৃদরোগের চিকিৎসাও চলছিল। সেই দু’জন ইস্তফা দিয়েছেন। এক জন ফিজিশিয়ান স্বেচ্ছাবসর নিয়েছেন, আরেক জন অন্যত্র চলে গিয়েছেন। এক চিকিৎসকের কথায়, “জলপাইগুড়ি হাসপাতাল ছেড়ে ডাক্তাররা কেন চলে যাচ্ছেন, সেটাই খুঁজে বের করা প্রয়োজন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Medical Health Medical Facility
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE