আক্রান্ত: কুকুরে কামড়ে আহত শিশুদের চিকিৎসা চলছে। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র
কুকুরের কামড়ে একজনের ফুসফুস ফুটো হয়ে গিয়েছিল। আর একজনের চোয়ালের একাংশ খুবলে নিয়েছিল কুকুর। শনিবার দুপুরে জরুরি ভিত্তিতে ওই দুই শিশুর অস্ত্রোপচার করলেন মালদহ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরা। চিকিৎসকদের দ্রুত তৎপরতায় দুই শিশু সুস্থ হয়ে ওঠায় খুশি মালদহের বৈষ্ণবনগর এলাকার জয়েনপুর ও চামাহাট গ্রামে তাদের পরিবারের লোকজন। তবে ঘণ্টাখানেকের ব্যবধানে পাশাপাশি দু’টি গ্রামের দুই শিশুকে এ ভাবে কুকুরে কামড়ানোয় আতঙ্কিত বাসিন্দারা।
চামাহাটের বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর আনিকুল শেখ জানান, তাঁর ছোটছেলে বছর দুয়েকের শামিম এ দিন সকালে ৯টা নাগাদ বাড়ির পিছনে খেলা করছিল। সেই সময় একটি কুকুর আচমকা ঝাঁপিয়ে পড়ে তার চোয়ালের একাংশের মাংস তুলে নেয়। সামিমের মুখে একাধিক আঁচড়ও দেয়। অন্যদিকে, চামাহাট থেকে এক কিলোমিটার দূরে জয়েনপুরে এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ কুকুরের কামড়ে পাঁচ বছরের মেয়ে মেহনাজ পারভিনের বাঁদিকের ফুসফুস ফুটো হয়ে যায়। শামিম ও মেহনাজকে তাদের বাড়ির লোকজন ঘণ্টাখানেকের ব্যবধানে প্রথমে নিয়ে যান বেদরাবাদ গ্রামীণ হাসপাতালে। পরে দু’জনকেই নিয়ে যাওয়া হয় মালদহ মেডিক্যাল কলেজে।
মেডিক্যাল কলেজের অস্ত্রোপচার বিশেষজ্ঞ পার্থপ্রতিম মণ্ডলের নেতৃত্বে গঠিত হয় তিন সদস্যের মেডিক্যাল টিম। প্রায় ৪৫ মিনিটের অস্ত্রোপচারে তার মুখের চামড়া দিয়ে শামিমের চোয়ালের ক্ষত মেরামত করা হয়। এরপর ওই চিকিৎসকেরাই মেহনাজের ফুসফুসের ক্ষতে অস্ত্রোপচার করেন। মালদহ মেডিক্যাল কলেজে এই ধরনের অস্ত্রোপচার বিরল বলে দাবি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের।
পার্থপ্রতিম বলেন, “শামিমের চোয়ালের একাংশ প্রায় ছিলই না। ফলে এ ভাবে অস্ত্রোপচার না করলে বাচ্চাটি ভবিষ্যতে খেতে পারত না। এমনকী, জলও না। এখন আর কোনও অসুবিধা নেই।” একই সঙ্গে মেহনাজের অবস্থা আরও আশঙ্কাজনক ছিল বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, “ফুসফুস ফুটো হয়ে যাওয়ায় প্রাণহানিও ঘটতে পারত। তবে পরিবার সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে আসায় আমরা চিকিৎসার সুযোগ পেয়েছি।”
হাসপাতালের ডেপুটি সুপার জ্যোতিষচন্দ্র দাস বলেন, “বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এমন জটিল অস্ত্রোপচারে প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আমাদের হাসপাতালে একেবারে বিনা পয়সায় রোগীদের ভাল চিকিৎসা দিতে পেরে খুশি।”
মেহনাজের বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, “ভাবছিলাম হয়তো মেয়েকে বাঁচানো যাবে না। এখন সে অনেকটাই সুস্থ।” একইসঙ্গে খুশি শামিমের মা বেদরা বিবি বলেন, “ছেলের দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। এখন দেখে মনে হচ্ছে আগের মতোই রয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy