মঞ্চে: পাকুয়াহাটে কর্মিসভায় বক্তব্য রাখছেন তৃণমূলের মালদহ জেলা পর্যবেক্ষক তথা পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। নিজস্ব চিত্র
সহায়ক মূল্যে ধান কেনার ক্ষেত্রে কোনও বাটাকাটা বা ধলতা নেওয়া চলবে না—শুক্রবার বিকেলে মালদহের বামনগোলা ব্লকের পাকুয়াহাটে দলীয় সভায় এই হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূলের মালদহ জেলা পর্যবেক্ষক তথা পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘যদি কোনও ধান ক্রয় কেন্দ্র বাটা বা ধলতা কাটে তবে বিডিও, জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ বা মন্ত্রীদের কাছেও অভিযোগ জানাতে হবে।’’
সহায়ক মূল্যে ধান কেনার সময় মালদহে মিল মালিকেরা কুইন্টাল প্রতি ৩ থেকে ৫ কেজি ধান বাড়তি আদায় করে, তাকেই ধলতা বা বাটাকাটা বলে। এই নিয়ে চাষিদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। সহায়ক মূল্যে বিক্রি করতে গেলে এই ক্ষতি স্বীকার করে নিতে হয়। কিন্তু ফড়েদের কাছে ধান বিক্রি করতে গেলে টাকা কম পাওয়া যায়, কিন্তু ধলতা বাদ যায় না। যে কারণে অনেক চাষি ফড়েদের কাছেই ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে শুভেন্দুবাবুর এ দিনের বক্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে
করা হচ্ছে।
বিশেষ করে যে মালদহে উত্তরবঙ্গের সব জেলার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হয়, সেখানেই শুভেন্দু এই কথা বলায় ধলতা নিয়ে সরকারের অবস্থান সম্পর্কে চাষিদের কাছে স্বচ্ছ ধারণা পৌঁছবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
তবে ধান কেনার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) অরুণকুমার রায় এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। মালদহ জেলা চালকল মালিকদের সংগঠনের সভাপতি প্রফুল্ল ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘ভাল ধান থাকলে কখনওই ধলতা নেওয়া হয় না। ধানের গুণমানের উপরেই ধলতা নেওয়া হয়।’’ কিন্তু এ বার সেই ধলতা বাদ দেওয়া হবে কি না, সে নিয়ে তিনি কিছু বলেননি। তাঁর কথায়, ‘‘ধলতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে তিন জনের একটি কমিটি রয়েছে। তারাই কত ধলতা নেওয়া হবে, তা ঠিক করেন।’’
সিপিএমের খেতমজুর ইউনিয়নের জেলা সহ সভাপতি বিশ্বনাথ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘মন্ত্রীরা এক দিকে ধলতা না নিতে বলছেন, অন্য দিকে ধলতা নেওয়া চলছে। কৃষকদের ভাঁওতা দেওয়া ছাড়া এটা আর
কিছুই নয়।’’
মালদহ জেলা কংগ্রেসের সভানেত্রী মৌসম বেনজির নুরও বলেন, ‘‘শুভেন্দুবাবু কী বলেছেন জানা নেই, কিন্তু মালদহ জুড়েই সহায়ক মূল্যে ধান কেনার সময় কুইন্টাল প্রতি ৫ কেজি পর্যন্ত ধলতা নেওয়া হচ্ছে। এক জন চাষি ন্যূনতম ৩০ কুইন্টাল একবারে বিক্রি করছেন, তাতে অন্তত এক কুইন্টাল ধলতা দিতে হচ্ছে।’’
তবে মালদহ জেলা তৃণমূল কিসান খেত মজুর সংগঠনের সভাপতি রঞ্জন সিংহ বলেন, ‘‘কৃষকদের স্বার্থে মন্ত্রী যে কথা বলেছেন, সেই নির্দেশ মানা উচিত। আমরাও সংগঠনগত ভাবে সেটা দেখব।’’
সেই দিকেই এখন তাকিয়ে রয়েছেন জেলার কৃষকেরা।
শুভেন্দু এ দিন লোকসভা ভোটের কথাও তোলেন। বলেন, মালদহ জেলার উত্তর ও দক্ষিণ দু’টি লোকসভা আসনই দখল করতে হবে। এ জন্য এখন থেকেই প্রচার শুরুর পরামর্শ দেন তিনি। শুভেন্দু বলেন, দলের ১১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানদের সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত পিছু অন্তত চার হাজার করে ভোট লিড দিতে হবে। সেই ভোট প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও জেলা পরিষদের কাছ থেকে বুঝে নেওয়া হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দেন। এ দিন অবশ্য কংগ্রেসের জেলা সভানেত্রী মৌসম নুরকে নিয়ে একটি কথাও খরচ করেননি শুভেন্দুবাবু। কর্মিসভায় তৃণমূলে যোগ দেন মালদহের মালতীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক তথা আরএসপির জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর
রহমান বক্সি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy