Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাড়ি বানাতে ওরাই শেষ কথা

বাড়ি বানাতে নির্মাণ সামগ্রী ওদের কাছ থেকে কিনতেই হবে। ভাড়াটেও ঠিক করে দেবে ওরা। উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রীও। কী চলছে শিলিগুড়িতে!অসমের নওগাঁর বাসিন্দা, পেশায় কাঠ ব্যবসায়ী এক ব্যক্তি কয়েক বছর আগে শিলিগুড়ির নৌকাঘাট মোড়ে তিন কাঠা জমি কিনেছিলেন। তবে বাড়ি করতে গেলেই বাধার মুখে পড়েন তিনি। জমির সীমানা প্রাচীর দেওয়া শুরু হলেই স্থানীয় সিন্ডিকেট কারবারিরা বাধা দেন। তাঁদের কাছ থেকে ইমারত তৈরির যাবতীয় সরঞ্জাম কিনতে হবে, দাবি করেন কারবারিরা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৮ ০৩:১৯
Share: Save:

বাড়ি করবেন? ইমারতি সামগ্রী কিনতে আপনাকে যেতেই হবে এলাকার সিন্ডিকেটের কাছে, বলছেন ভুক্তভোগী থেকে প্রশাসনের একটি অংশ। তাঁদের কথায়, বাড়ি তৈরির যাবতীয় সরঞ্জাম তো বটেই, সেই সঙ্গে নিতে হবে শ্রমিক এবং বাড়ি তৈরি হলে ভাড়া দেওয়ার ব্যাপারে সিন্ডিকেটের ‘জরুরি পরামর্শ’। এই পরামর্শ অবহেলা করলে আপনি আক্রান্তও অবধি হতে পারেন, বলছেন তাঁরা।

ওই ভুক্তভোগীদের দাবি, আপনার কাছে কত জমি আছে, সেটা সিন্ডিকেটের কাছে জরুরি নিয়। দেড় কাঠা জমিতে যিনি বাড়ি করতে যাচ্ছেন, তাঁকেও সিন্ডিকেট ছাড়ে না। যেমন, শিবমন্দিরের হালের মাথা এলাকায় দেড় কাঠা জমি কিনে বাড়ি করার কাজ শুরু করেছিলেন দার্জিলিংয়ের এক বাসিন্দা। প্রাক্তন সরকারি কর্মী ওই ব্যক্তি সিন্ডিকেটের কারবারিদের কথা মতো কাজ না করায় অর্ধ সমাপ্ত অবস্থায় জমিবাড়ি বেচে দিতে বাধ্য হন। ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘জমিটি এক প্রোমোটারকে বিক্রি করে দিয়েছি। পরে জানতে পেরেছি ওই প্রোমোটারই বকলমে ইমারতি ব্যবসার সিন্ডিকেট চালান। তিনি ঘুরিয়ে মধ্যস্থতাকারী সেজে জমিটি কিনেছেন।’’

অসমের নওগাঁর বাসিন্দা, পেশায় কাঠ ব্যবসায়ী এক ব্যক্তি কয়েক বছর আগে শিলিগুড়ির নৌকাঘাট মোড়ে তিন কাঠা জমি কিনেছিলেন। তবে বাড়ি করতে গেলেই বাধার মুখে পড়েন তিনি। জমির সীমানা প্রাচীর দেওয়া শুরু হলেই স্থানীয় সিন্ডিকেট কারবারিরা বাধা দেন। তাঁদের কাছ থেকে ইমারত তৈরির যাবতীয় সরঞ্জাম কিনতে হবে, দাবি করেন কারবারিরা। ব্যবসায়ীও ‘ওদের সঙ্গে মানিয়ে চলতে হবে’, এই ভেবে আলোচনায় বসতে রাজি হয়ে যান।

ব্যবসায়ীর বক্তব্য, ‘‘ওদের (সিন্ডিকেটের কারবারিদের) দামেই সরঞ্জাম কিনতে হবে। আমি ওদের কাছ থেকে কিছু জিনিস কিনেছিলাম। সেগুলির মান খুব খারাপ। দাম বাজারের দ্বিগুণ। পরে তাই আর সরঞ্জাম কিনতে রাজি হইনি। তাই ওরা আমাকে কাজ করতে দেয়নি। এখন বাধ্য হয়েই জমিটা বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ব্যবসার খাতিরেই থানা, পুলিশ করিনি।’’

নাম প্রকাশ করলে আক্রান্ত হতে হবে, এই আতঙ্কে রয়েছেন সবাই। তবে এমন অভিযোগ যে বায়বীয় নয়, তা মানছেন শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি তাপস সরকার। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছেও কিছু কিছু অভিযোগ এসেছে। আমরা ওই বিষয়ে কড়া পদক্ষেপের জন্য প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছি।’’

পুলিশ, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে সিন্ডিকেট ঠেকাতে আলোচনা হয়ই। তবে কাজের কাজ কতটা হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।

যেমন, চম্পাসারির মেন রোড এলাকায় দুই কাঠা জমি কিনেছিলেন সিকিমের বাসিন্দা এক মহিলা। তিনি আবার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত। টিন দিয়ে বছর দু’য়েক ঘিরে রাখার পর জমিতে কাজ করতে যান। রাতরাতি তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে হাজির হন এলাকার দুই ব্যক্তি। নিজেদের শাসকদলের কর্মী পরিচয় দিয়ে জানতে চান, ওই জমিতে কী হবে। বাড়ি করার কথা বলায় জানিয়ে দেন, ইমারতি সামগ্রী তো কিনতে হবেই, বাড়ি তৈরি করে ভাড়া দেওয়ার আগেও তাদের সঙ্গে পরামর্শ নিতে হবে!

ওই মহিলার কথায়, ‘‘আমায় বলে দেওয়া হয়, বাড়ি ভাড়া দেওয়ার জন্য বানালে বাড়তি ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। শেষে জমিটি বিক্রির প্রস্তাবও দেয়। ভাবা যায়!’’

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Syndicate Materials House
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE