পাচারের ‘সাইক্লিং’ শুরু সাধারণত বেলা বাড়তে। চলে সেই রাত পর্যন্ত, যতক্ষণ না টহল বাড়ায় পুলিশ, বিএসএফ। স্থানীয় মানুষের একাংশ বলছে, এই কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই খেল খতম।
কেন ‘পাচারের সাইক্লিং’ বলা হচ্ছে, তারও ব্যাখ্যা করলেন স্থানীয় মানুষেরা। তাঁদের কথায়, এই চক্রের সঙ্গে জড়িতরা সাইকেল চালিয়েই সীমান্তে পৌঁছে যায়। তবে একা কেউ পুরো পথটা সাইকেল চালিয়ে নিয়ে যায় না। এক একজন সাইকেল চালায় ৪-৫ কিলোমিটার। তার পরে হাতবদল হয়ে চলে যায় আর এক জনের কাছে। তখন সে সাইকেল চালিয়ে নিয়ে যায় একই দূরত্ব। এই ভাবে সাইকেল পৌঁছয় সীমান্তে। এর জন্য চালকরা এক একজন পায় একশো থেকে দু’শো টাকা। কখনও সাইকেল যায় ৩১ডি জাতীয় সড়ক ধরে, কখনও বা এশিয়ান হাইওয়ে-২ ধরে।
গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, বেলা ১২টা থেকে ৩টা অবধি ৪-৫টা সাইকেল জাতীয় সড়কে দিয়ে গেলে পরের বিকেলের কিস্তির সাইকেল পৌঁছয় নৌকাঘাট, রানিডাঙা, ক্যানেল রোডের ধারের গ্রামীণ পথ দিয়ে। বড় রাস্তার ধার দিয়ে যুবকদের সাইকেল চালিয়ে চলে যেতে দেখলে সাধারণত কেউ খুব একটা খেয়ালও করেন না। এ ভাবে সপ্তাহে অন্তত চার দিন দফায় দফায় সাইকেল পৌঁছয় সীমান্তের গ্রামে। বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা সাইকেল। তা রাতের অন্ধকারে পৌঁছে যায় সীমান্তে। ফাঁসিদেওয়ার মহানন্দা নদীর খোলা সীমান্ত অথবা জলপাইগুড়ি গেলে চাউলহাটি দিয়ে তা চলে যায় ওপারে।
বিএসএফের অফিসারদের একাংশ জানান, সাইকেলের দাম ৬০০ টাকা, ২০০ টাকার সাইক্লিং চার্জ মিলিয়ে ৮০০ টাকা দাম দাঁড়ায় তার। সীমান্তের ওপারে গেলে সেটাই বেড়ে হয় ১৫০০-১৬০০ টাকা। সপ্তাহে ১০০ সাইকেল অর্থাৎ মাসে অন্তত ৪০০ সাইকেল পাচারের ‘লক্ষ্যমাত্রা’ থাকে পাচারকারীদের। নগদে চলে পুরো লেনদেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, এখনও অবধি জানা গিয়েছে চক্রের অন্যতম মাথা একজন মাদকের কারবারি। বছর আটেক আগে বর্ধমান রোড লাগোয়া ঘাঁটি থেকে গোটা শিলিগুড়ি শহরে মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করত সে। এক দফায় জনরোষ তার বাড়িতেও আছড়ে পড়ে। গ্রেফতারের পরে ছাড়া পেয়ে শহর লাগোয়া এলাকায় মাদকের সঙ্গে ওই দুষ্কৃতী চোরাই সাইকেলের রমরমা কারবার জুড়ে বসেছে বলে অভিযোগ। সঙ্গে টাকার বিনিময়ে কাজে লাগাচ্ছে অন্তত ১৫ জন যুবককে। মোটরবাইকের মতো নম্বরপ্লেট, রেজিস্ট্রেশন, ইঞ্জিন বা চেসিস নম্বর না থাকায় সীমান্তে ওপারে নিয়ে গিয়ে সাইকেল বেচতে অসুবিধা হচ্ছে না।
পুলিশ ও বিএসএফের অফিসারেরা গোটা অপারেশনের বিষয়টি জানার পরে ক’দিন আগেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এখনও কেউ ধরা পড়েনি। বিএসএফের শিলিগুড়ি ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি জর্জ মাঞ্জুরিয়ন এবং শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার ভরতলাল মিনা সব খতিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy