ধৃত: খুনের অভিযোগে গ্রেফতার অজয় (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র
টাকা নিয়ে বচসার জেরে নিজের বাড়িতে এক মহিলাকে কুপিয়ে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হল এক ব্যক্তিকে। সোমবার ভোররাতে বাগডোগরা থানার ক্ষুদিরামপল্লি এলাকার ঘটনা। নিহত লক্ষ্মী সরকারের (৪৭) ক্ষতবিক্ষত দেহ এলাকার একটি নর্দমার মধ্যে পড়েছিল। অভিযুক্ত অজয় দাসের বাড়ি ওই এলাকায়। তদন্তে নেমে এ দিন ভোরেই পুলিশ বাড়ি থেকে অজয়কে গ্রেফতার করে। এ দিন শিলিগুড়ি আদালত থেকে অভিযুক্তকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। ধৃতের দিদি এবং বাবাকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রবিবার সন্ধ্যা থেকে মহিলা নিখোঁজ ছিলেন। তাঁর পরিবারের তরফে থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল।
ধৃত অজয় অবিবাহিত, বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ীভাবে কাজ করেন বলে জানা গিয়েছে। আগে বাবার সঙ্গে থাকলেও কিছুদিন ধরে একটি বাড়ি ভাড়া করে একা থাকেন। নিহত লক্ষ্মীদেবীও একই পাড়ার বাসিন্দা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, লক্ষ্মীদেবী সুদে টাকা ধার দেওয়ার ব্যবসা করতেন। গত সেপ্টেম্বরে অজয় লক্ষ্মীদেবীর কাছ থেকে মাসিক ১০ শতাংশ সুদে ২৫ হাজার টাকা ধার নেন। সেই টাকা শোধ করা নিয়েই তাঁদের দু’জনের মধ্যে সমস্যা চলছিল বলে পুলিশ সূত্রে খবর। অজয় ঠিকমতো টাকা শোধ না করায় রাস্তাঘাটে তাঁকে বা তাঁর বাড়ির লোককে ডেকে লক্ষ্মীদেবী টাকা চাইতেন বলে এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ জানিয়েছেন।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের দাবি, নিহত লক্ষ্মীদেবী রাত ৮টা নাগাদ বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা আদায়ের জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরে আর তাঁকে দেখা যায়নি বলে দাবি তাঁর পরিবারে। নিহতের ছেলে বাপ্পা সরকার বলেন, ‘‘ভোরের আগে কিছু লোকজন রাস্তায় দেহ দেখে খবর দেয়। অভিযুক্তের কড়া শাস্তি চাই।’’ বাগডোগরা থানার ওসি দীপাঞ্জন দাসের নেতৃত্বে অফিসারেরা তদন্তে নামেন। লক্ষ্মী সরকার কাদের কাদের টাকা ধার দিয়েছিলেন, কোন কোন বাড়িতে নিয়মিত যেতেন। রাতে শেষবার কোথায় দেখা গিয়েছিল তা দেখা শুরু হয়। সেসময় অজয়ের বাড়ির সামনে রক্তের দাগ চোখে পড়ে পুলিশের। তারপরেই অজয়ের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ।
যদিও ধৃত অজয়ের দাবি, পুরো টাকা তিনি শোধ দিলেও লক্ষ্মীদেবী বিভিন্ন সুদের হিসাব দেখিয়ে টাকা চাইছিলেন। রবিবার রাতে হিসেবের ডায়েরি নিয়ে লক্ষ্মীদেবী অজয়ের বাড়িতে যান। কথা কাটাকাটির মধ্যে রাগের মাথায় আনাজ কাটার ছুরি দিয়ে লক্ষ্মীদেবীকে আঘাত করেছেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন অজয়। লক্ষ্মীদেবী আহত হলে ধরা পড়ার ভয়ে কুপিয়ে দেন বলে জানিয়েছেন তিনি। পরে গভীর রাতে ঘর থেকে দেহটি টেনে টেনে বার করে পাড়ার রাস্তার নর্দমার ধারে ফেলে এসেছিলেন। ধারাল অস্ত্র, কাপড় লুকিয়ে পালানোর মুহূর্তে পুলিশ তাঁকে পাকড়াও করে। অভিযুক্তের ঘর থেকে রক্তের দাগ, চাকু, কাপড় এবং লক্ষ্মীদেবীর হিসাবের ডায়েরি পুলিশ পেয়েছে। অজয়ের দেহে বেশকিছু আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। পুলিশের অনুমান লক্ষ্মীদেবীর সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময় ওই আঘাত লেগে থাকতে পারে।
শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের এক ডিসি জানান, অভিযুক্তকে জেরা করা হচ্ছে। খুনের পিছনে আর কোনও কিছু রয়েছে কিনা দেখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy