Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রেলগেট পড়লেই থমকে যায় শহর

জেলার সদর শহর। সকাল ১০ টা, স্কুল বা অফিস টাইম। ব্যস্ত রাস্তা দিয়ে স্কুলপড়ুয়া, অফিসযাত্রী থেকে সাধারণ মানুষ সাইকেল, মোটরবাইক, ছোট চার চাকাগাড়ি বা বাসে যে যাঁর মতো গন্তব্যের দিকে চলেছেন। হঠাত্‌-ই সবাইকে থমকে যেতে হল। কারণ, হাটজনবাজার রেল গেট ততক্ষন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ট্রেন বা মালগাড়ি আসছে। শুধু সুস্থ মানুষ কেন, রোগীদের নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সেরও একই দশা। অগত্যা অপেক্ষা। কখনও সে অপেক্ষা ৬ মিনিট, কখনও বা ১৫ মিনিট।

হাটজনবাজারে লেভেল ক্রসিং-এ এটাই নিত্যদিনের চিত্র। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

হাটজনবাজারে লেভেল ক্রসিং-এ এটাই নিত্যদিনের চিত্র। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:০৭
Share: Save:

জেলার সদর শহর। সকাল ১০ টা, স্কুল বা অফিস টাইম। ব্যস্ত রাস্তা দিয়ে স্কুলপড়ুয়া, অফিসযাত্রী থেকে সাধারণ মানুষ সাইকেল, মোটরবাইক, ছোট চার চাকাগাড়ি বা বাসে যে যাঁর মতো গন্তব্যের দিকে চলেছেন। হঠাত্‌-ই সবাইকে থমকে যেতে হল।

কারণ, হাটজনবাজার রেল গেট ততক্ষন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ট্রেন বা মালগাড়ি আসছে। শুধু সুস্থ মানুষ কেন, রোগীদের নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সেরও একই দশা। অগত্যা অপেক্ষা। কখনও সে অপেক্ষা ৬ মিনিট, কখনও বা ১৫ মিনিট।

এ ছবি শুধু দিনের ব্যস্ত সময় নয়। সারাদিনে সিউড়ি স্টেশন লাগোয়া সিউড়ি-বোলপুর রাস্তায় থাকা হাটজনবাজার লেভেলক্রসিং পেরিয়ে যাওয়ার ওই যন্ত্রণা কমবেশি বার পঞ্চাশেক পোহাতে হয়। নিত্য ভুগতে হয়, শহরবাসী এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে বোলপুর, লাভপুর, কীর্ণাহার বা কাটোয়া থেকে আসা মানুষকে।

সিউড়ি’র বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডটিই লেভেল ক্রসিংয়ের ওপারে। পুরবাসীরা তো বটেই ওই রাস্তা ব্যবহার করেন সিউড়ি ১ ও ২ ব্লকের প্রচুর মানুষ। সবচেয়ে বড়কথা, সিউড়ি-র সঙ্গে বোলপুর মহকুমার এবং বর্ধমানের কাটোয়ার সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান রাস্তার মধ্যেই রয়েছে ওই লেভেলক্রসিং। ফলে সারা দিনে অসংখ্য যানবাহন ও কয়েক হাজার মানুষের নিত্য যাতায়াতের পথে অন্তরায় উড়ালপুল না থাকা।

ঘটনা হল, অণ্ডাল-সাঁইথিয়া শাখায় থাকা সিউড়ি স্টেশনটি ব্রিটিশ আমলের। বছর কয়েক আগে ওই শাখাটি ডাবল লাইন ও বৈদ্যুতিকরনের কাজ শেষ হয়েছে। যেহেতু উত্তর ভারত ও দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসানশোল হয়ে সিউড়ি স্টেশন ছুঁয়ে উত্তরবঙ্গ ও উত্তর পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ট্রেন যায়। শাখটি উন্নত হওয়ার পরই ট্রেনের সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে মালগাড়ির সংখ্যা। সেই কারণেই দুর্ভোগ বেড়েছে ওই রাস্তায় থাকা লেভেলক্রসিং পারাপারকারীদের। রেল সূত্রেরই খবর, ট্রেন ও মালগাড়ি মিলে দিনে কমপক্ষে ৫০টি গাড়ি চলে। সেই সময় রেলগেট বন্ধ করা ছাড়া কোনও উপায় নেই।

কার্যত নিত্য যানজটে জেরবার হয়েই স্থানীয়দের দাবি, একটি উড়ালপুলের। নাহলে সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। দাবি যখন এত জোরালো তাহলে, এতদিন এ ব্যাপারে কেন সিদ্ধন্ত নেয়নি রেল? কেনই বা সিউড়ি পুরসভা বা এলাকাবাসী তাঁদের অসুবিধার কথা জানিয়ে রেলের কাছে আবেদন করেননি?

এলাকাবাসী ও সিউড়ি পুরসভার কয়েকজন কাউন্সিলর জানাচ্ছেন, দু’ বছর আগেই উড়ালপুল হবে এমন সম্ভাবনা উঠে এসেছিল। মাপজোকও শুরু হয়েছিল। কিন্তু রেলের জায়গায় যে সব ব্যবসায়ী অবৈধ দখল করে আছেন, মূলত তাঁদের আপত্তিতেই সেই সম্ভাবনা বাস্তবায়িত হয়নি। সিউড়ির পুরপ্রধান উজ্বল মুখোপাধ্যায় সে কথাই বলেন, “রেলের জায়গায় বসে থাকা ব্যবসায়ীরা আপত্তি জানিয়েছিলেন। তাঁরা পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছিলেন বলে শুনেছি।” উড়ালপুল যে হওয়ার প্রয়োজন তা মানছেন পুরপ্রধানও। ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রবি দাস বলেন, “সারাদিনে এতবার রেলগেট বন্ধ থাকায় প্রচুর যানজট তৈরি হয়। দুর্ঘটনাও ঘটছে প্রায়শই।”

অন্য দিকে ‘অবৈধ ভাবে রেলের জায়গায় ব্যবসা করা’ হাটজনবাজার ব্যবসা রক্ষা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মহাদেব কুণ্ডুর দাবি, “আমরা উড়ালপুল তৈরির বিপক্ষে নই। আমরাও চাই মানুষের সুবিধা হোক। কিন্তু আমরা শুধু চেয়েছিলাম বা এখনও চাই আমাদের ব্যবসা করার জন্য জায়গা দিক রেল। তা ছাড়া ২০০টি পরিবার অসহায় হয়ে যাবে।”

ঠিক কত টাকা ব্যয়ে সে সময় উড়ালপুল তৈরির প্রস্তাব এসেছিল?

সে নিয়ে কেউ সঠিক তথ্য দিতে না পারলেও, রেলের এক আধিকারিকের কথায়, “সমস্যা এড়াতে উড়ালপুলের ভাবনা নেওয়া হয়েছে। কোথায় কী ভাবে উড়ালপুলটি তৈরি হবে, সেই বিষয়ের প্রাথমিক খসড়া (জেনারেল অ্যারেঞ্জমেন্ট ডয়িং) তৈরি হয়েছে। হয়ে গিয়েছে মাটি পরীক্ষার কাজও।” তবে ফাইনাল নাকশা তৈরি বা বরাদ্দের ব্যাপারে এই মুহূর্তে কতটা অগ্রগতি হয়েছে, তা জানাতে পারেননি রেলের ওই আধিকারিক।

শুধু হাটজন বাজার রেলগেট নয়, আসানসোল থেকে সিউড়ি শহরে ঢোকার সময় কিংবা শহর থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার সময়ও রেল বিড়াম্বনায় পড়তে হয়। রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ছেড়ে সিউড়ি শহরে ঢুকতে রেললাইনের নীচে দিয়ে যাওয়া পথটি এতাটাই সঙ্কীর্ণ যে সামান্য উঁচু গাড়ি বা মালপত্র নিয়ে বাস ঢুকতে পারে না। শহর এড়িয়ে জাতীয় সড়ক দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও আবদারপুরের কাছে রয়েছে ওই একই শাখার উপরে আরও একটি লেভেলক্রসিং। ফলে সেখানেও একই দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয় ওই রাস্তায় চলাচলকারি যানবাহনকে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, ওই জায়াগাতেও উড়ালপুল দরকার।

রেল এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও, ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের দায়িত্ব প্রাপ্ত এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র নীরজ সিংহ বলেন, “জাতীয় সড়়কের মধ্যে যেখানে যেখানে লেভেলক্রসিং রয়েছে, এমন পাঁচটি উড়ালপুল কেন্দ্রীয় প্রকল্পের মাধ্যমে হওয়ার কথা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

amar shohor traffic dayal sengupta suri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE