রাতারাতি: ধানচাটানি গ্রামে চলছে কাজ। নিজস্ব চিত্র
একশো দিনের প্রকল্পে কাজ জোটেনি দীর্ঘদিন। জেলাশাসককে সে কথা জানানোর পরের দিনেই একশো দিনের প্রকল্পে কাজ পেয়ে গেলেন অযোধ্যাপাহাড়ের আড়শা ব্লকের ধানচাটানি গ্রামের মানুষজন। জেলাশাসককে কেন গ্রামে গ্রামে গিয়ে কাজ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, তা নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা।
গত শনিবার হঠাৎ পাহাড়ের জঙ্গলঘেরা ওই গ্রামে গিয়েছিলেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। তখনই গ্রামবাসীরা তাঁকে জানিয়েছিলেন এক বছরে ওই প্রকল্পে কোনও কাজ তাঁরা পাননি। স্থানীয় চাটুহাঁসা গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক জানিয়েছিলেন, সবে ওই প্রকল্পের ‘জিওট্যাগ’ করা হয়েছে। এ বার কাজ শুরু হবে। জেলাশাসক নির্দেশ দিয়েছিলেন, দু’দিনের মধ্যে গ্রামবাসীকে কাজ দিতে হবে। এমনকি কাজের ছবিও তাঁকে পাঠাতে নির্দেশ দিয়ে যান। রবিবার থেকে ওই গ্রামে জল সংরক্ষণের জন্য হাপা খননের কাজ শুরু হয়েছে।
এই ঘটনায় প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর দাবি, ‘‘ওই গ্রাম তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর নিজের বিধানসভা এলাকার মধ্যে পড়ে। তাতেই এই অবস্থা! জেলাশাসক সেখানে গিয়ে বলার পরে কাজ শুরু হচ্ছে। জেলার সব ক’টি পিছিয়ে পড়া গ্রামেই সরকারকে নজর দিতে হবে।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘পঞ্চায়েতগুলি অকর্মণ্য। ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের কথায় তৃণমূলের নেতারা এখন ঘুরছেন। প্রশাসনও নাটক করতে ঘুরছে। কিন্তু মানুষের আস্থা উড়ে গিয়েছে।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার ১০০ দিনের প্রকল্পে নানা জটিলতা তৈরি করেছে। সেই সব বিধি মেনে এখন কাজ দিতে হচ্ছে। প্রকল্পের নিয়মকানুনের সরলীকরণ করা দরকার।’’ তিনি জানান, ওই প্রকল্পে যাতে মানুষ আরও বেশি কাজ পায়, সে জন্য তিনি পঞ্চায়েতগুলির সঙ্গে কথা বলবেন।
এই প্রকল্পে কাজ পেয়ে খুশি সিপাহি মান্ডি, শর্মিলা মান্ডিরা। তাঁদের কথায়, ‘‘কত দিন পরে একশো দিনের কাজ পাচ্ছি মনেই নেই।’’ গ্রামের যুবক রাজীব মান্ডি বলেন, ‘‘আগের পঞ্চায়েত থেকেও তেমন কাজ পাইনি। এক বছর আগে যাঁরা পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় এসেছেন, তাঁরাও কাজ দেননি। ভাগ্যিস সে দিন গ্রামে জেলাশাসক এসেছিলেন। তাই কাজ পেলাম।’’ গ্রামবাসী জানান, কাজ না পেয়ে তাঁরা পুরনো পঞ্চায়েত বোর্ডের সদস্যদের ঘেরাও করেছিলেন। তারপরে গাছ লাগানোর কাজ দেওয়া হলেও সবাই সেখানে সুযোগ পাননি।
এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য বিজেপির দুলাল মাঝি দাবি করেন, ‘‘আমি পঞ্চায়েতে গিয়ে গ্রামবাসীকে কাজ দেওয়ার জন্য কয়েকবার বলেছি। কিন্তু পঞ্চায়েত থেকে কোনও সাড়া পাইনি। জেলাশাসক এসেছিলেন বলেই কাজ শুরু হল।’’
কেন এত দিন কাজ দেওয়া হয়নি? পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের ভবানী মাঝি দাবি করেন, ‘‘মাঝে শারীরিক অসুস্থতার কারণে পঞ্চায়েতে টানা অনুপস্থিত ছিলাম। তার উপরে লোকসভা ভোটের জন্যও কয়েক মাস কাজ বন্ধ ছিল।’’ পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক তপন নন্দী জানান, ওই গ্রামে দু’টি কাজ ধরা হয়েছে। প্রক্রিয়া চলছিল। এ বার শুরু হল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy