Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Coronavirus

করোনা-সতর্কতায় পথে ‘গুপী-বাঘা’

ততক্ষণে দরজা খুলে অনেকেই ঘিরে ফেলেছেন গুপি-বাঘাকে।

পুরুলিয়া শহরের ভাগাবাঁধপাড়া মনসামন্দির এলাকায়। ছবি: সুজিত মাহাতো

পুরুলিয়া শহরের ভাগাবাঁধপাড়া মনসামন্দির এলাকায়। ছবি: সুজিত মাহাতো

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২০ ০২:১৩
Share: Save:

সাত সকালেই বাইরে ঢোলের বাদ্যি শুনে খানিকটা কৌতুহল নিয়েই দরজা খুলেছিলেন পুরুলিয়া শহরের ভাগাবাঁধ পাড়া এলাকার বৃদ্ধা মুক্তা পাল। দরজা খুলেই তিনি অবাক। তাঁর দুয়ারেই দাঁড়িয়ে দুই খুদে ‘গুপি-বাঘা’। পরনে ধুতি, কোমরেবাঁধা গামছা। এক জন গলায় ঢোল ঝুলিয়ে বাজিয়ে চলেছে। অন্য জন গলা ছেড়েছে, ‘‘শুন দিদা কিছুক্ষণ। গুপি-বাঘার কথা শুন। আগে তো হাজার গণ্ডা রোগ জ্বালা ছিল। কোথা লে ভাই করোনা জুটিল। মরার আগে মরিস না। ভুল কাজটা করিস না। সাবানে হাত ধুয়ে নিলে ভাইরাসগুলা দেখবি ফুরাই গেল। কোথা লে ভাই করোনা জুটিল।’’

ততক্ষণে দরজা খুলে অনেকেই ঘিরে ফেলেছেন গুপি-বাঘাকে। গান থামিয়ে দুই খুদের আবেদন, ‘‘দেখছ তো দিদা এই করোনাভাইরাস মহামারি হয়ে দেখা দিয়েছে। আমরা দু’জন গুপি ও বাঘা সেই কথাটাই জানাতে এলাম। এই ভাইরাস রুখতে এখন বার বার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। আর বাইরে বোরোনো একদম বন্ধ। বাড়ির লোকজনকেও বাইরে বেরোতে দেবেন না।’’ পাড়ায় পাড়ায় ঢোলের বোল তুলে শনিবার এই আবেদন নিয়েই পুরুলিয়া শহরের ভাগাবাঁধপাড়া বস্তি, নডিহা বস্তি-সহ লাগোয়া এলাকা ঘুরে বেড়াল বাঘারূপী কুলদীপ সূত্রধর ও গুপিরূপী স্বরাজ মাহাতো। দু’জনের বয়স ১০-১১ বছর। কুলদীপ নামোপাড়ার, স্বরাজ নডিহার বাসিন্দা।

আগেও পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে নাটকে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর সৃষ্ট এই দুই চরিত্রের রূপে মঞ্চে দেখা গিয়েছে ‘কোরক’ নাট্য সংস্থার ওই দুই শিল্পীকে। সেই নাটকের পরিচালক সুদীন অধিকারী বলেন, ‘‘আমরা দূষণের বিরুদ্ধে সমাজের কাছে বার্তা দিতে এই দুই চরিত্রকে ইতিপূর্বে মঞ্চে নামিয়েছি। এ ছাড়া, একশো দিনের কাজ নিয়ে ‘মেহনতে মোহর’, নির্বাচন নিয়ে ‘ভোট পরব’, বাংলার আবাস যোজনা নিয়ে ‘স্বপ্নপূরণ’-সহ একাধিক পথনাটিকাও করেছি। এ বার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো নিয়ে সচেতনতা প্রচারে আমরা গুপী-বাঘাকে নিয়ে নেমেছি।’’ তবে এ বার আর পথনাটিকার মাধ্যমে নয়। কারণ, তাতে ভিড় হত। তাতে বরং করোনা-সংক্রমণ ছড়ানোর ভয় রয়েছে। তাই এই দুই চরিত্র শহরের পাড়ায়-পাড়ায় ঘুরে সতর্ক করতে নেমেছে। মূলত বস্তিবাসীর মধ্যে সচেতনতা প্রচারই তাঁরা এই মুহূর্তে জরুরি বলে মনে করছেন।

কিন্তু এই সময়ে পথে বার হওয়াও তো ঝুঁকির? কুলদীপের বাবা মৃৎশিল্পী দিলীপ সূত্রধর, স্বরাজের বাবা পঞ্চায়েত কর্মী গৌতম মাহাতো বলেন, ‘‘ওদের কথা শুনে যদি কিছু মানুষ সচেতন হন, সে কথা ভেবেই আর আটকাইনি।’’ ভাগাবাঁধপাড়া বস্তি এলাকার বাসিন্দা বধূ রুমা বাউরি, পূজা রেওয়ানিরা তাই কথা দিয়েছেন, ‘‘দু’টি ছোট ছেলে সকালেই বাড়ির দরজায় এসে করোনাভাইরাস নিয়ে যে কথাগুলো বলে গেল, তা মানতেই হবে।’’ বৃদ্ধা মুক্তাদেবী বলেন, ‘‘ছেলে দু’টির কথা ফেলার নয়। বাড়ির সবাই যাতে ওদের কথা মেনে চলে, তা দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE