Advertisement
১০ মে ২০২৪
পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিদ্ধান্ত
Coronavirus

হাসপাতালে নিয়ে যেতে ভরসা ১০২    

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনা মোকাবিলায় দু’টি জেলা হাসপাতাল রামপুরহাট ও সিউড়ি এবং বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়েছে।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

দয়াল সেনগুপ্ত       
সিউড়ি শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২০ ০৪:৩৫
Share: Save:

‘সাবধানে থাকুন, বিশ্রামে থাকুন। জ্বর শ্বাসকষ্ট বা অন্য কোনও উপসর্গ দেখা দিলেই ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন।’ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এমন পরামর্শই দেওয়া হচ্ছে সরকারিভাবে। কিন্তু বাস্তব সমস্যা হল, এই সময় আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে এমন উপসর্গ নিয়ে ভুগছেন বহু মানুষ। তাঁদের মধ্যে কার শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে তা বুঝতে গেলে পরীক্ষা জরুরি। কিন্তু তাঁদের হাসপাতালে পৌঁছনো এবং সেখান থেকে ফিরে আসাই এখন সবচেয়ে কঠিন সমস্যা। দেশ জুড়ে লকডাউন চলছে। এই পরিস্থিতিতে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে হাসপাতালে পৌঁছনোর জন্য উপায় কি? অ্যাম্বুল্যান্স এর ঘাটতি, কোনও গাড়ি পথে বের হতে চাইছে না। গেলেও ভাড়া চাইছে অস্বাভাবিক। গত ২২ মার্চ থেকেই এই সমস্যা চলছে। বাধ্য হয়েই স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে গত বছর মাতৃযানের পাশাপাশি ১০২ অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা চালু করা হয়েছিল নিখরচায় আসন্ন প্রসবা, অসুস্থ শিশুদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া আসার জন্য। এই অ্যাম্বুল্যান্সগুলি অত্যাধুনিক ও সংক্রমণ নিরোধক। সেগুলিকেই আপাতত পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরি অবস্থায় ব্যবহার করা হবে। বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি বলেন, ‘‘সত্যিই এটা খুব প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। অ্যাম্বুল্যান্সেরও অভাব ছিল। সদ্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে এই নির্দেশ এসেছে। এবার আশা করছি অনেকটাই সমস্যা মিটবে।’’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনা মোকাবিলায় দু’টি জেলা হাসপাতাল রামপুরহাট ও সিউড়ি এবং বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়েছে। সিউড়ি জেলা হাসপাতালে এমন শয্যা সংখ্যা ৫০টি। এছাড়া আলাদা ‘ফিভার ওয়ার্ড’ করা হয়েছে। প্রতিটি ব্লকে একটি করে কোয়রান্টিন সেন্টারও হয়েছে। বিদেশ থেকে এবং করোনা সংক্রমিত বিভিন্ন রাজ্য থেকে যে বা যাঁরা জেলায় এসেছেন এবং হোম কোয়রান্টিন বা সরকারি কোয়রান্টিন সেন্টারে রয়েছেন তাঁদের সংখ্যা সাত হাজারের বেশি। কারও কোনও উপসর্গ দেখা দিলেই সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে নিকটবর্তী ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং প্রয়োজনে জেলা বা মহকুমা হাসপাতালের আইসোলেশনে ওয়ার্ডে পর্যবেক্ষণে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন মূলত করোনাভাইরাসের আতঙ্ক থেকেই হাসপাতালে যাওয়ার হিড়িক বেড়েছে। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছতে প্রধান অন্তরায় ছিল পরিবহন ব্যবস্থা। জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা বলছে, জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাসপাতালের দূরত্ব কোথাও ১০ কোথাও ২০ কিলোমিটার। জেলা বা মহকুমা হাসপাতালে যেতে হলে তো সেই দূরত্ব বেড়ে ৫০ কিলোমিটার বা তারও বেশি। এতটা পথ উজিয়ে কিভাবে যাবে রোগী সেটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সরকারি কোয়রান্টিনে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের কারও কিছু হলে ভরসা ছিল পুলিশ। বাকিদের চরম বেগ পেতে হয়েছে। ১০২ পরিষেবা করোনার জন্য চালু হলে উদ্বেগ কাটবে।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার কমাতে হাসপাতালে প্রসব নিশ্চিত করার দিকে জোর দিয়েছে সরকার। তারই অঙ্গ হিসাবে ২০১১ সালে বিনামূল্য সরকরি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ও আসায় অন্তঃসত্ত্বা, প্রসূতি ও এক বছর পর্যন্ত শিশুদের জন্য নিশ্চয় যান চালু হয়। পরিষেবা আরও উন্নত করতে নিশ্চয় যানের পাশাপাশি ১০২ অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা চালু হয় ২০১৯ সাল থেকে। ১০২ অ্যাম্বুল্যান্সগুলির পরিকাঠামো বেশ ভাল। যেহেতু নিশ্চয় যান রয়েছে তাই ১০২ অ্যাম্বুল্যান্সকে করোনাভাইরাস উপসর্গযুক্ত রোগী বহনের কাজে ব্যবহার করা শুরু হল এই জরুরি অবস্থায়।

বীরভূম স্বাস্থ্য জেলায় ১০২ অ্যাম্বুল্যান্সের সংখ্যা মাত্র ৪৫টি। সিউড়ি জেলা হাসপাতাল, বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল-সহ প্রতিটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১০২ পরিষেবা রয়েছে। ব্যাতিক্রম দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতাল। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। তবে এখনকার পরিস্থিতি সামাল দিতে দুবরাজপুরের জন্য থানা ও ব্লকে দু’টি পৃথক অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা থাকছে আপাতত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE