প্রতীকী ছবি।
লালারসের নমুনা নিয়ে ময়নাতদন্তের পরে দেহ পরিবারকে ফিরিয়ে দিয়েছিল সিউড়ি জেলা হাসপাতাল। ফলে দেহ সাধারণ ভাবেই সৎকার করেছিল মৃতের পরিবার। কিন্তু, তিন দিনের মাথায় লালারসের রিপোর্ট পেতেই জানা গেল, মাঝবয়সী ওই ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন!
বৃহস্পতিবার বিকেলে বিষয়টি জানার পর থেকেই আতঙ্কে রয়েছেন মৃতের পরিবার-পরিজন, প্রতিবেশী থেকে শ্মশানযাত্রীরা। ঘটনাটি ঘটেছে সিউড়ি শহর লাগোয়া কড়িধ্যার সেনপাড়ায়। আপাতত শ্মশানযাত্রী ২৭ জনকে বাড়িতে আলাদা থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘এই কয়েক দিন আমরা যে গোটা পাড়ায় ঘুরলাম। কেন সতর্ক হল না হাসপাতাল, কেন দেহ সৎকারের জন্য পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হল?’’
বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়ি বলছেন, ‘‘ঠিক কী হয়েছে, খোঁজ নিতে হবে। তবে মৃতের রিপোর্ট কোভিড পজিটিভ হয়ে থাকলে ওই এলাকায় র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করানোর ব্যবস্থা করা হবে দ্রুত।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গলায় ব্যথা, জ্বর, শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা ভুগছিলেন কড়িধ্যা সেন পাড়ার বাসিন্দা বছর একচল্লিশের এক ব্যক্তি। পরিবার তাঁকে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান ৩১ জুলাই। ওষুধ লিখে দেওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসক তাঁকে পরামর্শ দেন লালারসের নমুনা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার। জানা গিয়েছে, গত ৩ অগস্ট, সোমবার সিউড়ি জেলা হাসপাতালে গিয়ে লালারসের নমুনা দেন অসুস্থ ওই ব্যক্তি। পরদিন অর্থাৎ, মঙ্গলবার ভোরে তাঁর শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হওয়ায় পরিজনেরা তাঁকে সিউড়ি জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। সঙ্গী ছিলেন পাড়ার লোকজনও। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই তাঁর মৃত্যু হয়।
মৃতের পরিবার ও শ্মশান যাত্রীদের দাবি, যেহেতু লালারসের নমুনা দেওয়া হয়েছিল, আশা করা হয়েছিল রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত দেহ হাসপাতালে আটকে রাখা হবে। কিন্তু সেটা হয়নি। এমনকি হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই মৃত্যু হওয়ায় ময়নাতদন্ত হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত দেহ কাটকাটি না করেই সেটা না করেই মৌখিক ভাবে ‘নর্মাল ডেথ’ বলে ছেড়ে দেওয়া হয় দেহ।
শ্মশানযাত্রী ও পড়শিরা বলছেন, ‘‘দেহ ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল বলে শুধু আমরা কয়েক জন নই, গোটা পাড়ার কয়েকশো মানুষে সেদিন মুখাগ্নির সময় উপস্থিত ছিলেন। গত তিন দিন সকলেই মৃতের বাড়িতে গিয়েছেন এবং একে অপরের সঙ্গে মিশেছেন। এখন করোনা রিপোর্ট আসার পরে সকলের মধ্যেই মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে।’’ হাসপাতাল সুপার শোভন দে যদিও জানিয়েছেন, মৃতের দেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে।
তবে দেহ আটকে না রাখার পিছনে প্রভাব খাটানো হয়েছে বলেও কিছু কিছু সূত্রে দাবি করা হয়েছে। এলাকার কিছু মানুষ সেটা আড়ালে মানছেনও। কড়িধ্যা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান উজ্জ্বল সিংহ বলেন, ‘‘সত্য-মিথ্যা জানি না, তবে দেহ নিয়ে আসার ক্ষেত্রে প্রভাব খাটানো হয়েছে বলে আমিও শুনেছি।’’ বিডিও (সিউড়ি ১) শিবাশিস সরকার জানান, মৃতের সংস্পর্শে আসা প্রত্যেকের লালারসের নমুনা নেওয়া হবে। কড়িধ্যার ওই এলাকায় জীবাণুনাশের কাজও হবে।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy