অপেক্ষা: উদ্বোধনের জন্য তৈরি হোম। সিউড়িতে। নিজস্ব চিত্র
বীরভূমে এত দিন কোনও জুভেনাইল হোম ছিল না। অপরাধমূলক ঘটনায় ধৃত বা দোষী সাব্যস্ত নাবালকদের পাঠাতে হতো পড়শি জেলা মুর্শিদাবাদের হোমে।
এ বার পাল্টাতে চলছে ছবিটা।
সিউড়ি জেলা সংশোধনাগারের পিছন দিকে মৎস্যভবন ঘেঁষে তৈরি হয়ে গিয়েছে জেলার প্রথম জুভেনাইল হোম। জেলা চাইল্ড প্রোটেকশন অফিসার নিরুপম সিংহ বলছেন, ‘‘পূর্ত দফতর কাজ করছে। সামান্য কিছু কাজ বাকি রয়েছে। সেগুলি শেষ হলেই চালু হয়ে যাবে ওই হোম। ভবিষ্যতে পুরো জাস্টিস বোর্ডটাই সেখানে স্থানান্তরিত হয়ে যাওয়ারও কথা রয়েছে।’’
জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৮৬ সালে তৈরি হয় ‘জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট’। সেটাই ২০০০ সালে ‘জুভেনাইল জাস্টিস কেয়ার অ্যান্ড প্রোটেকশন অফ চিলড্রেন’ হয়। ২০০৬ সালে সংশোধিত আইনের পরে বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনায় অভিযুক্ত নাবালকদের বিচার প্রক্রিয়া তরান্বিত করতে জেলায় জেলায় তৈরি হয় ‘জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড’। বীরভূমে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ওই বোর্ড গঠিত হয়। কিন্তু হোম ছিল না।
কেন জুভেনাইল হোম?
এমনিতেই প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীদের ক্ষেত্রে ‘জেল’ শব্দ তুলে ‘সংশোধনাগার’ ব্যবহৃত হচ্ছে। সেখানে শিশু ও নাবালকেরা কোনও অপরাধে জড়িয়ে পড়লে তাদের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল ব্যবহার জরুরি বলে বিশেষজ্ঞদের মত। শিশুরা যাতে অপরাধের রাস্তা থেকে সরে সমাজের মূলস্রোতে ফিরতে পারে— তা দেখার জন্যই ‘জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড’। এক জন প্রিন্সিপ্যাল ম্যাজিষ্ট্রেট এবং আরও দুই সদস্য-সহ মোট তিন জনের একটি বোর্ডই নাবালক অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার দায়িত্বে। অপরাধের ধরন এবং অপরাধীর বয়স বিবেচনা করে কখনও কাউন্সেলিং করে বা স্বল্প সময়ের জন্য আটকে রেখে ছেড়ে দেওয়া হয় অভিযুক্তদের।
রাজধানী দিল্লিতে নির্ভয়া-কাণ্ডের পরে ২০১৫ সালে জুভেনাইল অ্যাক্টে সংশোধনী এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে— খুন বা ধর্ষণের মতো মারাত্মক অভিযোগের কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ১৬-১৮ বছর বয়সীদেরও প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই আইনগত দিক থেকে বিচার করা হবে। কিন্তু, তার থেকে কমবয়স্কদের সাজা সর্বোচ্চ তিন বছর। এই সময়কাল কোনও দাগী অপরাধী নয়, ঘরোয়া একটা পরিবেশে ওই নাবালক অপরাধীকে রাখতেই জুভেনাইল হোমের পরিকল্পনা। যাতে সর্বক্ষণ তারা নজরদারিতে থাকতে পারে।
জেলায় হোম না থাকলেও প্রথম প্রথম তেমন অসুবিধা হয়নি। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বীরভূমে নাবালক অপরাধের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় জেলার অন্দরেই একটি হোমের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিচ্ছিল। বোর্ড ও আইনজীবীদের হিসেব, গত কয়েক বছরে যে ভাবে নাবালকেরা অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে, তাতে প্রতি বছর ৫০ জন অপ্রাপ্তবয়স্ককে পড়শি জেলার হোমে পাঠাতে হয়।
শুধু তাই-ই নয়, বীরভূমে জাস্টিস বোর্ডের একটি মাত্র ঘরে বিচার প্রক্রিয়া চলায়, অসুবিধাও হয়। তার উপর কাউন্সেলিং রুম ছিল না। ছিল না ওয়েটিং রুম, রিক্রিয়েশন রুমও। সে দিক থেকে নতুন এই হোম, তাদের সমস্ত সমস্যার সমাধান করবে বলে মানছে জাস্টিস বোর্ড।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy