Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সাতশো জন মহিলা ভোটার, ভোট পড়ে সাকুল্যে তিনটি

প্রশাসন সূত্রের খবর, ভোটের প্রতি নতুনডি গ্রামের মহিলাদের এমন অনাগ্রহ নতুন কিছু নয়। স্বাধীনতার পর থেকে হওয়া প্রতিটি নির্বাচনে এই গ্রামের প্রায় সকল মহিলাই ভোটদানে বিরত থেকেছেন।

দুয়ারে: নতুনডি গ্রামের মহিলাদের ভোটের দিন বুথে যাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করছেন মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর। ছবি: সঙ্গীত নাগ

দুয়ারে: নতুনডি গ্রামের মহিলাদের ভোটের দিন বুথে যাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করছেন মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর। ছবি: সঙ্গীত নাগ

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৯ ১২:২৩
Share: Save:

গ্রামের দুই বুথে মহিলা ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৭০০। কিন্তু গত বিধানসভা এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন মাত্র তিন জন। গোটা দেশে ভোটদানের হার যখন ঊর্ধ্বমুখী, তখন কেন রঘুনাথপুরের নতুনডি গ্রামের চিত্রটা এমন? উত্তর খুঁজতে গ্রামে গিয়েছেন প্রশসানের কর্তারা।

প্রশাসন সূত্রের খবর, ভোটের প্রতি নতুনডি গ্রামের মহিলাদের এমন অনাগ্রহ নতুন কিছু নয়। স্বাধীনতার পর থেকে হওয়া প্রতিটি নির্বাচনে এই গ্রামের প্রায় সকল মহিলাই ভোটদানে বিরত থেকেছেন। সামান্য হলেও ২০১৪ সালে ভোটে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই গ্রামের চিত্রটা ছিল একটু ভিন্ন। সেবার ৪২ জন মহিলা ভোটারকে বুথের বাইরে লাইনে দেখা গিয়েছিল। তারপর ফের পূর্বাবস্থায় ফিরে গিয়েছে নতুনডি। মহিলাদের ভোটে অংশগ্রহণ না করাটাই যেন এখানে ‘প্রথা’, জানাচ্ছেন প্রশাসনের এক আধিকারিক। এবার সেই প্রথা ভাঙতে তৎপর নির্বাচন কমিশন।

গ্রামের মহিলারা কেন ভোটদানে অনিচ্ছুক তার উত্তর খুঁজে পায়নি প্রশাসন। ভোটদানে বিরত থাকার জন্য মহিলাদের উদ্দেশে কোনও দল বা ব্যক্তি ফতোয়া জারি করে এমন কোনও খবর বা অভিযোগ প্রশাসনের কাছে কোনওদিনই আসেনি।

প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, মহিলাদের ভোটদানে অনাগ্রহের কথা জেনে ২০১৪ সালে তৎকালীন বিডিও উৎপল ঘোষ কয়েকটি পদক্ষেপ করেছিলেন। জনপ্রতিনিধি এবং মসজিদের ইমাম-সহ গ্রামের অনেকের সঙ্গে ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা করেছিল প্রশাসন। সেবার কিছুটা হলেও ফল মিলেছিল। লোকসভা ভোটে ৪২ জন মহিলা ভোট দিয়েছিলেন সেবার। তারপর রাজ্যে দু’টো নির্বাচন হয়েছে। দু’টি নির্বাচনেই ভোট দিয়েছেন গ্রামের মাত্র তিন জন মহিলা। এক জন গ্রামের ডাকঘরের পোস্টমাস্টার লুতফুন্নেসা বেগম। অন্য দু’জন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য গহরা বিবি এবং সহরা বিবি।

গ্রামের মহিলা ভোটারদের বুথমুখি করতে ইতিমধ্যেই তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক আকাঙ্খা ভাস্কর। বিডিও রঘুনাথপুর (২) মৃন্ময় মণ্ডল ওই বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন গ্রামের মসজিদের ইমামের সঙ্গে। রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে গ্রামের মহিলাদের ভোট-উৎসবে টেনে আনার চেষ্টা করছে। মঙ্গলবার বিকালে বিডিও এবং মহকুমাশাসক গ্রামের মহিলা ভোটার এবং স্থানীয় হাই মাদ্রাসার উঁচু ক্লাসের ছাত্রীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে তাঁদের ভোটদানে উৎসাহিত করার চেষ্টা করেছেন। পুরুলিয়ার একটি নাট্যগোষ্ঠীকে দিয়ে গ্রামে পথ নাটিকার মাধ্যমে মহিলা ভোটারদের কাছে ভোটদানের আবেদন জানানো হচ্ছে। প্রশাসনের বিশ্বাস, পাড়া বিধানসভার অন্তর্গত এই গ্রামের ছবিটা এবার বদলাবে।

কেন ভোট দিতে যান না? প্রশ্নের উত্তরে নামপ্রকাশে অনিচ্ছেক কয়েক জন মহিলা বলেন, ‘‘ভোট দিতে এমনিতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু গতবার ভোট দেওয়ার পরে গ্রামের অনেক মহিলারাই আমাদের পুকুরঘাটে, রাস্তায় টিপ্পনি কেটেছিল।” নতুনডি গ্রামের তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য গোলাম মোস্তাফা বলেন, ‘‘দীর্ঘ কয়েকদশক ধরে চলে আসা একটা প্রথার বদল ঘটানো খুব একটা সহজ নয়।’’ একই মন্তব্য গ্রামের তৃণমূল নেতা তাহির হোসেনের। তাদের কথায়, ‘‘একজনের চেষ্টায় প্রথা ভাঙবেনা। প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগের।” শাসকদলের দুই নেতা ‘সম্মিলিত উদ্যোগের’ কথা বললেও, তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, তাঁরা নিজেদের পরিবারের মহিলাদেরও ভোট দিতে নিয়ে যান না। কেন? উত্তর এড়িয়ে ওই দুই যুব নেতা জানিয়েছেন, এ বার তাঁরা পরিবারের মহিলাদের নিয়ে বুথে যাবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 women voter voter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE