শূন্য: রোগী খালি করে দরজায় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে তালা। জানলা থেকে তোলা সুনসান অন্তর্বিভাগ। মঙ্গলবার। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো
ডেঙ্গি নির্মূল করার লক্ষে শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও শুরু করেছে বিশেষ অভিযান। স্বাস্থ্য দফতর ও জেলা প্রশাসনের নজরদারিতে এই অভিযানের মধ্যেই বাঁকুড়া জেলায় এ বার আট জন ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিলল। যদিও তা গত কয়েক বছরের তুলনায় কম বলে দাবি করছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। তবে, অনেকের মতে, এ বার বৃষ্টি সে ভাবে না হওয়ায় জল জমেনি। তাই ডেঙ্গির মশাও কম। সেটাই ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের অন্যতম কারণ।
জেলাশাসক বলেন, “গত এক বছর ধরে বিভিন্ন স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদেরও ডেঙ্গি নিয়ে সচেতন করার কাজ শুরু করেছি। পাশাপাশি প্রশাসনিক নজরদারিও চলছে সমানতালে। ডেঙ্গি নির্মূল করতে স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে আমরাও সমানতালে কাজ করছি। জমা জলে ডেঙ্গির মশা বংশবিস্তার করে। এ বার বৃষ্টি কম হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা হলেও ডেঙ্গি মোকাবিলার কাজে কিছুটা সুবিধা হয়েছে।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের গত জানুয়ারি থেকে ২৩ জুলাই (মঙ্গলবার) পর্যন্ত বাঁকুড়া জেলার ওন্দা ও ছাতনা ব্লকে তিন জন করে মোট ছ’জন এবং বাঁকুড়া ১ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও বাঁকুড়া মেডিক্যালে এক জন করে মোট দু’জন ডেঙ্গি আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে।
স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, গত বছরের তুলনায় জেলায় এ বার ডেঙ্গির প্রকোপ কিছুটা কম। গত বছর জানুয়ারি থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত জেলায় মোট ১২ জন ডেঙ্গি রোগী চিহ্নিত হয়েছিলেন। যাঁদের মধ্যে ওন্দা থেকেই মিলেছিল পাঁচ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ। এ ছাড়া দু’জন বাঁকুড়া পুরসভার এবং গঙ্গাজলঘাটি, তালড্যাংরা, সিমলাপাল, রানিবাঁধ এবং খাতড়া ব্লক থেকে এক জন করে ডেঙ্গি রোগী চিহ্নিত হয়েছিলেন।
ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা কমার জন্য শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্তকেই কারণ হিসেবে তুলে ধরছেন জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা। বাঁকুড়ার ডেপুটি সিএমওএইচ (২) নিলয় চক্রবর্তী জানান, এ বছর থেকে স্বাস্থ্যভবনের নির্দেশে শহরাঞ্চলের পাশাপাশি জেলার গ্রামাঞ্চলেও ডেঙ্গি রোধে অভিযান চালানো হচ্ছে রুটিন মাফিক। প্রত্যেকটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ভিলেজ রিসোর্স পার্সনরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জল জমার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন। আবার পঞ্চায়েতের ভেক্টর কন্ট্রোল টিমও গ্রামীণ এলাকাগুলিতে কোথাও জল জমছে কি না তা নিয়মিত পরিদর্শন করছে। একই ভাবে অভিযান চলছে পুরসভাতেও। অভিযানের রিপোর্ট স্বাস্থ্য দফতরের একটি বিশেষ পোর্টালে আপলোড করা হচ্ছে পুরসভা ও গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে। সেই রিপোর্টগুলির উপরে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকদের পাশাপাশি বিডিও-রাও নিয়মিত নজর রাখছেন।
গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন জলাশয়ে ডেঙ্গির জন্য দায়ী এডিস ইজিপ্টাই মশার লার্ভা ধ্বংস করার জন্য তেলাপিয়া ও গাপ্পি মাছ ছাড়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর। জেলার বেশ কিছু জলাশয়েই এই ধরনের মাছ ছাড়া হয়েছে। এতে ওই লার্ভা ধ্বংস হচ্ছে বলে মত আধিকারিকদের।
বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস বলেন, ‘‘যে সব এলাকায় ডেঙ্গি হচ্ছে সেই এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিডিও এবং মহকুমাশাসকদের সঙ্গে ডেঙ্গি বা মশাবাহিত অন্য রোগ রোধে প্রশাসনিক বৈঠকও হচ্ছে নিয়মিত।’’
বাঁকুড়া পুরশহরেও গত কয়েক বছর ধরেই ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। এই এলাকাতেও স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সচেতন করে বাড়ি বাড়ি পরিদর্শনের কাজে লাগানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত।
ঘটনা হল, কেবল বর্ষাতেই নয়, গত কয়েক বছর ধরে সারা বছরই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলছে। তাই জুলাই মাসের শেষ ভাগে এসে ডেঙ্গি প্রতিরোধে কিছুটা সাফল্য মিললেও এখানেই সন্তুষ্ট হচ্ছেন না স্বাস্থ্যকর্তারা। নিলয়বাবু বলেন, “বছরের বাকি সময়েও ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে রাখাটাই এখন আমাদের মূল লক্ষ্য।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy