Advertisement
১০ মে ২০২৪

নলকূপ বেহাল, সমস্যায় রায়পুর

গ্রামে হাতে গোনা কয়েকটি নলকূপ রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র একটিতে জল ওঠে। অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রের কলটিও খারাপ। প্রাথমিক স্কুলের কলটিতে জল উঠলেও তা ব্যবহারের অযোগ্য। গরম পড়তেই জল সমস্যা দেখা দিয়েছে সাঁইথিয়ার দেড়িয়াপুর পঞ্চায়েতের গ্রাম রায়হাটে। গ্রামবাসিদের দাবি, এ ব্যাপারে স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে ব্লক প্রশাসন— সব স্তরে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। অথচ তাঁদের এই গ্রাম একেবারে ময়ূরাক্ষী নদী লাগোয়া। তাতেও এত জল সঙ্কট।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৫ ০০:৪২
Share: Save:

গ্রামে হাতে গোনা কয়েকটি নলকূপ রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র একটিতে জল ওঠে। অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রের কলটিও খারাপ। প্রাথমিক স্কুলের কলটিতে জল উঠলেও তা ব্যবহারের অযোগ্য। গরম পড়তেই জল সমস্যা দেখা দিয়েছে সাঁইথিয়ার দেড়িয়াপুর পঞ্চায়েতের গ্রাম রায়হাটে। গ্রামবাসিদের দাবি, এ ব্যাপারে স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে ব্লক প্রশাসন— সব স্তরে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। অথচ তাঁদের এই গ্রাম একেবারে ময়ূরাক্ষী নদী লাগোয়া। তাতেও এত জল সঙ্কট।

গ্রামটিতে ২৫০ মতো আদিবাসী পরিবারের বাস। প্রায় সকলেই কৃষিজীবী। গ্রামবাসীরা জানান, আগে একটি মাত্র নলকূপ ছিল। এখন তা বেড়ে চারটি হয়েছে। গ্রামবাসী রজনী মুর্মু, পানসুরি মাড্ডি, গণেশ মুর্মু, দিলীপ টুডু, ভজ হেমব্রমদের ক্ষোভ, ‘‘নদীর পাড়ে গ্রাম হওয়ায় অনেকের ধারণা রায়হাট গ্রামে জলের কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু বাস্তবটা অন্য। অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারের নলকূপ দীর্ঘদিন থেকে খারাপ হয়ে পড়ে আছে। প্রাথমিক স্কুলের নলকূপে যদিওবা জল ওঠে তা প্রথম থেকেই ব্যবহারের অযোগ্য। জল সমস্যা দূর করতে গ্রামের দু-এক জন বাড়িতে নলকূপ বসিয়েছিলেন। কিন্তু গরম পড়তে ওই সব বাড়ির কলেও আর জল ওঠে না।’’

এলাকার জল সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন পঞ্চায়েত সমতির সদস্য ডাবলু টুডু। তিনি বলেন, ‘‘এই এলাকার জল সমস্যা চরম আকার ধারণ করেছে। নদীর পাড়ের গ্রাম হলেও এখানকার জলস্তর ভাল না। তারপর কৃষিকাজের জন্য এলাকায় প্রচুর সাবমার্সিবল রয়েছে। ফলে জলস্তর আরও নেমে যাওয়ায় সাধারণ কলে জল ওঠে না। জল সমস্যা নিয়ে গ্রামের মানুষজন সেই বাম আমল থেকে অভিযোগ জানিয়ে আসছেন। তৃণমূল পঞ্চায়েত সমিতিতে ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় লোকজনের দীর্ঘদিন দাবি মেনে গত তিন বছরে এলাকায় দু’টি নলকূপ বসিয়েছে। কিন্তু গরমের সময় জলস্তর নেমে যাওয়ার কারণে ওই কল দু’টির মধ্যে একটিতে জল উঠছে। বর্তমানে ওই একটি কলই গ্রামের লোকের ভরসা।’’ তাঁর আশঙ্কা, ‘‘যদি কোনও কারণে ওই কলটি খারাপ হয়ে যায় তা হলে, বাসিন্দাদের দুর্ভোগের শেষ থাকবে না। গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের কলটির জল প্রথম থেকেই ব্যবহারের অযোগ্য এবং অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারের কলটিতেও দীর্ঘদিন থেকে জল ওঠে না বলে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন। আমিও যতদূর জানি, প্রাথমিক স্কুলের কলের জল খারাপ ও অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারের কলটিও দীর্ঘদিন থেকে খারাপ।’’ সব জায়গায় জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি— গ্রামবাসীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘একেবারে লাভ হয়নি বলা যাবে না। আগের দু’টি কলে ঠিকমতো জল না ওঠায় গত দু’তিন বছরে গ্রামে আরও দু’টি কল বসানো হয়েছে। দুর্ভাগ্য বশত ওই কল দু’টির মধ্যে বর্তমানে একটিতে জল ওঠে। জল সমস্যা সমাধানের জন্য পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও বিডিও’র সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারের দিদিমনি অর্চনা সাহা বলেন, ‘‘সেন্টারের কলটি দীর্ঘদিন থেকে খারাপ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’’ ওই গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক নিমাই ঘোষ জানান, বছর চারেক আগে স্কুলে একটি কল বসানো হয়। ওই কলের জল প্রথম থেকেই খারাপ হওয়ায় বছর দু’য়েক আগে আর একটি কল বসানো হয়েছিল। কিন্তু গরম পড়তেই তাতেও জল ওঠে না। ফলে মিড-ডে মিল রান্না থেকে খাওয়া বা ব্যবহার সব ব্যাপারেই জল নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। বিডিও অতনু ঝুড়ি বলেন, ‘‘ওই গ্রামের জল সমস্যার কথা শুনেছি। আগামী সোমবার সেখানে গিয়ে সরেজমিন খতিয়ে দেখব। তার পরে দ্রুত সমস্যা মেটানোর ব্যবস্থা করব।’’

একই সমস্যা দেড়িয়াপুর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত রায়হাট গ্রাম লাগোয়া সাউলডিহি গ্রামের ধীবরপাড়াতেও। ওই গ্রামের বাসিন্দ উত্তম ধীবর, তামাল ধীবররা বলেন, ‘‘আমাদের পাড়ায় তিনটি কল। দীর্ঘদিন থেকে তিনটি কলই খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। পঞ্চায়েত থেকে ব্লক সর্বস্তরে বলেও কোনও লাভ হয়নি। এই গরমে জলের কী সমস্যা তা আমরাই জানি। অনেক দূর থেকে জল আনতে হয়। অন্য পাড়া বা অন্য গ্রাম অথবা নদী থেকে। যদি প্রশাসন ব্যবস্থা না নেয় তা হলে আন্দোলনের পথে যেতে বাধ্য হব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE