Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Lockdown

নিভৃতবাসে ‘বন্দি’ হোটেলেরই ঘরে, অভিযোগ রোগীর পরিবারের

গত ৯ মার্চ বেঙ্গালুরুতে চিকিৎসা করাতে যান মুরারই থানার রাজগ্রামের বাসিন্দা, বছর পঞ্চান্নর নিভা বসু।

হোটেলের ঘরে। নিজস্ব চিত্র

হোটেলের ঘরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মুরারই শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২০ ০৪:১৬
Share: Save:

নিজের এলাকায় ফিরেও বাড়ি যাওয়া হয়নি তাঁদের। ভিন্ রাজ্যে চিকিৎসা করিয়ে ফেরা ওই পরিবারের ছ’জনকে নিভৃতবাসের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল একটি হোটেলে। সেই হোটেলেরই একটি ঘরে তাঁদের ‘আটকে রেখে’ বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল। শুক্রবার মুরারইয়ের ভাদীশ্বরে একটি হোটেলের ঘটনা। হোটেলের তরফে দাবি করা হয়েছে, করোনা সংক্রমণের ভয়েই তারা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। যদিও লকডাউনে এত দিন ধরে বাইরে আটকে থেকে দুর্ভোগে পড়া একটি পরিবারের সঙ্গে এমন আচরণে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

গত ৯ মার্চ বেঙ্গালুরুতে চিকিৎসা করাতে যান মুরারই থানার রাজগ্রামের বাসিন্দা, বছর পঞ্চান্নর নিভা বসু। সঙ্গে গিয়েছিলেন তাঁর স্বামী, ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী এবং ভাইয়ের দুই ছেলে। ২৩ তারিখ বাড়ি ফেরার ট্রেন ছিল। কিন্তু, লকডাউনের ফলে তাঁরা বেঙ্গালুরুতেই আটকে পড়েন। পাক্কা দুই মাস পরে স্পেশাল ট্রেনে বৃহস্পতিবার রামপুরহাট স্টেশনে নামেন। নিভাদেবীর ভাই রতন চন্দ্র দে বলেন, ‘‘প্রশাসন আমাদের এই হোটেলের ঘরে নিভৃতবাসে থাকতে বলে। কিন্তু ঘরে ঢোকার পরে আমাদের বাচ্চা সমেত ছ’জনকে বাইরে থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। আমার দিদি স্নায়ুরোগে আক্রান্ত। চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে রোজ দুই বেলা হাঁটতে ও ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’’

রতনবাবুর অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত তাঁদের ঘরের মধ্যে রেখে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাচ্চাদেরও ঘরের বাইরে যেতে দেওয়া হয়নি। সকাল থেকে টিফিন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি ফোনে রাজগ্রামে তাঁর বন্ধু বাচ্চু দাসকে ফোন করে সমস্ত ঘটনা জানান। সেই বন্ধু এসে বাইরে থেকে তাঁদের জন্য টিফিনের ব্যবস্থা করেন। তার পরে ব্লক প্রশাসনকে ঘটনা জানান। খবর পেয়ে ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিক সঙ্গে পুলিশ নিয়ে সেখানে যান। দুপুরের দিকে নিভাদেবীদের জন্য দু’টি ঘর খুলে দেওয়া হয়। তাতে কিছুটা হাঁফ ছেড়েছেন ওই ছ’জন।

কেন দরজা বন্ধ রাখলেন?

হোটেলের ম্যানেজার সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘‘ভিন্ রাজ্য থেকে এসেছে এই পরিবার। আমাদের হোটেলে উঠেছে। তাঁদের কোনও স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়নি। যদি তাঁদের কারও মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে থাকে, তা হলে আমাদেরও সংক্রমিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তাই আমরা দরজা বন্ধ করে রেখেছি।’’ তবে সময় মতো ঘরে টিফিন ও খাবার দেওয়া হচ্ছে বলে ম্যানেজারের দাবি।

রতনবাবু বলেন, ‘‘আমরা মধ্যবিত্ত। দুই মাসে ধরে লকডাউনে বেঙ্গালুরুতে আটকে থাকায় সঞ্চয়ের সমস্ত টাকা শেষ হয়ে গিয়েছে। তবে আমাদের নিজের এলাকায় এসে আমাদের এই ভাবে ঘরে বন্ধ করে রাখা হবে, এটা কোনও দিন ভাবিনি! বাচ্চাদের একাট ছোট ঘরে থেকে দমবন্ধের মতো অবস্থা। প্রশাসনের কাছে আমাদের অনুরোধ, আমাদের নিজের বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে সেখানেই নিভৃতবাসে রাখা হোক।’’

বিডিও (মুরারই ১) নিশীথভাস্কর পাল জানান, ভাদীশ্বরের ওই হোটেলটিকে নিভৃতবাসের জন্যই নেওয়া হয়েছে। আপাতত হোটেল কর্মীদের পিপিই কিট দিয়ে দরজা বন্ধ না করার জন্য বলা হয়েছে।
ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই ছ’জনেরই লালারসের নমুনা নেওয়া হয়েছে এ দিন। সেই রিপোর্ট নেগেটিভ এলে তাঁদের বাড়িতে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE