Advertisement
E-Paper

বড়রা সব যুদ্ধ করছেন, চলো আমরা কবরে লুকাই!

তোমার চেষ্টাটা ভালই ছিল। কিন্তু তোমার ছোট ভাইটা একটু গড়বড় করে ফেলল। তাই তোমাকে নিয়ে এখন জোর হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল আমাকে নিয়ে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৬ ০০:৩১
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

প্রিয় আলি,

তোমার চেষ্টাটা ভালই ছিল। কিন্তু তোমার ছোট ভাইটা একটু গড়বড় করে ফেলল। তাই তোমাকে নিয়ে এখন জোর হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল আমাকে নিয়ে।

কী সাংঘাতিক বিড়ম্বনা বল তো! আমাদের মৃতদেহগুলো এই ভাবে বার বার সর্বসমক্ষে চলে আসা কি উচিত? বড়রা এত গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করছেন। কত দিন ধরে তাঁরা পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলেছেন! এই রকম একটা কাজের মধ্যে কি আমাদের মতো ছোটদের ব্যাঘাত ঘটানো উচিত? এতে বড়রা বিব্রত হন। তাঁদের কাজে বাধা পড়ে।

কারা যেন আমাদের মৃতদেহ দেখলেই বা আমাদের শরীর থেকে রক্ত ঝরতে দেখলেই ছবি-টবি তুলে একেবারে রাষ্ট্র করে দেয়। শুনেছি আমাদের ওই ছবিগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। পৃথিবীর অনেক মানুষ সে সব দেখেন। আর তার পরে খুব নাকি হইচই জুড়ে দেন। আমাদের দেশে বড়রা যে কাজে ব্যস্ত, সেই কাজটার নাকি খুব নিন্দা করতে থাকেন। আর বড়রা খুব অস্বস্তিতে পড়ে যান।

আমরাই কিন্তু বার বার বড়দের জন্য এই অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠছি। আমরা সিরিয়া ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতেই পারি। আর যদি নিজের জায়গাটা ছেড়ে যেতে ইচ্ছা না করে, তা হলে চুপিচুপি গিয়ে কবরে লুকিয়ে পড়তে পারি। নিজেরাই যদি কবরে লুকিয়ে পড়ি, তা হলে কেউ ছবিও তুলতে পারে না, আর এত হইচইও হয় না।

আমি তো বাবা, মা আর দাদার সঙ্গে সিরিয়া ছেড়ে পালিয়েই যাচ্ছিলাম। কিন্তু কপাল খারাপ। মাঝ সমুদ্রে নৌকা উল্টে গেল। আমরা সবাই জলে পড়ে গেলাম। মা আর দাদা কিন্তু বেশ চুপচাপ ডুবে গেল। আমার দেহটাই খামোখা ভেসে ভেসে তুরস্কের ঘাটে গিয়ে ঠেকল। আর যাই কোথায়! ছবি-টবি তুলে একেবারে রাষ্ট্র করে দিল!

তুমি কিন্তু খুব চুপিচুপিই কাজটা সেরে ফেলেছিলে আলি। আলেপ্পোয় তোমাদের বাড়ির উপর যখন রুশ যুদ্ধবিমান থেকে বোমা পড়ল, তুমি তখন ধ্বংসস্তূপের তলায় খুব সুন্দর লুকিয়ে পড়েছিলে। তোমার ভাই ওমরানটা লুকাতে পারল না। রক্তে ভিজিয়ে ফেলল গোটা শরীর। ছবি তুলছিল যে লোকটা, তার চোখকেও ফাঁকি দিতে পারল না। গোটা দুনিয়া দেখে ফেলল ওকে। আবার সেই নিন্দা-মন্দ শুরু হয়ে গেল। সবাই বড়দের গাল দিতে শুরু করল। তোমার শরীর আরও বেশি ভিজে গিয়েছিল রক্তে। কিন্তু তুমি অসাধারণ দক্ষতায় ক্যামেরাকে ফাঁকি দিয়েছিলে। তাই তোমার ছবি কেউ দেখতে পায়নি। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হল না। ওমরানকে তত ক্ষণে তো সবাই চিনে গিয়েছে। সেই ওমরানের দাদা তুমি। তুমি কবরের দিকে যাচ্ছ। সে খবর কি আর গোপন থাকতে পারে? অতএব আবার হইচই শুরু হয়ে গেল!

এই ভাবে বার বার বড়দের বিড়ম্বনায় ফেলা কি উচিত হচ্ছে আলি? কত গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করছেন ওঁরা! আমরা বার বার ওঁদের লজ্জায় ফেললে কী করে চলে? প্রথমে আমি, তার পর ওমরান, শেষে তুমি! এর পর আরও কত জন যে এই ভাবে বড়দের অস্বস্তি বাড়াবে জানি না। তাই চলো এ বার একটা শপথ করি। কিছুতেই আর বড়দের বিরক্ত করব না আমরা। কিছুতেই তাঁদের অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠব না। গুরুত্বপূর্ণ কাজের মাঝে তাঁদের আর বিব্রত করব না। সবাইকে খবর পাঠিয়ে দাও আলি। যত দ্রুত সম্ভব নিজেদেরই গিয়ে কবরে লুকিয়ে পড়তে হবে। খুব চুপচাপ। কেউ যেন দেখতে না পায়। কেউ যেন ছবি তুলতে না পারে।

ইতি

আলান কুর্দি।

syria ali news letter anjan bandopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy