Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

দ্বিপাক্ষিক

নয়া নাগরিকত্ব আইনে ভারতের প্রতিবেশী তিনটি দেশের ধর্মীয় অত্যাচারের শিকার সংখ্যালঘুদের ভারতের নাগরিকত্ব দিবার লক্ষ্যে অগ্রসর হইয়াছে বিজেপি সরকার।

নরেন্দ্র মোদী ও শেখ হাসিনা। ফাইল চিত্র

নরেন্দ্র মোদী ও শেখ হাসিনা। ফাইল চিত্র

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের ভারতবর্ষ সকল প্রতিবেশীকে না ভালবাসিলেও বাংলাদেশের সহিত তাহার কূটনৈতিক সম্পর্কটি ভাল, বলিতেই হইবে। তাহার কারণ, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ভারতের সহিত হার্দিক সম্পর্ক রক্ষায় রীতিমতো যত্নবান ও সচেষ্ট। মতান্তরের, এমনকি মনান্তরের, বিষয়ের যে অভাব ছিল, তাহা নহে। নদীর জলবণ্টন, সীমান্তে উত্তেজনা, অনুপ্রবেশ, ব্যবসাবাণিজ্যের চুক্তিশর্ত লইয়া অসন্তোষ ছিল, আজও আছে। দিল্লির প্রতি ঢাকার বন্ধুতা ও বিশ্বস্ততার আতিশয্য সমালোচিত হইয়াছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে, দেশ বিকাইয়া দিবার অভিযোগও শেখ হাসিনাকে শুনিতে হইয়াছে বিস্তর। এতৎসত্ত্বেও ভারতের সহিত বাংলাদেশের সম্পর্কে শৈত্য আসে নাই। কিন্তু এ বার ভারতে নাগরিক পঞ্জি এবং নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের কারণে সেই সম্পর্কে এখন ঘনাইয়া আসিয়াছে আশঙ্কার মেঘ।

নয়া নাগরিকত্ব আইনে ভারতের প্রতিবেশী তিনটি দেশের ধর্মীয় অত্যাচারের শিকার সংখ্যালঘুদের ভারতের নাগরিকত্ব দিবার লক্ষ্যে অগ্রসর হইয়াছে বিজেপি সরকার। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে একই বন্ধনীতে ভারত জড়াইয়া দিয়াছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের পক্ষে ইহা ঘোর অস্বস্তির কারণ। অন্য দুইটি দেশে ধর্মীয় সন্ত্রাসের পরিস্থিতি নিয়া সমগ্র বিশ্ব অবগত ও উদ্বিগ্ন, কিন্তু শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ধর্মীয় সংখ্যালঘু নাগরিকের অধিকাররক্ষায় এ যাবৎ ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়ার সবিশেষ প্রশংসাই কুড়াইয়া আসিয়াছে। সেই বাংলাদেশের অ-মুসলমান কোনও সংখ্যালঘু মানুষ ভারতে আশ্রয় চাহিলে ভারত তাহা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করিবে, এই আপাত-উদার নির্ঘোষের পশ্চাতে বিদ্যমান আজিকার বাংলাদেশকে ধর্মীয় নিপীড়ক বলিয়া দাগাইয়া দিবার প্রবণতা। সংসদে অমিত শাহ যতই বাংলাদেশের বর্তমান শাসকের প্রশংসা করিয়া পূর্বের ক্ষমতাসীন দল বিএনপি-র দিকে যাবতীয় অভিযোগের অভিমুখ ঘুরাইয়া দেন না কেন, ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক কি আহত ও ব্যাহত হইল না? নাগরিকত্ব আইনে মুসলমানদের প্রকারান্তরে স্বীকার না করা বাংলাদেশের জনসাধারণ কোন চক্ষে দেখিবেন, বলা বাহুল্য। বিজেপির ভারতীয় হিন্দুত্বের বিপরীতে বাংলাদেশও যদি সমরূপ ধর্মভিত্তিক অবস্থান লয়, দুই দেশের পক্ষেই তাহা চরম অস্বস্তিকর ও বিপজ্জনক। তাহা প্রভাব ফেলিবে প্রতিবেশী দেশের অর্থনীতি, সমাজ, পরিবেশের উপরেও।

ভারতের এই প্রস্তাবিত আইনটি নাগরিকত্ব অর্জনের ক্ষেত্রে জাতি-ধর্ম তথা পরিচিতিভিত্তিক রাজনীতির একটি পূর্বমীমাংসা হইয়া দাঁড়াইবে, সেই আশঙ্কাও প্রকট। মনে রাখিতে হইবে, ভারত ও বাংলাদেশ, দুই রাষ্ট্রেই শাসক দল ক্ষমতায় আসিয়াছে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায়। কোনও শাসক দল যদি সেই বিপুল জনসমর্থনকে নিজ সুবিধার্থে কাজে লাগাইয়া, সংবিধানের তোয়াক্কা না করিয়া, ধর্মকে তুরুপের তাস বানাইয়া রাজনীতি করে, তাহা হইতে কুশিক্ষা লইতে পারে অপরাপর রাজনৈতিক দলও। তাহা গণতন্ত্রের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করে, অপশাসন ও স্বৈরতন্ত্রের পথ প্রশস্ত করিয়া রাখে। ১৯৭১ হইতে ভারত-বাংলাদেশের কূটনৈতিক যাত্রাপথে যতগুলি সম্মানফলক ছিল, ঘটমান বর্তমান তাহাদের ধূলিমলিন করিল কি না, ভারতের তাহা ভাবা প্রয়োজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE