Advertisement
E-Paper

গোত্র নয়, বিয়ের আগে হোক রক্ত-বিচার

থ্যালাসেমিয়া, বর্ণান্ধতা, সিকল সেল অ্যানিমিয়া, এরিথ্রোব্লাস্টোসিস ফেটালিসের মতো রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিয়ের আগে পাত্র ও পাত্রীর রক্তপরীক্ষা জরুরি। কিন্তু বাস্তবে বড় অংশের এ নিয়ে অনীহা রয়েছে। লিখছেন উৎপল অধিকারী সময় পাল্টেছে। কিন্তু আজও বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে আমরা সেই পুরনো সংস্কারই আঁকড়ে রয়েছি। এমনই একটি ক্ষেত্রে হল বিয়ের সময়। বিভিন্ন পত্রিকায় পাত্র বা পাত্রী চাই কলামে চোখে রাখলে দেখা যায়, পাত্রী বা পাত্রীর কুল, গোত্র ইত্যাদি উল্লেখ রয়েছে। একই সঙ্গে গুরুত্ব পায় কোষ্ঠীবিচারও।

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৯ ০০:০০

সময় পাল্টেছে। কিন্তু আজও বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে আমরা সেই পুরনো সংস্কারই আঁকড়ে রয়েছি। এমনই একটি ক্ষেত্রে হল বিয়ের সময়। বিভিন্ন পত্রিকায় পাত্র বা পাত্রী চাই কলামে চোখে রাখলে দেখা যায়, পাত্রী বা পাত্রীর কুল, গোত্র ইত্যাদি উল্লেখ রয়েছে। একই সঙ্গে গুরুত্ব পায় কোষ্ঠীবিচারও। কিন্তু একটি বিচার করলে সত্যই ভবিষ্যত জীবন এবং পরের প্রজন্ম আশঙ্কা মুক্ত থাকতে পারে। তা হল, রক্ত-বিচার। বিজ্ঞান বলছে, থ্যালাসেমিয়া, বর্ণান্ধতা, সিকল সেল অ্যানিমিয়া, এরিথ্রোব্লাস্টোসিস ফেটালিসের মতো রোগ এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়। এই রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্যই বিয়ের আগে পাত্র ও পাত্রীর রক্তপরীক্ষা জরুরি। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখি, একটা বড় অংশের এ নিয়ে তীব্র অনীহা রয়েছে।

রক্তবাহিত অসুখগুলির মধ্যে সবার আগে বলতে হয় থ্যালাসেমিয়ার কথা। বিজ্ঞানীদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ের জটিলতম রোগগুলির মধ্যে অন্যতম থ্যালাসেমিয়া। মানুষের দেহে স্বাভাবিক নিয়মে যে পরিমাণ লোহিত রক্তকণিকা তৈরি হয় সেই পরিমাণ লোহিত রক্তকণিকার মৃত্যুও হয়। কিন্তু যখন এই কণিকা উৎপাদনের থেকে ধ্বংসের পরিমাণ বাড়ে তখনই বিপত্তি বাঁধে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা এবং লোহিত রক্তকণিকার মাত্রার তারতম্যের কারণে দেখা দেয়, অ্যানিমিয়া ও থ্যালাসেমিয়ার মতো মারণ রোগ। বিশেষজ্ঞেরা জানান, থ্যালাসেমিয়া জিনবাহিত রোগ। আক্রান্ত ব্যক্তিরা মা-বাবার কাছ থেকেই রোগটি পান। মা-বাবার রক্তপরীক্ষা হলেই তা ধরা পড়ে যেত।

থ্যালাসেমিয়ার মতোই আর একটি জিনবাহিত অসুখ সিকল সেল অ্যানিমিয়া। বিজ্ঞানীরা জানান, এই রোগটিও জিনবাহিত। এই রোগে মানুষের রক্ত কণিকার গঠন ঠিকমতো হয় না। তার ফলে রোগীর রক্তে অক্সিজেন বহন ক্ষমতা কমে যায়। আক্রান্ত ব্যক্তির অ্যানিমিয়া, শারীরিক দুর্বলতা, দেহের নানা অংশে যন্ত্রণা হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এই অসুখে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর রক্ত দিতে হয়। অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন বা প্রতি মাসে রক্ত দিয়ে রোগীকে সুস্থ রাখা হয়। বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসকদের একাংশ মনে করেন, পিতা মাতার মধ্যে এই রোগের কারণ প্রচ্ছন্ন অবস্থায় থাকলে সন্তানের ক্ষেত্রে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ বেড়ে যায়। আগে থেকে রক্তপরীক্ষার মধ্যে দিয়ে এই রোগের আশঙ্কাকে নির্মূল করা সম্ভব।

রক্তবাহিত অসুখের তালিকার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম এরিথ্রোব্লাস্টোসিস ফেটালিস। সাধারণভাবে আমাদের রক্তকে ‘আর এইচ’ (R.H) ফ্যাক্টরের নিরিখে ‘পজিটিভ’ ও ‘নেগেটিভ’— এই দু’ভাগে ভাগ করা হয়। বিজ্ঞানীরা জানান, নারী গর্ভবতী হওয়ার পরে যদি তাঁর সন্তানের রক্তের গ্রুপ মায়ের বিপরীত হয় অর্থাৎ মায়ের রক্তের গ্রুপ পজিটিভ ও সন্তানের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হলে বা সন্তানের রক্তের গ্রুপ পজিটিভ এবং মায়ের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হলে সন্তানের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সন্তানের মা বাবার রক্তের গ্রুপ বিপরীত হলেও এই সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময়েই দেখা যায় এই রোগে আক্রান্ত সন্তান জন্মের পরে মারা যায় বা বেঁচে থাকলেও ছোট থেকেই তার মধ্যে নানা রকমের জটিলতা তৈরি হয়। বিয়ের

আগে রক্তপরীক্ষা করালেই এর আশঙ্কা দূর হয়।

সব শেষে বলতে হয় এডসের কথা। রোগটি এইচআইভি ভাইরাসের কারণে হয়। বাবা বা মায়ের মধ্যে কেউ যদি এইচআইভিতে আক্রান্ত হন তা হলে, সন্তানের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই রোগ আছে কি না তা জানার একমাত্র উপায় হল রক্তপরীক্ষা।

উপরের রোগগুলি ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি রোগ রয়েছে যা বংশ পরম্পরায় সঞ্চারিত হয়। এই সব রোগ থেকে মুক্তির উপায় সময় মতো রক্তপরীক্ষা। তবে সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, আমাদের দেশের অনেকেই এই সব রোগের কারণ বা তা বংশানুক্রমিক জানা সত্ত্বেও রক্তপরীক্ষায় অনীহা প্রকাশ করেন। কারণ, তাঁদের আশঙ্কা থাকে রোগ ধরা পড়লে সামাজিক ভাবে ক্ষতি হবে। আবার অনেকেই এই রোগগুলি সম্পর্কে সচেতনই নন। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সবার আগে জনমানসে সচেতনতার প্রচার করতে হবে। রোগ ধরা পড়া মানেই যে জীবন শেষ হয়ে যাওয়া নয়, সেই কথাটা সবাইকে আগে বোঝানোটা খুব জরুরি। আজকের উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যার যুগে অধিকাংশ রোগই সময়মতো চিকিৎসার মাধ্যমে সারানো সম্ভব। কিন্তু এক বার বিয়ে হয়ে গেলে এবং নতুন প্রজন্ম জন্মগ্রহণ করলে তার উপরে যদি এই রোগের মারণ প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ে তা হলে তাদের রক্ষা করাটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাই ভবিষ্যতের সুরক্ষার কারণে আগামী দিনের বাবা, মাকেও সচেতন হতে হবে। বিয়ের আগের রক্তপরীক্ষার মাধ্যমে আমরা এই বিপদ এড়াতে পারি। তাই বিয়েতে গোত্র বা কোষ্ঠী বিচার নয়, চাই রক্ত-বিচার। তবে এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।

আঝাপুর হাইস্কুলের শিক্ষক

Health Medical Blood Test
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy