Advertisement
E-Paper

অপ্রিয় সত্য

ভোট-প্রচারের শুরুতেই প্রয়াগরাজ হইতে বারাণসী সফর করিলেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। সফরের বিবরণ কিঞ্চিৎ বিস্ময়ের উদ্রেক করিতে পারে। বিশেষত প্রচারে নামিয়াই যত মন্দির তিনি ঘুরিলেন, তাহাকে স্বাভাবিক বলিয়া ধরিয়া লওয়া কঠিন।

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৯ ০০:০০
প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। -ফাইল ছবি।

প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। -ফাইল ছবি।

ভোট-প্রচারের শুরুতেই প্রয়াগরাজ হইতে বারাণসী সফর করিলেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। সফরের বিবরণ কিঞ্চিৎ বিস্ময়ের উদ্রেক করিতে পারে। বিশেষত প্রচারে নামিয়াই যত মন্দির তিনি ঘুরিলেন, তাহাকে স্বাভাবিক বলিয়া ধরিয়া লওয়া কঠিন। প্রচারের বিষয়বস্তু যাহাই হউক, অনেক সময় প্রচারের প্রকারেও ভোটার সমাজকে বার্তা দিবার জায়গা থাকে। সেই অবকাশটি কি কাজে লাগাইলেন গাঁধী পরিবারের নূতনতম নেত্রী? মনে হয় না। দুর্ভাগ্য বলিতে হইবে যে, বিজেপি প্রচারের ধরনের সহিত কংগ্রেস প্রচারের ধরনটি আবারও এত কাছাকাছি আসিয়া গেল। এই বারের নির্বাচনী ঋতুর নূতন মুখ প্রিয়ঙ্কা, প্রভূত আকর্ষণ তাঁহাকে ঘিরিয়া। জনতা ভিড় করিয়া তাঁহাকে দেখিতে আসিতেছে। এমনকি বিজেপি সমর্থকরাও নাকি তাঁহার দর্শনের লোভ ছাড়িতে পারিতেছেন না। কিন্তু মনে না রাখিয়া উপায় নাই যে, এই আকর্ষণ প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর পারিবারিক অর্জন। তাঁহার নিজের অর্জনের এখনও পর্যন্ত যেটুকু অবকাশ ঘটিয়াছে, সেই সুযোগটিকে তিনি যথেষ্ট সুব্যবহার করিতে পারেন নাই। এখনও পর্যন্ত তিনি ভারতীয় রাজনীতির সর্বাপেক্ষা প্রত্যাশিত পথটি ধরিয়াই হাঁটিয়াছেন— ‘ধর্মের পথ’। অথচ এমনকি প্রয়াগরাজ হইতে বারাণসী এই পথ জুড়িয়াও কিছু জরুরি প্রচার করিবার ছিল, মোদী বা যোগীর সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের শাসনের দুর্বলতাগুলি চোখে আঙুল দিয়া দেখাইবার সুযোগ ছিল। গঙ্গাবক্ষে ভ্রমণের সূত্রে গঙ্গাদূষণের বিষয়টিকে সরাসরি তুলিয়া আনার সুযোগ ছিল। সেই সকল সুযোগের সদ্ব্যবহার হইল কি?

কথাটি জরুরি। এমনিতেই প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর সূত্রে বিজেপি সরকার কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্রকে আরও এক বার আক্রমণের লক্ষ্য বানাইতেছে। এমনকি সমাজবাদী পার্টির সন্নিহিত বলয়গুলি হইতেও নূতন নেত্রীর সমালোচনা ভাসিয়া আসিয়াছে। অস্বাভাবিক নয়। যে পরিবারতন্ত্র লইয়া এত বিরুদ্ধতা, ভোটের মুখে যদি আবার সেই পরিবার-ক্যারিশমারই আশ্রয় লইতে হয় কংগ্রেসকে, নানা প্রত্যাশিত ও অপ্রত্যাশিত দিক হইতে আক্রমণ আসিবারই কথা। কেবল পরিবারপ্রিয়তা নহে, সমস্ত পরিস্থিতির মধ্যে ঐতিহ্যসর্বস্ব সামন্ততান্ত্রিক সংস্কৃতির ছাপটিও অভ্রান্ত। প্রিয়ঙ্কাকে দ্রুত প্রমাণ করিতে হইবে যে দুই হাজার উনিশের জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাঁহার নূতন কিছু বলিবার আছে, নূতন কোনও মাত্রা যোগ করিবার আছে। নতুবা রাহুল গাঁধীর পাশে দাঁড়াইয়া তিনি ভ্রাতার উপকার অপেক্ষা অপকারই করিবেন। কংগ্রেসকেও প্রমাণ করিতে হইবে, জোট বাঁধিবার রাজনীতিতে মন না দিয়া দল কেন আবার পরিবারমোহে ফিরিতেছে। একমাত্র যদি প্রিয়ঙ্কার আবির্ভাব মোদী-বিরোধিতায় বড় মাপের ঢেউ উঠাইতে পারে, তবেই সকল সমালোচনা অসার প্রতিপন্ন হইবে।

সমালোচনার জায়গাটি আরও জমিয়া উঠিয়াছে, কংগ্রেসের দিক হইতে জোটবন্ধনের বহুবিজ্ঞাপিত কৌশল শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ায়। উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টি পরস্পরের হাত ধরিলেও কংগ্রেসের হাতটি একাকীই রহিল— এত দিনে পরিষ্কার। পশ্চিমবঙ্গেও সিপিএম-এর সঙ্গে জোট সম্ভব হয় নাই। অসম গণ পরিষদ আবার পূর্বের মিত্র বিজেপির নিকট প্রত্যাবর্তন করিয়াছে। নূতন কথা নহে, জোট-রাজনীতিতে কংগ্রেসের দক্ষতার অভাবটি জানা বিষয়। ইহাও তর্কাতীত যে, আঞ্চলিক দলগুলির সহিত কংগ্রেসের হাত মিলাইতে না পারিবার একটি কারণ, এই দলটির ডিএনএ-স্থিত বনেদিয়ানার প্রদর্শন, এবং তাহার ফলে অপর পক্ষের প্রতিক্রিয়া। অথচ জোট রাজনীতি ক্রমশই অপরিহার্য হইয়া উঠিতেছে। নূতন যুগের সঙ্গে তাল মিলাইয়া জোট-কৌশল দ্রুত না শিখিতে পারিলে সেই অভাব কোনও জাদুচরিত্রই পূরণ করিতে পারিবেন না।

Priyanka Gandhi Congress প্রিয়ঙ্কা গাঁধী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy