অভিনব বিক্ষোভের ছবি: এনি।
রাজনৈতিক নেতাদের ‘সং’ বলিলে সঙেদের অপমান হয়: এমনই বলিয়াছেন ব্রিটেনের এক পেশাদার সং। তাঁহার ক্ষোভের উদ্রেক করিয়াছে ব্রিটেনের একটি দৈনিক। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন হইতে ব্রিটেনের নিষ্ক্রমণ বা ‘ব্রেক্সিট’ লইয়া সেই দেশের নেতাদের নিতান্ত ল্যাজেগোবরে দশা। শাসক দল নিষ্ক্রমণের নীতি খুঁজিতে গিয়া ক্রমাগত জট পাকাইয়া ফেলিতেছে। কিন্তু বিরোধীরাই কি যথাযথ সমালোচনা করিতেছেন? সেই প্রশ্ন তুলিয়া একটি সুপরিচিত দৈনিকের শিরোনামে বিরোধী নেতাদের ‘ব্রেক্সিট ক্লাউন’ অভিহিত করা হইয়াছে। নানা সংবাদ বা নিবন্ধে ব্রেক্সিট লইয়া দিশাহীন শোরগোলকে ‘সার্কাস’-ও বলা হইয়াছে। পেশাদার ‘ক্লাউন’ বা সঙেদের এক প্রবীণ মুখপাত্র তাহার প্রতিবাদে পত্র লিখিয়াছেন ওই দৈনিকে। তাঁহার বক্তব্য, সার্কাস আদৌ বিশৃঙ্খল কোনও ব্যাপার নহে। সেখানে সকলে পরস্পরের সহিত সমন্বয় করিয়া বহু বিচিত্র কাজ সমাধা করেন। কেবল খেলা প্রদর্শন নহে, সার্কাসের সকল সদস্যদের বৃহৎ তাঁবু খুলিয়া, আসন তুলিয়া ফের অন্যত্র যাত্রা করিতে হয়। দলবদ্ধ ভাবে কাজ না করিলে সার্কাস চলিতেই পারে না। অতএব রাজনীতিতে, বিশেষত ব্রেক্সিট পর্বে নেতাদের মধ্যে সংযোগ ও বোঝাপড়ার অভাবকে কখনওই সার্কাসের সহিত তুলনা করা চলে না। তাহাতে সার্কাস সম্পর্কে মানুষের মনে ভ্রান্ত ধারণা জন্মাইতে বাধ্য। সার্কাস ক্লাউন বা সঙেরা প্রশিক্ষিত শিল্পী, তাঁহাদের অত্যন্ত দক্ষ এবং নিপুণ হইতে হয়। অকর্মণ্য বিশৃঙ্খল নেতাদের সহিত তাঁহাদের তুলনা কেন?
একাত্তরবর্ষীয় প্রবীণ সার্কাসশিল্পীর এই আপত্তিকে অনেকেই সমর্থন জানাইয়াছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিষয়টি এই দেশেও প্রাসঙ্গিক। সংসদকে ‘সার্কাস’ বলিলে সংসদের অবমাননা হইবে না কি সার্কাসের, তাহা চিন্তার প্রয়োজন। সার্কাসের সঙেরা যে কৌতুক করেন, তাহা মোটা দাগের তামাশা হউক অথবা উচ্চমানের, পরিশীলিত শিল্প হউক, নির্মল আনন্দদানই তাহার উদ্দেশ্য। সংসদে নেতাদের উন্মত্ত শোরগোল এবং হস্তপদচালনা দেখিলে এক প্রকার কৌতুক উদ্রেক হয় বটে, কিন্তু তাহা বিকৃত আমোদ। সং তাহার বিশেষ সাজসজ্জা দিয়ে পূর্বেই বুঝাইয়া দেয়, সে অপর কাহারও মতো নয়, তাহাকে বিচারের মানদণ্ড ভিন্ন। নেতারা কিন্তু ভেক না ধরিয়াই নানা অসংযত, এমনকী হিংস্র আচরণ করেন।
পার্থক্যটি আসলে আরও মৌলিক। সার্কাসে ট্রাপিজের খেলা দেখিয়া এক সুরসিক বাঙালি লিখিয়াছিলেন, ‘মামা ধরিয়া এই কাজ হইবে না।’ বস্তুত প্রায় যে কোনও পেশার সহিত রাজনীতির পার্থক্য এইখানে। অস্ত্রোপচার হইতে শৌচাগার নির্মাণ, সকল পেশা কোনও না কোনও দক্ষতা দাবি করে। পেশায় প্রবেশ কাহারও সহায়তায় হইতেও পারে, কিন্তু প্রতিষ্ঠিত হইতে চাহিলে কঠিন ও জটিল কাজ সম্পন্ন করিতেই হইবে। তাহার যোগ্যতা অর্জন না করিলে উঠিবার রাস্তার কোনও এক সময়ে, ট্রাপিজের দড়ি ফসকাইবার মতো, নীচে আছড়াইয়া পড়িতে হইবে। রাজনীতি ব্যতিক্রম। সেখানে কেবল ভাগ্নে-ভাইপো, কন্যা-পুত্রবধূ হইবার সুবাদে যে কেহ সাংসদ হইতে পারেন। এমনকী প্রধানমন্ত্রী হইতেও বাধা নাই। কিন্তু সং হইতে পারেন না। নেতারা সং হইবার যোগ্যতা অর্জন করিতে পারিলে দেশের উন্নতি হইত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy