Advertisement
E-Paper

পরধর্ম ভয়াবহ

স্বধর্মের কথাই জানাইয়াছেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ। বলিয়াছেন, মঠ একটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান।

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০৯
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রেসিডেন্ট স্বামী স্মরণানন্দের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রধানমন্ত্রী। মোদীর ডান দিকে মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ এবং মঠের ম্যানেজার স্বামী গিরিশানন্দ। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র

রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রেসিডেন্ট স্বামী স্মরণানন্দের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রধানমন্ত্রী। মোদীর ডান দিকে মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ এবং মঠের ম্যানেজার স্বামী গিরিশানন্দ। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র

স্বধর্মের কথাই জানাইয়াছেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ। বলিয়াছেন, মঠ একটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান— জাগতিক বিষয়ে তাঁহাদের কোনও বক্তব্য থাকিতে পারে না। কথাটি সত্য। ভারতীয় সমাজ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনকে এই পরিচিতিতেই চেনে। দেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁহাদের অতিথি হইতে চাহিলে তাঁহাকে সসম্মান স্বাগত জানানোই বিধেয়। প্রধানমন্ত্রী তাঁহার বক্তৃতায় কী বলিবেন, তাহার দায়ও মিশনের উপর বর্তায় না। বস্তুত, স্বামী সুবীরানন্দ যে ভঙ্গিতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সহিত নিজেদের দূরত্ব স্পষ্ট করিয়া দিয়াছেন, তাহাও প্রতিষ্ঠানটির অরাজনৈতিক সত্তার সহিত সঙ্গতিপূর্ণ। কিন্তু প্রশ্ন সেইখানেই। তিনি বা তাঁহারা স্বধর্মে স্থিত থাকিলেন না কেন? নরেন্দ্র মোদী দেশের অন্যতম সেরা প্রধানমন্ত্রী— মঠের তরফে এই স্বীকৃতি কি তাঁহাদের অরাজনৈতিকতার ধর্মের পরিপন্থী নহে? নরেন্দ্র মোদী ভাল না খারাপ, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজিতে হইলে অরাজনৈতিক থাকা সম্ভব হয় না। প্রধানমন্ত্রী আধ্যাত্মিক নহেন, ঘোরতর রাজনৈতিক দুনিয়ার মানুষ। মঠের মঞ্চে দাঁড়াইয়া তিনি যে বক্তৃতা করিয়াছেন, তাহাও আদ্যোপান্ত রাজনৈতিক। অতএব, তাঁহাকে ‘সেরা’র শিরোপা দেওয়ার অর্থ কি কার্যত তাঁহার রাজনীতিকে নৈতিক সমর্থন জ্ঞাপনের শামিল নহে? তিনি যে ভঙ্গিতে বিভাজনের রাজনীতি করিতেছেন, দেশের সংবিধানের চরিত্র বদলাইয়া দিতেছেন, ‘সেরা প্রধানমন্ত্রী’র স্বীকৃতি কি তাহাকেই বৈধতা দিল না? একটি রাজনীতি-নিরপেক্ষ, বস্তুত রাজনীতি-বিযুক্ত প্রতিষ্ঠান কি সেই সমর্থন জানাইতে পারে? প্রধানমন্ত্রীর বিরোধিতা করা নিশ্চয়ই তাঁহাদের কাজ নহে। কিন্তু স্বধর্মের খাতিরেই প্রশস্তি হইতেও বিরত থাকিতে পারিতেন না কি?

শ্রীরামকৃষ্ণের ‘যত মত তত পথ’ বা স্বামী বিবেকানন্দের বলিষ্ঠ উদারবাদকে অস্বীকারের কোনও প্রশ্নই মঠের নাই। সারদামণির সেই অমর উক্তি— ‘আমি শরতেরও মা, আমজাদেরও মা’— তাহাও মঠের মজ্জায় মিশিয়া আছে। সেই আদর্শগুলির প্রতি অবিচলিত থাকাই মঠের নিকট জনসমাজের পরম প্রত্যাশা। আন্তরিক দাবিও। উল্লেখ্য, নরেন্দ্র মোদীর বেলুড়যাত্রার পূর্বে রামকৃষ্ণ মিশনের বহু প্রাক্তনী মঠ কর্তৃপক্ষের নিকট নিজেদের আপত্তি জানাইয়াছিলেন। সেই আপত্তির মূল কারণ কি ইহাই নহে যে শতাব্দী-অধিক কাল ধরিয়া মঠ যে উদারতায় স্থিত, তাহা হইতে বিচ্যুতির সম্ভাবনা তাঁহাদের বিচলিত করিয়াছিল? নিজের হিন্দুত্বের রাজনীতিকে বৈধতা দিতে নরেন্দ্র মোদী মঠের হিন্দুধর্মকে ব্যবহার করিতে চেষ্টা করিবেন, ইহা অপ্রত্যাশিত নহে। যে রাজনৈতিক হিন্দুত্বের গায়ে সংখ্যালঘুর রক্ত এবং সংখ্যাগুরুবাদের কলঙ্ক লাগিয়া আছে, যাহা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ উদার আদর্শকে প্রতিনিয়ত ছিন্নভিন্ন করিতেছে, তাহার হাতে ব্যবহৃত না হওয়ার জন্য অতিরিক্ত সতর্ক থাকাই বিধেয় ছিল। কেহ বলিতে পারেন, বহুজনমান্য প্রতিষ্ঠান হিসাবে মঠের কর্তব্য ছিল হিন্দুত্বের সহিত হিন্দুর্ধমের পার্থক্য স্পষ্ট করিয়া দেওয়া। প্রকাশ্যে জানাইয়া দেওয়া যে দেশের শাসকেরা যে উগ্রতার রাজনীতি করিতেছেন, তাহা শ্রীরামকৃষ্ণের, স্বামীজির হিন্দুধর্ম নহে। অরাজনৈতিকতার ধর্ম হয়তো মঠকে সেই কথা বলিতে দেয় নাই। কিন্তু, নরেন্দ্র মোদীকে দেশের অন্যতম সেরা প্রধানমন্ত্রী বলিয়া সুবীরানন্দজি সম্পূর্ণ বিপরীত এবং বিপজ্জনক একটি বার্তা দিলেন।

Ramakrishna Mission Belur Math Narendra Modi CAA Citizenship Amendment Act
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy