Advertisement
E-Paper

বিফল বন্দনা

বিরোধী নেতারা ইতিমধ্যেই মোদীর পদসেবার প্রতি নানা কটাক্ষ করিয়াছেন। কিন্তু মৌলিক কিছু কথা তাঁহারাও উল্লেখ করেন নাই, কারণ সে বিষয়গুলিতে তাঁহাদেরও কর্তব্য রহিয়াছে।

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:১৬

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজহস্তে দলিত সাফাইকর্মীদের পা ধুইয়া দিয়াছেন। মানুষের মর্যাদার অধিক মহার্ঘ কিছুই নাই, বিত্ত-ধর্ম-জাতি-লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল মানুষই পদসেবা পাইবার যোগ্য। ইলাহাবাদের কুম্ভমেলা হইতে সেই আলোকময় বার্তাই কি পাইল দেশবাসী? না, কারণ মোদীর এই কাজের অভ্যন্তরে সত্যের দ্যুতি নাই। তাহা উজ্জ্বল হইয়াছে ভিডিয়ো ক্যামেরার ফ্ল্যাশের আলোকে, ক্ষণিকের জন্য। সম্মান শুধু প্রদর্শনের বস্তু নহে, তাহা করিবার বিষয়। প্রধানমন্ত্রী যদি বাস্তবিকই দলিত সাফাইকর্মীদের শ্রদ্ধা করিতেন, তবে তাঁহাদের প্রতি কর্তব্য করিতেন। এক ঘৃণিত, লজ্জিত জীবন হইতে সাম্য ও মর্যাদায় মুক্তি দিবার উদ্দেশ্যে কাজ করিতেন। কিন্তু তাহার কিছুই তিনি করেন নাই। বরং তাঁহার কার্যকালে দূষিত শৌচনালা পরিষ্কার করিতে গিয়া সাফাইকর্মীদের মৃত্যু ঘটিয়াছে বারবার। কেবল সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনার হিসাব বলিতেছে, প্রতি পাঁচ দিনে এক জন সাফাইকর্মী প্রাণ হারাইতেছেন ভারতে। প্রকৃত সংখ্যাটি আরও অধিক হইবে। যাঁহারা বাঁচিয়া আছেন, তাঁহাদের জীবনের মান কেমন, কল্পনা করিতে অসুবিধা হইবার কথা নয়। অথচ ভারতের প্রধানমন্ত্রী সাফাইকর্মীদের ‘কর্মযোগী’ বলিয়া অভিহিত করিলেন। ইহার অর্থ কী? ইলাহাবাদ পুরসভায় নিযুক্ত ওই কর্মীরা দলিত, ‘বাল্মীকি’ জাতিভুক্ত। অনেকে বংশানুক্রমে সাফাইকর্মীর কাজ করিয়া আসিতেছেন। শিক্ষা, সম্পদ, সম্মানে বঞ্চিতদের জন্য মলবহনের কাজটি নির্দিষ্ট করিয়াছে সমাজ।

কর্মফলের প্রত্যাশা না করিয়া যিনি কাজ করেন, তিনি কর্মযোগী। ভারতের দরিদ্রতম মানুষ উন্নত জীবনের সন্ধান না করিয়া স্বেচ্ছায় শৌচনিকাশি সাফাই করিতেছেন, ইহাই কি প্রধানমন্ত্রীর দাবি? অন্যের মলমূত্র এবং আবর্জনা বহিয়া যাঁহারা জীবিকা নির্বাহ করেন, এই পেশা তাঁহারা নির্বাচন করেন নাই। তাঁহারা নিরুপায়। তাই সাফাইকর্মীদের ‘যোগী’ বলিলে তাঁহাদের সম্মান করা হয় না, তাঁহাদের অসহায়তাকে বিদ্রুপ করা হয়। সন্দেহ হয়, এই আপাত-সম্মান বস্তুত প্রতারণাকে আড়াল করিতে চায়। ২০১৩ সালে মানুষের দ্বারা মলবহন নিষিদ্ধ করিয়া আইন করা হইয়াছে। সেই অনুসারে সকল মলবাহী কর্মীকে অপরাপর কাজে পুনর্বাসন দিবার কথা সরকারের। অথচ গত পাঁচ বৎসরে মলবাহী কর্মীর সংখ্যা ক্রমে বাড়িয়াছে। সরকারি গণনাতেই তাঁহাদের সংখ্যা পঞ্চাশ হাজার ছাড়াইয়াছে। তা সত্ত্বেও এই বৎসর বাজেটে তাঁহাদের পুনর্বাসনের বরাদ্দ সত্তর কোটি টাকা কমাইয়া ত্রিশ কোটি টাকায় নামাইয়াছে কেন্দ্র। এই অসম্মান ধুইয়া দিতেই কি আড়ম্বর করিয়া পদপ্রক্ষালন? পাঁচ জনের পা ধুইলে কি পঞ্চাশ হাজার মানুষের বঞ্চনা ধুইয়া যাইবে?

বিরোধী নেতারা ইতিমধ্যেই মোদীর পদসেবার প্রতি নানা কটাক্ষ করিয়াছেন। কিন্তু মৌলিক কিছু কথা তাঁহারাও উল্লেখ করেন নাই, কারণ সে বিষয়গুলিতে তাঁহাদেরও কর্তব্য রহিয়াছে। প্রথমত, কাজের অবকাশ থাকিলে কর্মীও জুটিবে। না হইলে আবশ্যক কাজ করিবে কে? ‘স্বচ্ছ ভারত’ প্রকল্পে সরকার অগণিত শৌচাগার গড়িতেছে, কিন্তু ভারতের প্রায় কোনও শহরে নিকাশিব্যবস্থা সম্পূর্ণ হয় নাই। সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করিতে মানুষের শ্রমই ভরসা। মলবাহী শ্রমিক কমাইবার উপায় নিকাশির উন্নতি। দ্বিতীয়ত, শ্রম আইনের ছিদ্রের সুযোগ লইয়া সাফাইকর্মীদের ঠিকাদারের মাধ্যমে নিয়োগ করা হইতেছে। এই কর্মীদের বৈধ নথিভুক্তি নাই বলিয়া নিরাপত্তা, ন্যূনতম বেতন, ক্ষতিপূরণ কিছুই নাই। বস্তুত সরকারের খাতায় অগণিত মলবাহী সাফাইকর্মী ‘নাই’ হইয়া রহিয়াছেন। এত বড় অসত্য আর কী হইতে পারে? অস্তিত্ব অস্বীকার করিবার চাইতে বড় অসম্মানই বা কী? আড়ালে বঞ্চনা করিয়া প্রকাশ্যে বন্দনা, এমন প্রতারণায় গা গুলাইয়া ওঠে।

Naredndra Modi Prayagraj Allahabad
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy